নরসিংদী প্রতিনিধি : দুর্গতিনাশিনী দশভুজা দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে নরসিংদীতে শুরু হয়েছে বাঙ্গালী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। ঢাকের বোল, কাঁসর ঘণ্টা ও শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠছে নরসিংদীর পূজামন্ডপ। তবে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে পূজায় অনেকটা সীমাবদ্ধ থাকছে মন্ডপগুলো। পরিস্থিতি বিবেচনায় সন্ধ্যা আরতির পর মন্ডপে দর্শনাথী প্রবেশ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূজা উদযাপন পরিষদ।
শাস্ত্র মতে, মহালয়া, বোধন ও সন্ধিপূজা- এই তিন পর্ব মিলেই দুর্গোৎসব। গত ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে দূর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।গত রবিবার সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোতে দুর্গা দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য বন্দনা পূজা করা হয়। মণ্ডপে-মন্দিরে পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ১১ অক্টোবর ষষ্ঠী, ১২ অক্টোবর সপ্তমী, ১৩ অক্টোবর অষ্টমী, ১৪ অক্টোবর নবমী এবং ১৫ অক্টোবর মহাদশমী মধ্যদিয়ে ৫ দিনের এই আয়োজনের পরিসমাপ্তি ঘটবে।
সোমবার ১১ অক্টোবর মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়েই দূর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। মহা ষষ্ঠীপূজা দিন থেকেই শুরু হয়েছে পাঁচদিনব্যাপী শারদীয় দুর্গাপূজা। আগামী ১৫ অক্টোবর (শুক্রবার) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বাঙালির এই শারদোৎসবের। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এ ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরে এখন নরসিংদী জেলায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। দুর্গাপূজাকে আনন্দমুখর করে তুলতে জেলার পূজা মণ্ডপগুলোকে বর্ণাঢ্য সাজে সাজানো হয়েছে।
বিশুদ্ধ পঞ্জিকা অনুযায়ী, দেবী দুর্গা এবার আসছেন ঘোটকে অর্থাৎ ঘোড়ায় চড়ে। ঘোড়া এমন একটি বাহন যা যুদ্ধের সময়ে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ঘোড়ার পায়ের শব্দও যুদ্ধেরই ইঙ্গিত দেয়। তাই পঞ্জিকা মতেই ঘোটকে আগমন মানেই ছত্রভঙ্গের কথাই বলা হয়। অর্থাৎ এই সময়ে যুদ্ধ, অশান্তি, হানাহানির সম্ভাবনা থাকে। পঞ্জিকা বলছে, মা দুর্গার এবার দোলায় গমন। দোলায় গমনের ফলাফল হল মড়ক লাগা। করোনা ভাইরাস মহামারির কারণে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে
সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখতে ভক্তদের প্রতি অনুরোধ করেছে পূজা উদযাপন পরিষদ। এছাড়া মেলা, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি প্রতিযোগিতা বন্ধ এবং বিজয়া দশমীর দিন শোভাযাত্রা পরিহার করে প্রতিমা বিসর্জন দেয়ার নির্দেশ রয়েছে বলে জানানো হয়।
পুরাণ মতে, রাজা সুরথ প্রথম দেবী দুর্গার আরাধনা শুরু করেন। বসন্তে তিনি পূজার আয়োজন করায় দেবীর এ পূজাকে বাসন্তী পূজা বলা হয়। কিন্তু রাবণের হাত থেকে সীতাকে উদ্ধার করতে লংকা যাত্রার আগে শ্রী রামচন্দ্র দেবীর পূজার আয়োজন করেছিলেন শরৎকালের অমাবস্যা তিথিতে, যা শারদীয় দুর্গোৎসব নামে পরিচিত। দেবীর শরৎকালের পূজাকে এজন্যই হিন্দুমতে অকাল বোধনও বলা হয়।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সদস্য সচিব সুব্রত চন্দ্র দাস জানান, এবছর নরসিংদী জেলায় ৩৫৫ টি মন্ডপে দুর্গাপূজা উদযাপন করা হচ্ছে। এরমধ্যে নরসিংদী পৌরসভায় ৩০টি ও মাধবদী পৌরসভায় ১৫টি সহ নরসিংদী সদর উপজেলায় ৯৮টি, পলাশ উপজেলায় ৪৬টি, শিবপুর উপজেলায় ৭০টি, মনোহরদী উপজেলায় ৫১টি, বেলাব উপজেলায় ২৩টি এবং রায়পুরা উপজেলায় ৬৭টি মন্ডপে দেবী দুর্গার আরধনা করছে পূজারীরা।তিনি বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা। গত বছরের মতো এবারও এ উৎসবটি অতটা জাকজমকভাবে উদযাপন করা যাবে না। করোনার কারণে এবারের আয়োজনে বেশকিছু ভিন্নতা আছে। তবে গত বছরের চেয়ে এবার পূজামন্ডপের সংখ্যা বেশী। সরকারী বেশ কয়েকটি নির্দেশনা মেনে আমাদেরকে পূজা উদযাপন করতে হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা পূজা পালন করছি।
এবছর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারীভাবে প্রতিটি পূজামন্ডপে ৫ শ’ কেজি করে চাল বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। যা ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করে এর মূল্য বাবদ ১৪ হাজার টাকা করে মন্ডপগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি। মন্ডপগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার সদস্যেদর সাদা পোশাকধারী পুলিশ।দায়িত্ব পালন করছেন। পুলিশ এবং আনসারের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। দর্শনার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ডপে মন্ডপে সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে সনাতন ধর্মে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলাদা আলাদা বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। পূজা নির্বিঘে করতে প্রশাসন থেকে আমাদেরক সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস প্রদান করেছে। সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এছাড়াও একটি মনিটরিং ক্যাম্প ও স্বাস্থ্যসেবা প্রধান কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
বিপি/আর এল