সুলতানা মাসুমা,লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ঐতিহ্যবাহী হায়দরগঞ্জ-বাজার এখন মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চলের বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল। এখানে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার ক্রেতা বিক্রেতাদের সমাগম ঘটে। শুধু তাই নয় ইলিশ, সয়াবিন, নারিকেল, সুপারিসহ বিভিন্ন কৃষিতে নির্ভর ও প্রশিদ্ধ এ অর্থনৈতিক অঞ্চল।
চট্রগ্রাম আন্দরকিল্লাহ শাহী জামে মসজিদের খতিব, প্রখ্যাত আলেম, দেশের ঐতিহ্যবাহি গার্মেন্ট শিল্প কারখানার মালিক, জাতীয় সংসদের উপ-সচিব, জজ, শিক্ষাবিদ ও শিল্লপতিদের প্রিয় এলাকা দক্ষিন চরআবাবিল ইউনিয়ন। উপজেলার অন্যতম ইউনিয়নও হচ্ছে এটি।
চরআবাবিল ইউনিয়নের অর্থনীতি প্রধানত কৃষি ও মৎস্য নির্ভর। ধান, সয়াবিন, মাছ সহ রয়েছে কৃষিতে নির্ভর বিপুল অর্থকরী সম্পদ। এসব সম্পদ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় চালানও হচ্ছে।
বিশেষ করে ইলিশ, সয়াবিন, নারিকেল, সুপারি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চলে যাচ্ছে। মেঘনার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রয়েছে মাছ , সোনালী ধানের ক্ষেত ও সয়াবিন-এর মতো লবণের মাঠ। পুরুষ পরম্পরায় এ অঞ্চলের মানুষ এই সম্পদের উপর ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। চরআবাবিল তথা হায়দরগঞ্জে জন্ম নিয়েছে অসংখ্য আলেম, শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, জজ, উকিল ইত্যাদি। দক্ষিণ এশিয়ার সর্ব বৃহৎ বলা চলে মিল্কভিটা সমবায় ও কৃষি উপনীবেশ সমিতি এই ইউনিয়নে।
চরআবাবিল দেশের ইউনিয়ন যা সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীনও। লক্ষ্মীপুর জেলার অন্যতম প্রধান বাজার হচ্ছে হায়দরগঞ্জ বাজার।প্রতি বছরই লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে নিলাম দেওয়া উক্ত বাজার। জনসংখ্যা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে, হায়দরগঞ্জ বাজারের সীমানাও বাড়ছে। সপ্তাহের বুধবার ও রোববার ২ দিন বাজারে হাঁট বসে। রায়পুর উপজেলার নয় ইউনিয়নের মানুষই না পাশের চরভৈরবি, ভোলা, হাইমচরের ইত্যাদি এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ বেচা-কেনা করতে আসেন। সপ্তাহে ২ দিন প্রত্যেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আদায় করে থাকে বাজার কমিটি।
হায়দরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী তাহসিন হাওলাদার বলেন, বাজারের রাস্তা নিয়মিত ঝাড়ু দেওয়া হয় না। একটু বৃষ্টি হলেই পানি ও ময়লা একাকার থাকে পুরো বাজারে । ড্রেনগুলো ভাঙ্গাচোরা, বছরে ১/২ বার পরিষ্কার করা হয় মাত্র । চলতি বছর ৬০ লাখ টাকার ডাকের বাজার নিয়ে কমিটির সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারি ব্যবসায়ী মানু মোল্লার কোন ভূমিকা নেই । বাজারের পুকুরটি সেক্রেটারির দোকানের সামনেই ( মিুউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাথে )। ইউএনও একদিন সরেজমিনে পরিদর্শন করে রাস্তা ও ড্রেন পরিস্কারের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন এ পর্যন্তই । দিন যত যাচ্ছে হায়দরগঞ্জ বাজার তত নোংরা হচ্ছে। বর্তমানে বলা যায়, অভিশপ্ত হায়দরগঞ্জ বাজার। বাজার পরিচালনা কমিটি নিরবে হায়দরগঞ্জবাসীর সাথে তামাশা করছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখাযায়, বাজারের সব অলি-গলিতে নোংরা জিনিসপত্র ফেলে পরিবেশ নষ্ট করছে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা। প্রায় দোকানের সামনে আলাদা দোকান বসিয়ে ইনকামের পথ খুঁজছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। বিশেষকরে দোকানের সামনে যে নালাগুলো রয়েছে, তার উপর তক্তা বসিয়ে নালা দখল করে প্রায় সময় বেচা-কেনা করছে হকারের মতো দোকানদাররা। বর্তমানে পানি চলাচলের বেশির ভাগ নালা ময়লা ফেলে ভরাট করে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। মাংসের দোকানে প্রচুর নোংরা পরিবেশে মাংস বিক্রি হয় এবং বাজারের ভিতরে গরু জবাই করার পর মাংসের উচ্ছিষ্ট পদার্থ নালায় ফেলে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। দোকানের সামনে হাঁটার রাস্তা দখল করে নিচ্ছে অনেক দোকানদার। প্রায় সব দোকানের সামনের নালায় প্রচুর ময়লা ফেলে বাজারের পরিবেশ নষ্ট করছে ভাসমান হকারসহ মুরগীর ফার্মের দোকানদাররা। এমনকি তাদের ব্যবহৃত সমস্ত দূষিত পানি দোকানের সামনে ফেলছে প্রতিদিন এবং খোলা জায়গায় হকার রা প্রশ্রাব করে বাজার কে ডাস্টবিনে পরিণত করছে।
বাজার কমিটির সম্পাদক মানু মোল্লা বলেন, বাজারের পরিবেশ নোংরা হচ্ছে ঠিক, কিন্তু এবিষয়ে হকার ও দোকানদারদেকে বহুবার বলার পর তারা কর্ণপাত করছে না। বাজারের নোংরা পরিবেশ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। হকাররা নালা দখল করে পণ্যের পসরা সাজিয়ে রাখায় নালা পরিষ্কার করতে না পারায় পুরো গলি গন্ধে পরিবেশ ভারী হয়ে যাচ্ছে। যার দরুন মানুষ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। বাজারের পানি চলাচলের একমাত্র নালা দীর্ঘদিন ধরে ড্রেসিং না করায় ভরাট হয়ে পানি চলাচলে বিঘন্তা ঘটছে।
এ ব্যাপারে চরআবাবিল ইউপি চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ উল্লাহ বিএসসির কাছে জানতে তিনি এবিষয়ে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান। কিছু কিছু দোকানের সামনে গিয়ে দেখি, হকাররা নালার স্টেপ ভেংগে নালা দখল করে পণ্য সাজায় রাখছে। তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আমরা বাজার কমিটিকে ভাড়া/হাচিল দিয়ে ব্যবসা করছি।
বাজারের এক দোকানদার (নাম গোপন রাখা হয়েছে) বলেন, আজকের এ অবস্থা যদি চলতে থাকে তাহলে ঐতিহ্যবাহি হায়দরগঞ্জ বাজারের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। বর্তমানে সুষ্ঠুভাবে হাঁটাচলা করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেদিকে যায়, সেই দিকে দুর্গন্ধ। তারা বলেন, দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা যদি রাস্তায় এভাবে রাখে মানুষ চলাচলে সমস্যা সহ স্বাস্থ্য কি হুমকির সম্মুখীন নয়? এতে তারা সরাসরি বাজার কমিটিকে দায়ী করছেন। নালার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে ক্রেতা বিক্রেতা সবাই। আমি নিজে গিয়ে দেখি এমন দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে যা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারছিনা।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরীন চৌধুরী কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করছিলেন। উক্ত অভিযানে সপ্তাহখানিক স্বস্তি পেয়েছিলো। কিন্তু এখন সেই অভিযানের চিহ্নমাত্র পাওয়া যাচ্ছে।
বিপি/কেজে