এম আর আলী টুটুল, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: সৈয়দপুর শহরে লোহা চোরদের তৎপরতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোনভাবে রেলকারখানা থেকে চুরি করে পাচার হচ্ছে লোহার দামি দামি যন্ত্রাংশ। পাচার করা মালামাল গুলো প্রথমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চোরদের নিজস্ব গোডাউনে। এরপর ভোর রাতে সেগুলি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভাঙ্গারী লোহার গোডাউন, শহরের টিউবওয়েল কারখানা সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। পাচার করা রেল লাইন, লোহার স্লিপার, তামা, পিতল, কাস্টিং, স্টিল পাত ও ঢালাই লোহা। প্রায় এক যুগ ধরে একই নিয়মে এসব দামি দামি যন্ত্রাংশ পাচার করে পাচারকারীরা সহ লোহা ক্রয় বিক্রয়কারীরা অল্প দিনেই কোটিপতি হলেও সেগুলি কেউই দেখছেন না।
১৮৭০ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের বিশাল কারখানা গড়ে ওঠে সৈয়দপুরে। স্থাপিত এ কারখানায় শুরু থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জনবল ছিল প্রায় ১০ হাজারের মত। কিন্তু ১৯৯৬ সালের পর তৎকালীন সরকার গোল্ডেন হ্যান্ড সেকের মাধ্যমে সাড়ে ৭ হাজার শ্রমিক কর্মচারীকে ছাটাই করেন। এর ফলে এক দিকে যেমন জনবল সংকটে কারখানার উৎপাদন কমতে থাকে অন্যদিকে ব্যবহার না হওয়ার ফলে নষ্ট হতে থাকে দামি দামি যন্ত্রাংশ। নানান সংকটের মধ্য দিয়ে তৎকালীণ সরকারের আমলে উন্নয়নে হ্রাস পেলেও কালো টাকার আয় বেড়ে যায় অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী, শ্রমিক লিডার, চোর সিন্ডিকেটসহ ভাঙ্গারী লোহার ব্যবসায়ীদের।
এ কারখানা থেকে সদ্য অবসর প্রাপ্ত কয়েকজন শ্রমিক কর্মচারী তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ব্যবহার না হওয়া কারখানার যন্ত্রাংশগুলির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছিল কয়েক হাজার কোটি টাকা। কিন্তু নজরদারির অভাবে সেগুলির বেশির ভাগই সাবার হয়ে গেছে। তারা বলেন, লোহা চোর শাহিন, আশরাফ, মকবুল, আইনুল ও জাবেদসহ আরএনবি সদস্য বাবুল ও ননি মন্ডল হয়েছেন কোটি টাকার মালিক। তারা আরো বলেন, বাবুল ও ননি মন্ডল চোরদের সাথে মোটা অংকের চুক্তির বিনিময়ে রাত ১০টা পর থেকে ভোর রাত পর্যন্ত দামি দামি যন্ত্রাংশ পাচার করাচেছন। এর পর চোরেরা ওই সব নিয়ে যাচ্ছে ভাঙ্গারী লোহার দোকানসহ টিউবওয়েল কারখানায়। অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ শ্রমিক লিডার ও রেল পুলিশের দায়িত্বহীনতায় বাবুল ও ননি মন্ডল সহ চোর সিন্ডিকেট বেশামাল হয়ে উঠেছে।
নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, সৈয়দপুর শহরে প্রায় ৫০টির মতো ভাঙ্গারী লোহার দোকান রয়েছে। এসব দোকান মালিকদের মধ্যে সুইপার পট্টি এলাকায় দুই জন এবং রংপুর দিনাজপুর সড়কে ২ ব্যবসায়ী চোরাইকৃত লোহা ক্রয় বিক্রয় করে কোটি টাকার মালিক বনেছেন। অথচ তারা মাত্র ৪/৫ বছর আগেও দুই বেলা পেট পুড়ে খেতে পারত না। এখনই প্রতিরোধ ও প্রতিবাধ করা না হলে অল্প দিনেই রেলওয়ের এই কারখানার শেষ সম্বল টুকুও সাবার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
এ ব্যাপারে কথা বলতে গেলে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক কুদরত-ই-খুদা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
বাংলাপ্রেস/আর এল