নোমান সাবিত: যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই কর্মীর মধ্যে বোতল ঢিল, চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়িসহ হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের একটি রেস্তোরাঁয় ২৫ মার্চের কালো রাত এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগ। সাধারণ সম্পাদকের বদলে হটাৎ করেই প্রচার সম্পাদক সভা পরিচালনা করতে গেলে একজন কর্মী তার প্রতিবাদ করেন। এ সময় প্রচার সম্পাদক মাইক্রোফোন মুখে নিয়েই তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করলে হট্টগোল দেখা দেয় এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে ঘটনাটি দু'জনের ব্যক্তিগত রেষারেষির ফল আওয়ামীলীগের নেতার মনে করছেন।
সোমবার স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। সাধারণ সম্পাদক ওঠা বসাতে একটু অসুস্থবোধ করলে এক পর্যায়ে সভাপতি মঞ্চে উপবিষ্ট আ.লীগ নেতা সোলায়মান আলীকে পরিচালনার নির্দেশ দেন। কিন্ত অপ্রত্যাশিতভাবে ভাবে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সভা পরিচালনা শুরু করেন প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম দুলাল মিয়া। তিনি বক্তব্য দেয়ার জন্য নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর রহমান মিয়াকে মঞ্চে ডাকেন।
দর্শকের সারিতে বসা যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি দরুদ মিয়া রনেল দাঁড়িয়ে মঞ্চে বসা সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আপনি সাধারণ সম্পাদক। আপনি অনুষ্ঠান পরিচালনা করার কথা কিন্তু আপনি অনুষ্ঠান পরিচালনা করছেন না। যে কারণে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই সময় হাজি এনাম দরুদ মিয়া রনেলের উদ্দেশ্যে বলেন, কথা কম, শ্যাট আপ, সিট ডাউন। এই নিয়ে দুই জনের মধ্যে শুরু হয় কথা কাটাকাটি, অশ্রাব্য গালিগালাজ এবং ধাক্কাধাক্কি। একজন আরেকজনকে বলতে শোনা যায়, শুকরের বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা, বান্দির পোয়া। সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের উপস্থিতিতেই এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে। তাদের ধাক্কাধাক্কিতে নবান্ন পার্টি হলের ফোডিয়াম ভেঙ্গে যায় বলে জানা গেছে। এক পর্যায়ে সবাই মিলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। আবারো সভা চলতে থাকে। অনুষ্ঠানস্থল থেকে হাজী এনাম চলে গেলে দরুদ মিয়া রনেলকে বক্তব্য দিতে ডাকা হয় এবং সভা শেষ হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, মুল ঘটনা হল সামাদ আজাদ এনামকে দিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে রনেল সেটা মেনে নিতে পারেনি। রোনাল বলছে সামাদকেই পরিচালনা করতে হবে। তারপর কথা কাটাকাটি গালাগালি, বোতল ঢিল ও চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনা ঘটে। তিনি উল্লেখ করেন, দু'জনই সিলেটের লোক এবং দু'জনই একই ধাঁচের বাজে মানুষ। তাদের মূল দাবি হলো আজই তাদেরকে পদ পদবি দিতে হবে। জোর করে হলেও তারা পদবি নিতে চায়। তাদের সেই যোগ্যতা আছে কিনা সে দিকে তাদের কোন লক্ষ্য নাই।

যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও তারা কিছু পত্রিকার অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশের নিন্দা জানিয়েছেন। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে আরও কত ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। তারা সে খবরগুলো কোন গুরুত্ব দিচ্ছেন না আর এটা একটি সামান্য ঘটনা। এটা নিয়ে তিলকে তাল করার কোন মানে হয়। সভা পরিচালনাকে কেন্দ্র করে এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও ঘটনায় জড়িত দুই কর্মীর মধ্যে ব্যক্তিগত রেষারেষি ও উভয়ের মধ্যে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ছিল বলে মনে করেন তিনি। তবে যা ঘটেছে দলীয় ভাবেই তার সমাধান করা হবে বলে উল্লেখ করেন সভাপতি সিদ্দিক।
যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি দরুদ মিয়া রনেল বলেন, সাধারন সম্পাদকের হাত থেকে থেকে জোর পুর্বক হাজী এনাম মাইক্রোফোন নিয়ে গেছেন। তিনি সব সময় এ ধরণের কাজ করেন। শুধু তাই নয় হাজী এনাম সভার নামে টাকা তুলে তা পকেটস্থ করেন। কারো কোন নির্দেশ তিনি মানেন না। রনেল প্রতিবাদ করেছিলেন কেনো সাধারন সম্পাদক থাকতে পরিচালনার জন্য আপনি মাইক্রোফোন নিয়ে গেলেন? সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান নির্দেশ দিয়েছিলেন সোলেমান ও সামাদ দুজনেই সভা পরিচালনা করবে। তারপরও এনাম জোর করে মাইক্রোফোন নিয়ে গেছেন।
নিউ ইয়র্কের বাইরের অঙ্গরাজ্যের একজন আ লীগ জানান হাজী এনাম সাধারন সম্পাদকের হাত থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে নিজেই অনুষ্টান পরিচানলা করছিলেন। তিনি নিজের পছন্দের লোকদের বক্তব্য দেওয়ার জন্য ডাকছেন। দরুদ মিয়া রনেল যখন দেখলো অনেকেই বাদ দিয়ে সে অনুষ্টান পরিচালনা করছে সে তখন প্রতিবাদ করলে হাজি এনাম তাকে মা বাপ নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং হাতে চেয়ার নিয়ে তাকে মারতে যায়। পুরো ঘটনা সভাপতি সিদ্দিকের সামনেই ঘটেছে। এমনিতেই সাভাপতি সিদ্দিক কর্মীশুন্য হয়ে পড়েছে তার উপর এই সমস্ত মারামারি গালাগালি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে। হাজি এনাম তার বেয়াদপি এবং অসাংগঠনিক কর্মকান্ড নিয়মিত করেই যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এ সময় মঞ্চে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শামসুদ্দিন আজাদ, ডা. মাসুদুল হাসান, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা সোলায়মান আলী, নিউ ইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল এবং নিউ ইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুর রহমান মিয়া।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য হাজী এনামের সাথে যোগাযোগ করা হয়, কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। পরে সাধারণ সম্পাদকর মাধ্যমে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোন যোগাযোগ করেননি।
বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]