আজমীর হোসেন তালুকদার, ঝালকাঠি থেকে : শূন্যে বল নিক্ষেপ এবং ধরে ফেলায় বিশ্বরেকর্ড করে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে ঝালকাঠির কৃতিসন্তান বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের (বিএম) ছাত্র আশিকুর রহমান জুবায়ের। গত ৩০ জুলাই গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে স্বীকৃতিপত্রটি এসে পৌঁছে জুবায়েরের হাতে।
স্বীকৃতিপত্রে বাংলাদেশি জুবায়ের ‘নেক থ্রো অ্যান্ড ক্যাচেস’ ক্যাটাগরিতে মিনিটে ৬৫ বার বল নিক্ষেপ এবং ধরে ফেলে পূর্বের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন বিশ্বরেকর্ড করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অসামান্য এ সাফল্যের জন্য বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
ঝালকাঠি জেলা শহরের মসজিদ বাড়ি রোডের বাসিন্দা জালাল আহম্মেদের ছেলে আশিকুর রহমান জুবায়ের বিএম কলেজের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অনার্স চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। সে ২০১৪ সালে সরকারি ঝালকাঠি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় জিপিএ ৫ পেয়ে এসএসসি ও ২০১৬ সালে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ থেকে ৪.২৫ জিপিএ পেয়ে এইচএসসি পাসের পর বরিশাল বিএম কলেজে ভর্তি হন।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জুবায়ের তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, ‘ছোট বেলা থেকে ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছে থাকলে অভিভাবকদের শাসনের সে আশা পূরণ হয়নি। ওয়ার্ল্ড সুপারস্টার রোনালদিনহো এরপর ফুটবল নিয়ে আকর্ষনীয় সব কসরত দেখে নিজেও ফুটবল নিয়ে কসরত শুরু করি। নিয়মিত কসরতের মাধ্যমে বল নিক্ষেপ ও ধরে ফেলার এ দ্রুত গতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। ২০১৬ সালের ৫ নভেম্বর জার্মানির মার্কেল গুর্ক নেক থ্রো অ্যান্ড ক্যাচেস ক্যাটাগরিতে মিনিটে ৬২ বার বল নিক্ষেপ ও ধরে ফেলে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। তার রেকর্ড ভেঙে আমি এ বছর আমি মিনিটে ৬৫ বার নেক থ্রো অ্যান্ড ক্যাচেসে করতে সফল হই।’
প্রতিভাবান যুবক জুবায়ের আরো বলেন, ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পাওয়া কঠিন বিষয়। এ জন্য নিয়মিত পরিশ্রম ও একনিষ্ঠ মনোযোগ দরকার, নিরাশ হলে সম্ভব নয়। আমি আশা করি নতুন নতুন ইভেন্টে বাংলাদেশের বর্তমান ও আগামী প্রজন্ম বিশ্বরেকর্ড গড়বে। এর মাধ্যমে শুধু ব্যক্তিগত সুনাম নয়, দেশের সুনাম নাম ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে।’ ‘আমি চাই আমার দেশেরই নতুন কেউ একজন রেকর্ডটি ভাঙুক। তাতে করে দেশের ফুটবল সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ বাড়বে।’ কোনো প্রশিক্ষক ছাড়াই মা-বাবার চোখ এড়িয়ে সে ঘরের দরজা বন্ধ করে নিজে নিজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চালাতেন অনুশীলন। তবে তার মা-বাবা এখন গর্বিত।
এ বিষয়ে জুবায়েরের বাবা জালাল আহম্মদ বলেন, আমাদের দেশে খেলোয়াড়দেরতেমন উল্লেখযোগ্য সাফল্য না থাকায় খেলাধুলার প্রতি আমাদের তেমন একটা আগ্রহ ছিলোনা। তাই ছেলেকে সবসময় লেখাপড়ার প্রতি মনোযোগী করতে চেষ্টা করতাম। এরপরও সে তার নিজ আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় দেশের জন্য যে সাফল্য বয়ে এনেছে তাতে আমরা ভীষন খুশি। তার সাফল্যে বিশ্বব্যাপী দেশের নাম ছড়িয়ে পড়বে। তবে আমরা চাই জুবায়েরের লেখাপড়ায় এভাবে বড় একটা সাফল্য বয়ে আনুক।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে জুবায়েরের বিশ্বরেকর্ডের খবরটি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি। তার অসামান্য সাফল্যে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হওয়ায় বরিশাল জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা সংবর্ধনার উদ্যোগ গ্রহণ করে।’ সংবর্ধনায় বিশ্বরেকর্ডধারী জুবায়েরকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদানসহ ১০ হাজার টাকা ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) প্রশান্ত কুমার রায়, ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক আলমগীর খান আলো, জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা বরিশাল হুসাইন আহম্মেদ উপস্থিত ছিলেন।
বিপি/আর এল