জবি প্রতিনিধি: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সশরীরে বিভিন্ন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হলেও করোনা সংক্রমণের কথা চিন্তা করে গতবছরের ন্যায় এবারও হচ্ছে না দুর্গাপূজার আয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুর্গাপূজার আয়োজন না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন সনাতন ধর্মাবলাম্বী শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় এবার ক্যাম্পাসে পূজা আয়োজন করা সম্ভব না। অন্যান্য ক্যাম্পাসে ও পূজার আয়োজন নেই তেমন। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি থাকায় এবার ক্যাম্পাসে পূজা আয়োজন করা সম্ভব না। পূজা এবার কোনো ক্যাম্পাসেই হচ্ছে না, আমাদের ক্যাম্পাসেও হবে না। করোনার কথা চিন্তা করে গতবারের মতো এবারেও পূজার আয়োজন না করাই ভালো।
ক্যাম্পাসে পূজা না হওয়ায় হতাশ বিশ্ববিদ্যালয়ের সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা। নিউজবাংলার প্রতিবেদকের নিকট ব্যক্ত করেছেন তাদের অভিব্যক্তি।
অমিত পাল বলেন, পরীক্ষা শুরু হওয়ায় কিছুদিন ধরেই ক্যাম্পাস পূর্বের মতো শিক্ষার্থীদের পদস্পর্শে মুখরিত হয়ে উঠেছে। হিন্দু ধর্মালম্বী শিক্ষার্থীদের ইচ্ছে থাকা শর্তেও সময় স্বল্পতা হেতু এবছরও দেবীর চরণে ফুল দেবার সৌভাগ্য হয়ে উঠেনি। কয়েকটি বিভাগে এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে স্থগিত হওয়া সেমিস্টার ফাইনাল। পূজার পরেই বাকী বিভাগ ও অনুষদেও অনুষ্ঠিত হবে পরীক্ষা।পরীক্ষা চলমান কিংবা সন্নিকটে থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এবছর পূজা হওয়াটা হিন্দুধর্মালম্বীদের জন্য খুবই জরুরি ছিল। পূজা উদযাপন করা সম্ভব না হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী হতাশ হয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থীকেই এবছর পূজার অঞ্জলি প্রদান এবং দেবী মায়ের দর্শনে পোহাতে হবে নানারকম ভোগান্তি। নানারকম সমস্যা এবং বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে সকলেই হয়তো পূজা উদযাপন করবেন তবে নিজের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পূজা না হওয়ার অভাব সবাই ই অনুভব করবেন। নিজের বাড়ির পূজার মতো নিজের ক্যাম্পাসের পূজাও যে ভিন্নরকম কিছু উপভোগ করা যেতো।
মিথিলা দেবনাথ ঝিলিক বলেন, গত ২০১৯ সালে আমাদের ক্যাম্পাসে সবশেষ ক্যাম্পাসে পূজো হয়েছিল। এরপর করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর পর ক্যাম্পাস তার প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের ক্যাম্পাসে স্বল্প পরিসরে যদি দূর্গাপূজার ও আয়োজন করা হতো তাহলে হয়তো ক্যাম্পাস তার প্রকৃত স্বরূপ ফিরে পেতো। কারন করেনা মহামারির পর একটা উৎসব ক্যাম্পাসের স্বরূপ ফেরানোর জন্য খুবই দরকার ছিল বলে আমার মনে হয়। এই মহামারিতে আমরা আমাদের ক্যাম্পাস জীবনের অনেকটা সময় বাসায় বসেই কাটিয়ে দিয়েছি। তাই এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠা যেতো।
বারখা দেবী বলেন, প্রথমত এইবার পুজোর মধ্যে আমাদের পরীক্ষা শুরু হয়েছে করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এমনটা হয়েছে। এমতাবস্থায় আমরা অনেকেই পূজা করতে বাসায় যেতে পারছি না। কারণ অনেকের বাসা অনেক দূরে। এই অবস্থায় ক্যাম্পাসে যদি একটা পূজার আয়োজন করা হতো তাহলে ব্যাপারটা খুব ভালো দেখাতো। আমরা হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা আরাধনা করার সুযোগ পেতাম। বড় করে না করলেও ছোট করে একটা পূজো করা যেত, যথা নিয়ম মেনে চলে। এতে করে আমরা বাসার পূজার মত আনন্দ পেতাম। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সেটা করে নি। পরীক্ষা শুরু হওয়ায় পূজায় এবার আমরা বাসায় ও যেতে পারবো না। আবার ক্যাম্পাস ও আমাদের একটা ছোট আনন্দ করার সুযোগ করে দিল না। বিষয়টি খুবই দুখঃজনক।
অনুপম মল্লিক আদিত্য বলেন,
ক্যাম্পাসে স্বল্প পরিসরে হলেও পূজার আয়োজন করা যেতো। বিশ্ববিদ্যালয় চাইলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজার আয়োজন করতে পারতো। সনাতনী জবিয়ান যারা ঢাকায় আছেন, তারা অন্ততপক্ষে নিজ ক্যাম্পাসে বন্ধুবান্ধবদের সাথে মিলেমিশে পূজার আনন্দ ভাগাভাগি করতে পারতো। সবমিলিয়ে ২০১৯ সালের ক্যাম্পাসের দুর্গাপূজার মতো একটি দুর্গাপূজার অপেক্ষায় ছিলাম, যা ২০২১ সালে এসেও পাওয়া হলো না।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সুব্রত সরকার বলেন, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পূজার আয়োজন শিক্ষার্থীরা সবসময়ই উপভোগ করে। গতবার সেই আনন্দটা আমরা করতে পারিনি। ভেবেছিলাম এবার হয়তো সেই সুযোগটা আসবে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থী সোহাগ ঘোষ বলেন, আমাদের ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান এই পূজা। পূজা নিজের ক্যাম্পাসে করতে পারলে অনেক ভালো লাগতো। কিন্তু ক্যাম্পাসে পূজা না হওয়ায় আবার বাড়িতে চলে যাওয়া লাগছে। অথচ পরীক্ষার কারণে কিছুদিন আগেই ক্যাম্পাসে আসলাম।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে সর্বেশেষ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আনন্দে মেতে উঠেছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।
বিপি/কেজে