
নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের নিজ বাড়িতে বাংলাদেশি দম্পতি খুনের ঘটনায় নিহত দম্পতির বড় ছেলে হাসিব বিন গোলাম রাব্বিকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। স্থানীয় সান্তা ক্লারা কাউন্টির হল অব জাস্টিসে দীর্ঘ এক মাস ধরে শুনানির পর গত ২৫ অক্টোবর তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
ক্যালিফোর্নিয়ার সান হোসে এলাকায় মা-বাবার সঙ্গে থাকতেন হাসিব। ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল নিজ বাড়িতে মা-বাবা দুজনকেই হত্যা করেন তিনি।হত্যার পরপরই তিনি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান। ওই বছরের ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় ট্র্যাসি এলাকা থেকে হাসিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।তারপর তাঁকে সান্তা ক্লারা কাউন্টি জেলে পাঠানো হয়।
ঘটনার দিন বিকেলে ও হাসিবের কয়েকজন বন্ধু তাদের সান হোসের ওই বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে তারা বাড়ির দরজা খোলা দেখতে পান। ঘরে ঢুকেই তাদের চোখে পড়ে তারা খুনের ভয়াবহ দৃশ্য। দুজনের রক্তাক্ত মৃতদেহ কাঠের মেঝেতে পড়ে ছিল। সে সময় নিহত দম্পতির ১৭ ও ২১ বছর বয়সী দুই ছেলে বাড়িতে ছিলেন না বলে জানায় তাদের বন্ধুরা। খুনের দুইদিন পর রাব্বি দম্পতির ১৭ বছর বয়সী ছোট ছেলের সন্ধান পায় পুলিশ। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার বড় ছেলে হাসিব রাব্বিকে (২১) ট্র্যাসি এলাকা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
পেশায় প্রকৌশলী গোলাম রাব্বি এবং হিসাবরক্ষক শামিমা সান হোসের এভারগ্রিন ইসলামিক সেন্টারের সদস্য ছিলেন বলে জানা গেছে। তাদেরব দেশের বাড়ি বগুড়া জেলায়।

তারা ১৯৭৬ সালের দিকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডে খ্যাতি অর্জনকারী ‘এমদাদ অ্যান্ড সিতারা খান ফাউন্ডেশনের’ চেয়ারপারসন সিতারা খানের ছোট ভাই গোলাম রাব্বি। নয় বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে গোলাম রাব্বি ছিলেন পঞ্চম। তার তিন বোন মারা গেছেন। চার বোন যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করেন। জীবিত একমাত্র ভাই রয়েছেন বাংলাদেশে। নিহত দম্পতির ঘরে একটি চিরকূটও পাওয়া যায় যাতে লেখা ছিল- ‘দুঃখিত, আমার প্রথম খুনটি ছিল বিরক্তিকর’।
এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তারা ওই বাড়ির দেওয়ালে লেখা আরেকটি বার্তা দেখতে পান। বার্তাটি এমন- তোমার মত আমি মিথ্যাবাদী হতে পারব না। আমি ওদের (মা-বাবা) অজ্ঞাতে অথবা সম্মতি ব্যতিত কাউকে ভালবাসতে পারব না।’
আদালতে হাসিব নিজেই নিজের পক্ষে আইনি লড়াই চালান। তিনি তাঁর ১৭ বছর বয়সী ছোট ভাই ওমরের ওপর মা-বাবাকে হত্যার দায় চাপানোর চেষ্টা করেন। অবশ্য, ২০১৬ সালে গ্রেপ্তারের পরপর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হাসিব জানিয়েছিলেন, এক অপরিচিত লোক তাদের বাড়িতে এসে তাঁকে তাঁর মা-বাবাকে হত্যা করতে বাধ্য করে।
হাসিব ও তাঁর ছোট ভাই ওমরকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ওমর জানায়, তার মা-বাবার মৃতদেহ দুটি রাখা হয়েছিল গ্যারেজে। সেখান থেকে কোনো রক্তের ধারা যেন বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করতে তার ভাই তাকে বলেছিল।
পরে বয়স বিবেচনায় ওমরকে সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরে প্রমাণের অভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নেওয়া হয়। সবকিছু বিবেচনা করে ওমরকে কিশোর সুরক্ষা সংস্থায় পাঠানো হয়।
যদিও আদালতে দেওয়া বক্তব্যে হাসিব তাঁর ভাই সম্পর্কে সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলেছেন। তাঁর ভাষ্যমতে, ওমর মানসিক বিকারগ্রস্ত ব্যক্তি, যে কিনা তাদের মা-বাবার মৃত্যুর জন্য দায়ী। হত্যাকাণ্ড ওমর ঘটালেও তাঁকে বাধ্য করেছে স্বীকারোক্তি দিতে।
তবে তদন্তে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য। পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, মানসিক সমস্যার ইতিহাস রয়েছে বরং হাসিবের। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলার পাশাপাশি তার সঙ্গে বিভিন্ন সমাজবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত ছিল বলে জানা যায়। শিকার তার খুবই প্রিয় এবং তার একটি বন্দুকও রয়েছে।
সান্তা ক্লারা কাউন্টির ডেপুটি ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি আলালেহ কিয়ানেরসি বলেন, ‘একটি অপরাধের যথাযথ বিচার হওয়ায় আমরা সবাই সন্তুষ্ট। কিন্তু সত্য হচ্ছে, এক দম্পতি মারা গেছে, তাদের এক সন্তান এতিম হয়েছে এবং অন্যজন হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। এখানে কেউই জিতল না।’
২৫ অক্টোবর দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণার সময় ২৪ বছর বয়সী হাসিবের মধ্যে কোনো ভাবাবেগ দেখা যায়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণপমাধ্যম। ১৬ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে সাজা ঘোষণা করবেন আদালত।রায়ে হাসিবের প্যারোল বিহীন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে ধারনা করা হচ্ছে।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]