নোমান সাবিত: যুক্তরাষ্ট্রে ছোট শিশুদের নিয়ে আসা অভিবাসী পরিবারদের আটকের ব্যবস্থা পুনরায় শুরু করার পরিকল্পনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন। বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসী শিশু ও কিশোরদের গ্রেফতারের সংখ্যা বাড়াতে পারে বলে তিনটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলোর মতে, অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ ( আইসিই) শীঘ্রই একটি ‘প্রস্তাবের অনুরোধ’ (Request for Proposal) প্রকাশ করতে যাচ্ছে। যেখানে বেসরকারি কারাগার পরিচালনাকারী সংস্থাগুলোকে পারিবারিক আটক কেন্দ্র পুনরায় চালু করার জন্য দরপত্র জমা দেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হবে। ওবামা প্রশাসন এবং ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের সময় অভিভাবকদের তাদের শিশুদের সঙ্গে আটক রাখা হতো কিন্তু বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালের শুরুর দিকে এই নীতি বন্ধ করে দেয়।
১৯৯৭ সালের একটি আদালতের রায় অনুযায়ী, আইসিই সাধারণ আটক কেন্দ্রে পরিবারসহ শিশুদের আটকে রাখতে পারে না এবং তাদের ২১ দিনের বেশি ধরে রাখার অনুমতি নেই। বাইডেন প্রশাসন অভিবাসী পরিবারগুলোর প্রধান সদস্যকে জিওলোকেশন মনিটরিং প্রোগ্রামে (যেমন গোড়ালির ইলেকট্রনিক মনিটর) অন্তর্ভুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দিয়েছিল। যদিও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিতাড়নের নির্দেশ ছিল।
গত মাসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আইসিই কর্তৃক প্রকাশিত বেশিরভাগ গ্রেফতার একক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে পরিবার আটক কেন্দ্রগুলি পুনরায় চালু হলে এই চিত্র দ্রুত বদলে যেতে পারে।
বর্তমানে দুটি আটক কেন্দ্র পরিবারগুলোকে গ্রহণের জন্য প্রস্তুত রয়েছে-টেক্সাসের কার্নেস সেখানে জিইও গ্রুপ পরিচালিত একটি কেন্দ্র ৩,০০০-এর বেশি মানুষকে রাখার সক্ষমতা রাখে এবং টেক্সাসের ডিলি যা পূর্বে কোর সিভিক দ্বারা পরিচালিত হতো। সেখানে ৮৩০ জনের ধারণক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে ডিলি কেন্দ্রটি বন্ধ রয়েছে। তবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। আর কার্নেস বর্তমানে শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক অভিবাসীদের ধরে রাখছে ফলে এটিকে আবার পারিবারিক আটক কেন্দ্রে রূপান্তর করতে হবে। আইসিই নতুন আটক কেন্দ্র তৈরি করবে নাকি পূর্বের কেন্দ্রগুলো পুনরায় চালু করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সংস্থাটি ইতোমধ্যেই বাজেট ঘাটতির মুখে রয়েছে এবং এটি তাদের জন্য একটি অতিরিক্ত ব্যয় হবে।
বাইডেন প্রশাসনের অধীনে কাজ করা দুইজন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তরের (ডিএইচএস) কর্মকর্তা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে হাজার হাজার অভিবাসী রয়েছেন যারা পরিবারসহ অবস্থান করছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত বহিষ্কারাদেশ রয়েছে। ফলে তারা গ্রেফতার হওয়ার পর সরাসরি আটক কেন্দ্রে পাঠানোর পর দ্রুত বিতাড়নের সম্মুখীন হতে পারেন। ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপক বিতাড়ন (গণ বহিস্কার) তার প্রধান নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি করেছিল। ফলে আইসিই-এর উপর এখন এই সংখ্যাকে বাড়ানোর চাপ রয়েছে।
একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অভিবাসী পরিবার মিশ্র-স্থিতি (mixed-status) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ কিছু সদস্য বৈধভাবে বসবাস করছেন, আর কিছু সদস্য বহিষ্কারের যোগ্য। ফলে এসব পরিবার বিচ্ছিন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়তে পারে। গত অক্টোবরে সিবিএস-এর ‘সিক্সটি মিনিটস’ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প প্রশাসনের সীমান্ত নীতি প্রধান টম হোম্যান বলেন, মিশ্র-স্থিতি পরিবারদের জন্য কোনো ব্যতিক্রম করা হবে না। তবে যারা আইনগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন।তারা চাইলে স্বেচ্ছায় বহিষ্কৃত হয়ে পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারেন।
বিপি।এসএম