ছাবেদ সাথী
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন এমন এক বিপজ্জনক পথের খুব কাছাকাছি চলে এসেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে আমেরিকার শহরগুলোর ভেতরে পুলিশি ব্যবহারের আইনগত সীমা অতিক্রম করে যেতে পারে।
১৯৯২ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস ছিল অগ্নিগর্ভ। মানুষ মারা যাচ্ছিল। তখন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ. ডব্লিউ. বুশ ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর পিট উইলসনের অনুরোধে ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে এনে, ইনসারেকশন অ্যাক্ট (বিদ্রোহ দমন আইন) প্রয়োগ করে এবং সক্রিয় মার্কিন মেরিন সেনাদের লস অ্যাঞ্জেলেসে পাঠিয়ে রডনি কিং দাঙ্গা দমন করতে সাহায্য করেছিলেন।
কিন্তু আজকের চিত্র একেবারে ভিন্ন। ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে লস অ্যাঞ্জেলেসে ‘হিংস্র বিদ্রোহী ভিড়’ জমেছে, এবং সাপ্তাহিক ছুটিতে ন্যাশনাল গার্ড সদস্যদের ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে এনে প্রায় ৪,০০০ সেনাকে শহরে পাঠিয়েছেন। এমনকি ৭০০ সক্রিয় মেরিন সেনাকেও ফেডারেল স্থাপনা রক্ষায় পাঠিয়েছেন। তবুও, তিনি এখনও পর্যন্ত ইনসারেকশন অ্যাক্ট প্রয়োগ করেননি। এবং ১৯৯২ সালের মতো আইনগত পুলিশি ক্ষমতা দিতেও অপারগ থেকেছেন।
এর মানে দাঁড়াচ্ছে, আজ আমেরিকা দেখছে—প্রেসিডেন্টের নির্দেশে ফেডারেল সেনা মোতায়েন হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে, এমনকি গভর্নরের অনুমতি বা সহযোগিতা ছাড়াই—কোনো পুলিশি ক্ষমতা ছাড়াই।
যদি এই সৈন্যরা এখনও ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নরের অধীনে থাকত, তাহলে তাদের আইন প্রয়োগের অধিকার থাকত—কারণ রাজ্য গার্ড বাহিনীর একটি মিশনই হল আইন প্রয়োগে সহায়তা করা। কিন্তু এখন তারা ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায়, তাদের সেই ক্ষমতা নেই। এমনকি যারা মোতায়েন হয়েছেন, তারাও আইনি দিক থেকে কিছুই করতে পারছেন না।
এই পরিস্থিতি একটি গভীর ঐতিহাসিক ভয়ের ইঙ্গিত দেয়—যেখানে প্রেসিডেন্ট তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনে সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে পারেন।
মার্কিন ইতিহাসের শুরু থেকেই দেশের অভ্যন্তরে ফেডারেল সেনাবাহিনী মোতায়েনকে স্বৈরশাসনের লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়। স্বাধীনতা ঘোষণার সময় থেকেই মার্কিন নাগরিকরা জানে—সামরিক শক্তিকে দেশের ভেতরে আইনের প্রয়োগে ব্যবহার করাকে তীব্রভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। ১৮৭৮ সালের পসি কমিটাটাস অ্যাক্ট-এ তা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই আইনে বলা হয়েছে, ফেডারেল সেনাবাহিনী, এমনকি ফেডারেল নিয়ন্ত্রণাধীন ন্যাশনাল গার্ড, কোনো আইন প্রয়োগ কার্যক্রমে জড়াতে পারবে না।
তবে এর কিছু ব্যতিক্রম আছে। সেসব ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট যুদ্ধ, বিদ্রোহ, বা ফেডারেল আইনে বাধাদানের সময় সেনাবাহিনী ব্যবহারের ক্ষমতা পান। ইনসারেকশন অ্যাক্ট-এর মাধ্যমে এই আইনি ব্যতিক্রম কার্যকর হয়। যেমন ১৯৯২ সালের এলএ দাঙ্গার সময় এই আইন প্রয়োগ হয়েছিল।
কিন্তু এবার তা হয়নি। ট্রাম্প এলএ-তে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজনীয়তা বারবার বলেছেন—যদিও বেশিরভাগ অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণই ছিল—তবুও তিনি সেনাদের যথাযথ আইনি ক্ষমতা দেননি।
এভাবে ট্রাম্প তার সেনাদের এক জটিল ও বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে ফেলেছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশ এবং অন্যান্য স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে এই ফেডারেল সেনাদের কমান্ড, কন্ট্রোল, এবং সমন্বয়ের কাঠামো কী? তারা কী নিয়মে বলপ্রয়োগ করবে? তারা কি সামরিক নিয়মে চলবে, যেখানে আইন প্রয়োগের শর্তে বল ব্যবহারের নিয়ম আলাদা? মেরিন সেনারা কি আসলেই সজ্জিত ও প্রশিক্ষিত এই কাজের জন্য—যেখানে চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ সংশোধনীর অধীনে নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত?
আরও বড় প্রশ্ন, তারা আদৌ কী করতে পারবে? ফেডারেল আইন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের নিয়ন্ত্রণাধীন সেনারা গ্রেফতার, তল্লাশি বা জব্দ করতে পারে না। কিন্তু যদি সত্যিই এখানে “হিংস্র বিদ্রোহী” থাকে—যা আমি নিজে বিক্ষোভে গিয়ে দেখিনি—তাহলে আমরা কি চাই না তাদের গ্রেফতার করা হোক?
এই মোতায়েন বরং অপ্রয়োজনীয়, ব্যয়বহুল, বিভ্রান্তিকর এবং স্থানীয় পুলিশ ও মোতায়েনকৃত সৈন্যদের জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। এতে নেতৃত্ব ও সমন্বয়ের জটিলতা বেড়েছে এবং গভর্নরের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ (তার নিজস্ব ন্যাশনাল গার্ড) কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
সম্ভবত ট্রাম্প চাচ্ছেন, সহিংসতা আরও ছড়াক—তাহলে তিনি সামরিক শাসন জারি করতে পারবেন। কিংবা ইনসারেকশন অ্যাক্ট এড়িয়ে দিয়ে, সংবিধানের তথাকথিত “অন্তর্নিহিত” ক্ষমতা বলে সেনা দিয়ে গ্রেফতার করাতে পারবেন। এই ধরনের পদ্ধতিতে সামরিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে থাকা আইনি রক্ষাকবচকে এড়িয়ে যাওয়া অত্যন্ত উদ্বেগজনক, এবং এর বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ প্রয়োজন।
ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সম্পাদক বাংলা প্রেস।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম