
নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: যুক্তরাষ্ট্র সফররত রাজশাহী সদর আসনের সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, বাংলাদেশি প্রবাসীরা যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে তাদের কর্মক্ষেত্র তৈরি করেছেন তা দেখে আমি সত্যিই আনন্দিত হয়েছি।স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে তারা শুধু নিজেদের জন্য চাকুরিই করছেন না, একই সাথে বাংলাদেশেরও প্রতিনিধিত্ব করছেন। এ বিষয়টি একটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন তিনি। স্থানীয় সময় গত রবিবার নিউ ইয়র্কসহ ৪ অঙ্গরাজ্যের প্রবাসীদের সাথে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় নিউ ইয়র্ক, পেনসিলভানিয়া, কানেকটিকাট ও ওয়াশিংটন ডিসির প্রবাসী বাংলাদেশীরা উপস্থিত ছিলেন।
ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, বাংলাদেশেকে একটি উন্নয়নশীল দেশে রুপান্তরিত করতে হলে আগে প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন করতে হবে।ঢাকা থেকে বিভিন্ন কল কারখানাসহ কিছু মন্ত্রণালয় সরিয়ে বিভাগীয় শহরে স্থানান্তর করা হলে ঢাকার যানজট যেমন কমবে তেমনি বিভাগীয় শহরগুলোরও গুরুত্ব বাড়বে।
সাংসদ বাদশা আরো বলেন, প্রত্যেক সরকারের আমলেই উত্তরবঙ্গ অবহেলার শিকার হয়েছ।সেইভাবে কোন গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর উত্তরবঙ্গের সঠিকভাবে উন্নয়ন করা হলে পুরো বাংলাদেশটার উন্নয়ন হবে। অবশ্যই সরকারকে এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশের সংবিধানে রয়েছে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য করা যাবে না। আমি সংসদে এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।

ওয়ার্কাস পার্টির এই নেতা উত্তরবঙ্গের অবদানের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যে ভাত খায়, তার অর্ধেকের বেশি ৬০ শতাংশ উত্তরবঙ্গ থেকেই বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। একইভাবে ঢাকা শহরে যারা তাজা মাছ খায়, তারও ৬০ শতাংশ মাছ উত্তরবঙ্গ থেকেই পাঠানো হয়ে থাকে। এমনকি আলুও সরবারহের ক্ষেত্রে উত্তরবঙ্গ এগিয়ে রয়েছে।
উত্তরবঙ্গের আম প্রসঙ্গে বলেন, ‘বলতে গেলে বাংলাদেশ প্রধান ফল হচ্ছে আম। সেটা সরবরাহ করে থাকে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ। তবে দুঃখের বিষয় আম সেভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। যদি এই এলাকায় একটি ‘ম্যাঙ্গো পার্ক’ করা যেত, তাহলে সেখান থেকে সারা বিশ্বের আম সরবরাহ করা সম্ভব হতো।
উত্তরবঙ্গের সাথে সড়ক ও রেল পথের সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর প্রথম ডিজাইনে রেল লাইনের পরিকল্পনা ছিল না। বর্তমানে চালু থাকা রেল লাইন আমরা এটা জোর করে বসিয়েছি। কিন্তু বর্তমানে একটা রেল লাইনও পর্যাপ্ত না। উত্তরবঙ্গ থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে তিন’শ থেকে চার’শ ট্রাক মাছ রাজধানী ঢাকায় যায়। আর অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে প্রায়ই যমুনা সেতুতে যানজট লেগে থাকায় এসব ট্রাক যথাসময়ে ঢাকায় পৌঁছাতে পারে না। ফলে প্রতিদিন অনেক টাকার মাছ নষ্ট হয়।
তিনি আরো বলেন, গত পার্লামেন্টে আমাদের একটা প্রস্তাব ছিল, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে পৃথক রেল লাইন করতে হবে। যা দিয়ে গোটা উত্তরবঙ্গের সাথে কনেকটিভিটি বাড়ানোর কথা। রেল কনেকটিভিটি যখন বাড়ানো হবে, তখন মালামাল এক্সপোর্ট করা সহজ হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, রেল লাইনের ডিজাইন করার জন্য গত পার্লামেন্টে ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। পার্লামেন্টে বাজেট অধিবেশন আসলে এবার যাতে ব্রিজের টাকা বরাদ্দ হয়, সে জন্য আমি চেষ্টা করবো।

উত্তরবঙ্গে দ্বিতীয় সেতু করার দাবি জানিয়ে বলেন, আমরা উত্তরবঙ্গে রোডের জন্য দুইটা সেতু দরকার। একটা বঙ্গবন্ধু সেতু আছে, আর দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু সেতু বাহাদুরাবাদ ঘাট দিয়ে করতে হবে। আমি মনে করি- যদি দুইটা ব্রিজ ও রেল হয়ে যায়। তাহলে উত্তরবঙ্গের সাথে ফল, ফলাদি, সবজি দ্রুত ঢাকায় পাঠানো সম্ভব হবে। এর ফলে উত্তরবঙ্গের লোকেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমি সারা বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলি। তবে সবচেয়ে বেশি উত্তরবঙ্গের কথাগুলো বলি। আমাদের বৈষম্যের কথাগুলো তুলে ধরি। আমরা কেন বঞ্ছিত হচ্ছি, কেন এই অঞ্চলকে গুরুত্ব কম দেওয়া হয়? এসব নিয়ে কথা বলি।
মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন থেকে ইঞ্জিনিয়ার আমিরুজ্জামান টুটুল (কানেকটিকাট), এজাজুল ইসলাম টাইম (পেনসিলভানিয়া), আহমেদ হোসেন রিটু, আলাউদ্দিন, দাস্তানুল ইসলাম, তারেক জামিল রচি, ফজলুল হক, আলি, মনিরুজ্জামান টিটু, নাদিম, সাদিম, লাবলু, তারেক, আবু বকর সিদ্দিক সাজু (ওয়াশিংটন ডিসি) ও রাজিব (নিউ ইয়র্ক) প্রমুখ।
বিপি/সিএস
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]