বাংলাপ্রেস অনলাইন: রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। একই অবস্থা মিরপুরের কালশী রোডে। গতকাল বৃহস্পতিবারের মতো আজ শুক্রবারও গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি।
নিরাপত্তার দাবিতে আজ সকাল থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেন পরিবহন শ্রমিকেরা। তাঁরা বিক্ষোভ করছেন। পরিবহন শ্রমিকদের দাবি, তাঁরা গত পাঁচ দিন ধরে ঠিকমতো বাস চালাতে পারছেন না। তাঁরা মারধরের শিকার হচ্ছেন। হামলায় যানবাহনেরও ক্ষতি হচ্ছে।
পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনার ফরিদ উদ্দিন বলেন, নিরাপত্তাহীনতার অভিযোগে শ্রমিকেরা সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছেন। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তায় কাজ করছে পুলিশ।
সকালে মিরপুরের কালশী রোডে পরিবহন শ্রমিকেরা অবস্থান নেন। তাঁদের অবস্থানের কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার সড়ক দিয়ে গণপরিবহন চলছে না। মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরেও পরিবহন শ্রমিকদের অবস্থানের খবর পাওয়া গেছে।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকেরা জানান, গাবতলী থেকে কোনো বাস ছাড়ছে না। সাতক্ষীরা এক্সপ্রেসের ব্যবস্থাপক মো. বোরহান বলেন, পরিবহন শ্রমিকেরা নিরাপত্তাহীনতায় আছেন। বাস ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে বাস চালানো হচ্ছে না।
গাবতলীতে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার সাইফুল আলম মুজাহিদ বলেন, গাবতলীতে শ্রমিকদের কোনো অবস্থান নেই। তবে বাস ছাড়ছে না।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গতকাল কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা ছাড়াই দিনভর রাজধানী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রাখেন পরিবহনমালিকেরা।
রাজধানীর প্রধান চারটি বাস টার্মিনাল গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ ও ফুলবাড়িয়া থেকে গতকাল সারা দিন কোনো বাস ছাড়েনি। ঢাকার বাইরে থেকেও কোনো বাস আসেনি। রাজধানীর ভেতর এবং ঢাকার সঙ্গে আশপাশের জেলার গণপরিবহন চলাচল করেনি। মহাখালী থেকে সন্ধ্যার পর কিছু বাস চলাচল শুরু হয়।
হঠাৎ বাস বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরা। মোটরযান আইন অনুসারে কোনো ঘোষণা ছাড়া বাণিজ্যিক যানবাহন বন্ধ রাখার শাস্তি হলো গাড়ি চলাচলের অনুমোদন বাতিল। মোটরযান আইনে বাস-মিনিবাসের অনুমতির অন্যতম শর্ত হচ্ছে গাড়ি চলাচল নিয়মিত এবং অব্যাহত রাখতে হবে।
বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাস-মিনিবাসের চলাচল বন্ধ রাখতে হলে কর্তৃপক্ষকে আগে থেকে জানাতে হবে। এর ব্যত্যয় মানে সড়কে চলাচলের অনুমতির শর্ত লঙ্ঘন করা। এর সর্বোচ্চ শাস্তি গাড়ি চলাচলের অনুমতি বাতিল করা।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলন করছে। আন্দোলনের পঞ্চম দিনে গতকাল ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে শিক্ষার্থীরা গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির কাগজপত্র চেক করেছে। মন্ত্রী, সাংসদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বহনকারী গাড়িও এই তল্লাশি থেকে বাদ যায়নি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমাতে সারা দেশের স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার যে কৌশল নিয়েছিল সরকার, তা কাজে লাগেনি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে গতকাল ঢাকার রাজপথে আগের চার দিনের চেয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বেশিই ছিল। কেবল রাজধানীতেই নয়, গতকাল সারা দেশেই রাস্তায় নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম নিহত হয়। তাদের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ঢাকায় চলমান ছাত্র বিক্ষোভ ঠেকাতে সরকার নানা আশ্বাস দিলেও আন্দোলনকারীরা আস্থা পায়নি। তারা লাইসেন্স পরীক্ষা করায় নতুন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে।