১৪ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় আমেজে ঈদুল আজহা উদযাপিত

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৭ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রে দেশীয় আমেজে ঈদুল আজহা উদযাপিত
নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিরা আনন্দঘন পরিবেশ আর দেশীয় আমেজে আজ মঙ্গলবার উদযাপন করেছে ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা।সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে দেশটির বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি পরিচালিত মসজিদ, পার্কের মাঠে ও গির্জার মিনলায়তনে ঈদের জামাতে অংশ নেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। আবহাওয়া প্রতিকূল থাকায় অধিকাংশ স্থানেই খোলামাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।নামাজ শেষে গরু ছাগল কোরবানি দিতে অনেকেই ছুটে যান পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন ফার্মে। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বাংলাদেশিদের পরিচালনাধীন তিন শতাধিক মসজিদ বা তৎসংলগ্ন মাঠে ঈদ জামাতগুলো শুরু হয় সকাল ৮টা থেকে। এ ছাড়া অন্যান্য দেশের নাগরিকদের পরিচালনাধীন মসজিদেও পালা করে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল ১০টা পর্যন্ত। ঈদ জামাতের নিরাপত্তায় স্থানীয় প্রশাসন বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করে। নিউ ইয়র্কের বড় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে। সারা বিশ্বের মুসলমানরা হিজরি বর্ষের দ্বাদশ মাস জিলহজের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ উদযাপন করে থাকেন।যুক্তরাষ্ট্রে মঙ্গলবার এবং বাংলাদেশে এই ঈদ বুধবার। মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়েছে ঈদের আমেজ। গত ৯ দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় চাঁদ দেখতে পাওয়ায় আজ মঙ্গলবার ঈদের জামাতের ঘোষনা দেওয়া হয়। সকাল ৮টা থেকে ১০টার মধ্যেই নিউ ইয়র্ক, নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, ম্যাসাচুসেটস, কানেকটিকাট, ভার্জিনিয়া, মেরিল্যান্ড, মিশিগান, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, মিনেসোটা, অ্যারিজোনা, টেক্সাস এবং ওয়াশিংটন ডিসিসহ বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যগুলোতেও মঙ্গলবার ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক দিনে ঈদ পালন করা হয়েছে। তবে এখন সেই বিভেদ আর নেই বললেই চলে। নিউ ইয়র্কের প্রধান প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার, বাংলাদেশ মুসলিম সেন্টার, আল আমিন জামে মসজিদ, আল আমান জামে মসজিদ এবং বায়তুল জান্নাহ জামে মসজিদে। উল্লেখ্য, মানবমনে নৈতিকতা ও ত্যাগের মহিমাকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠার প্রবল প্রেরণা ও তাগিদে উদযাপিত হয় এ উৎসব। এই উদযাপনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আনুষ্ঠানিকতা। মহান আল্লাহতায়ালার আদেশে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর নিজ পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহর জন্য ত্যাগ তথা কোরবানি করার প্রস্তুতির কারণে সারা বিশ্বের মুসলমানরা আল্লাহর কাছে নিজেদের সোপর্দ করে দেওয়ার লক্ষ্যে পবিত্র হজের পরদিন ঈদুল আজহা উদ্যাপন ও পশু কোরবানি করে থাকে। কোরবানির মধ্য দিয়ে নিজের ভেতরের পশুত্বকে পরিহার করা এবং হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর মহান ত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ঈদের দিন সকালেই মুসল্লিরা ঈদগাহ বা মসজিদে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করবেন। নামাজের খুতবায় তুলে ধরা হবে কোরবানির তাৎপর্য। নামাজ শেষে অনেকেই যান কবরস্থানে স্বজনের কবর জিয়ারত করতে। আনন্দের দিনে অশ্রুসিক্ত হয়ে চিরকালের জন্য চলে যাওয়া স্বজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করেন। ঈদের দিন দেওয়া হয় কোরবানি। যদিও ঈদের দিন থেকে তিন দিন কোরবানি দেওয়া যায়। সামর্থ্যবানরা গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া প্রাণী দ্বারা কোরবানি আদায় করবেন। নিয়ম অনুসারে কোরবানি করা পশুর মাংসের তিন ভাগের এক ভাগ গরিব-মিসকিন ও পাড়া-প্রতিবেশী, এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে বিলিয়ে দিতে হয়। আবার পুরোটাই বিলিয়ে দেওয়া যায়। ইসলামের পরিভাষায় কোরবানি হলো—নির্দিষ্ট পশুকে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে তাঁরই নামে জবাই করা। মহান সৃষ্টিকর্তার দরবারে জবাই করা পশুর মাংস বা রক্ত কিছুই পৌঁছায় না, কেবল নিয়ত ছাড়া। আরবি ‘আজহা’ এবং ‘কোরবান’ উভয় শব্দের অর্থ হচ্ছে উৎসর্গ। কোরবানি শব্দের উৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে আত্মত্যাগ, আত্মোৎসর্গ, নিজেকে বিসর্জন। তাই ঈদুল আজহার অন্যতম শিক্ষা হচ্ছে মনের পশু অর্থাৎ কুপ্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করা। জাতীয় কবির ভাষায় ‘মনের পশুরে কর জবাই/পশুরাও বাঁচে, বাঁচে সবাই...’। এবার বাংলাদেশে ঈদুল আজহা এসেছে এমন এক সময়ে যখন বন্যা, পাহাড়ধসসহ বিপর্যস্ত হয়েছে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী। অভাবগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষাও দেয় ঈদুল আজহা। ‘ঈদুজ্জোহার চাঁদ হাসে ওই/এলো আবার দুসরা ঈদ!/কোরবানি দে, কোরবানি দে,/শোন খোদার ফরমান তাকিদ...’—জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই কাব্যসুর যেন বাজতে শুরু করেছে মুসলমানদের প্রাণে। বছর ঘুরে আবারও ফিরে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা।
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন