১৪ অক্টোবর ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন বাংলাদেশি ‘মুসলমান’

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮ পিএম
যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন বাংলাদেশি ‘মুসলমান’
নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: যুক্তরাষ্ট্রের কলারাডো অঙ্গরাজ্যে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে ‘মুসলমান’ বলে দোকান ভাড়া না দেওয়ায় পৌনে সাত লাখ ডলার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন মার্কিন নাগরিক। গত ২০১৭ সালে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী জুনেদ আহমেদ খাঁন ডেনভার শহরে তার দ্বিতীয় রেস্টুরেন্ট খোলার জন্য একজন মার্কিন নাগরিকের দোকান ভাড়ার জন্য প্রাথমিক চুক্তিবদ্ধ হন।বাড়ির মালিক তার ভাড়াটিয়াকে মুসলমানের কাছে ভাড়া দিতে নিষেধ করেছিলেন৷ পরে দোকান মালিক তাকে ভাড়া দিতে অস্বীকার করেন। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হলে জমির মালিক বর্ণবাদী আচরণ করায় জুনেদ আহমেদ খাঁন ও তার ছেলের সঙ্গে আপস নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হন। ৬ লাখ ৭৫ হাজার ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা) দিয়ে রাজি হন তিনি। জানা যায়, ডেনভারে ২০১৬ সালে একটি বাড়ি ভাড়া নেন ক্রেইগ ক্যাল্ডওয়েল। সেখানে তিনি একটি ফ্রাইড চিকেনের রেস্টুরেন্ট খোলেন। ২০১৭ সালের শেষ দিকে এসে সেটি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন ক্যাল্ডওয়েল। কিন্তু বাড়ির মালিকের সাথে চুক্তি অনুযায়ী তাঁকে হয় নতুন ভাড়াটিয়া খুঁজে দিতে হবে, নয়তো ৫ বছর ভাড়া পরিশোধ করে যেতে হবে। ক্যাল্ডওয়েল তাই নামেন ভাড়াটিয়ার সন্ধানে। পেয়ে যান তাঁরা সেখানে বাংলা ও ভারতীয় খাবারের খোলার জন্য আগ্রহী হন৷ কিন্তু সমস্যা বাঁধলো ক্যাল্ডওয়েল যখন বাড়ির মালিক ক্যাটিনা গ্যাচিসকে তাঁদের পরিচয় দিলেন৷ মুসলিম শোনার পর তিনি ভাড়ার চুক্তিতে অনুমোদন দেয়ার বিষয়ে আর কোনো আগ্রহ দেখালেন না৷৭১ বছর বয়সি ক্যাল্ডওয়েল বলেন, ‘বিষয়টি আমি কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না৷ আমাকে কেউ বিশ্বাস করবে, সেটাও মনে হচ্ছিল না৷’ এক সপ্তাহ পর ক্যাল্ডওয়েল আবারও গেলেন তাঁর বাড়ির মালিকের কাছে৷ এবার তিনি কথোপকথন রেকর্ড করেন মোবাইলের অ্যাপ ব্যবহার করে৷ ক্যাটিনা এ সময় তাঁকে বলেন, ‘আমি অ্যামেরিকান চাই, যে তোমার আর আমার মতো ভাল৷’ ক্যাল্ডওয়েল পরে আবার তার সাথে দেখা করতে গেলে তিনি বলেন, ‘তারা মধ্যপ্রাচ্য থেকে সব মুসলিম ধরে নিয়ে আসছে এখানে। আর সেকারণে আমি নানা সমস্যায় পড়ছি।’ পরবর্তীতে নিজের আইনজীবীর পরামর্শে বিষয়টি নিয়ে আদালতে যান ক্যাল্ডওয়েল। সেখানে ক্যাটিনা গ্যাচিসও তার এই কথোপকথনের কথা স্বীকার করেন। গ্যাচিসের কথায় অবশ্য খুব একটা আশ্চর্য হননি রাশাদের বাবা। কিন্তু নাম শুনেই তাঁর গোটা জীবনকে পরিমাপ করে ফেলার বিষয়টিকে হালকাভাবে নিতে পারেননি রাশাদ। তিনি বলেন, ‘আমার ভীষণ রাগ হয়েছিল। মর্মাহত হয়েছিলাম। ব্যাপারটি নিয়ে আমার নিজের মধ্যেই সন্দেহ তৈরি হয়। আরো কেউ কি এভাবে চিন্তা করে, নাকি শুধু এই নারী? আদালতে বিষয়টি গড়ানোর পর স্থানীয় গণমাধ্যমেও এই খবর আসে। ঐ বাড়ির মালিকের ব্যবসা প্রত্যাখ্যানের হিড়িক ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। গত এপ্রিলে আদালতে দুই পক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছায়। সে অনুযায়ী বাড়ির মালিককে তার আচরণের জন্য ৬,৭৫,০০০ ডলার দিতে হবে বাদীদেরকে। যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা। এক বছর মামলা চলার পর এটিকে বড় ধরনের স্বস্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন রাশাদ। বলেন, ‘আমি আর আমার বাবা শুধু দেখতে চেয়েছিলাম যে, বিচার বলে কিছু আছে, যার কারণে এই নারী এমনটি করতে পারেন না।’ উল্লেখ্য, সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার দাড়িপাতন গ্রামের জুনেদ আহমেদ খাঁন প্রায় ৩৫ বছর আগে আমেরিকায় আসেন। অ্যাভিয়েশনে স্নাতক করার পর কলোরাডোতে আমেরিকান এয়ারফোর্স ডিভিশনের অধীনে চাকরি শুরু করেন। কয়েক বছর চাকরির পর স্বাধীনচেতা জুনেদ খাঁন কলোরাডোতে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর ব্যবসায় সাফল্য আসতে থাকে। নিজের পারদর্শিতায় একে একে ১৭টি ‘কারি অ্যান্ড কাবাব রেস্টুরেন্ট’–এর শাখা বিস্তৃত করতে সক্ষম হন। ১৭টি রেস্তোরাঁ পরিচালনায় এক সময় হাঁপিয়ে উঠেন তিনি। কারিগর বা কর্মী সমস্যার ভোগান্তিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল তাঁকে। এক পর্যায়টি রেস্তোরাঁ বিক্রি করে দেন। কয়েক বছর ধরে ছেলে রাসাদ খাঁনকে দিয়ে আবার রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেন। অ্যারিজোনা কলোরাডোতে ‘কারি অ্যান্ড কাবাব’ বিখ্যাত ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁ হিসেবে খ্যাতি পায়। এদিকে, ১১ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তার ছেলে রাশাদ খাঁন৷ বাবার সাথে ব্যবসায় নামার আগে কলোরাডো বোল্ডার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্য প্রযুক্তিতে ডিগ্রি অর্জন করেন৷ বিপি/সিএস
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন