বাংলাপ্রেস ডেস্ক: বিএনপির বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন আছেন। গত বৃহস্পতিবার আক্রান্ত হয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন, দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বরেণ্য গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ অনেকে। দলের সিনিয়র কয়েকজন নেতাসহ এ পর্যন্ত মারা গেছেন দলের ৪৪০ জন। এ ছাড়া এক বছর ধরে গুলশানে নিজ বাসায় ‘গৃহবন্দির’ মতো অবস্থায় আছেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
দ্বিতীয় দফায় কোভিড সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় সব রাজনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেছে দলটি। চলতি বছর আন্দোলনের মাঠে ঘুরে দাঁড়ানোর যে পরিকল্পনা দলটি নিয়েছিল, সেটিও দারুণভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতার ভাষায়, করোনা বিএনপির জন্য দেখা দিয়েছে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে।
গত বছরের শুরুতে মহামারির কারণে ছয় মাসের মতো সাংগঠনিক কর্মকান্ড বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় বিএনপিকে। এরপর সাংগঠনিক কর্মকান্ড শুরু হলেও খুব বেশি সুবিধা হয়নি। কোভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় গত বুধবার দলের সব সাংগঠনিক কর্মকান্ড স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে গতমাসে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর কর্মসূচি স্থগিত করে দলটি।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, হেফাজতের কর্মসূচির পর সারা দেশে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান চলছে। বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘিরেও বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ‘মানুষ হত্যার’ প্রতিবাদে বিএনপি নতুন কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করা এবং দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকের সময়ে সিনিয়র এক সদস্যের সংক্রমণের খবর আসায় দলের রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিএনপির একটি সূত্রে জানা যায়, দেশব্যাপী দলের শতাধিক নেতাকর্মী এখন কোভিডে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে আরো আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ডা. এ কে এম আজিজুল হক, ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন-সংক্রান্ত মিডিয়া কমিটির সদস্য সাংবাদিক আতিকুর রহমান রুমন, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল প্রমুখ।
সূত্র মতে, নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণে এ পর্যন্ত বিএনপির ৪৪০ জন নেতাকর্মী মারা গেছেন। আদের মধ্যে আছেন দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদ্য এম এ হক, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, ঢাকা উত্তর মহানগর বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আহসান উল্লাহ হাসান, কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, ওলামা দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটি সদস্য মাওলানা কাসেমী, গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সহসভাপতি খন্দকার আহাদ আহমেদ, ঢাকার পল্লবী থানা বিএনপির সহসভাপতি মো. আনিসুর রহমান, সাবেক মন্ত্রী টি এম গিয়াস উদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য অ্যাডভোকেট কবির চৌধুরী, জাতীয় ট্যাক্সেস বার সভাপতি অ্যাডভোকেট গফুর মজুমদার, শ্রমিক দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক মোল্লা, গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা বিএনপির শহিদুল্লাহ শহীদ, বোস্টন বিএনপির ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক মিতোষ বড়ুয়া, বিএনপি সহ-স্থানীয় সরকার সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেন সরকার ভজে ও সাবেক এমপি এ টি এম আলমগীর প্রমুখ।
বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, কোভিডে আক্রান্ত হয়ে বহু নেতা হাসপাতালে কিংবা বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তাদের খোঁজখবর রাখছেন।