বাংলাপ্রেস ডেস্ক: আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে সরকার মাঠ খালি করার ষড়যন্ত্র করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, যারা নির্বাচনে অংশ নিবে তাদের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য তালিকাও করা হয়েছে।
আজ বুধবার দুপুরে নয়াপল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা ও মণ্ডপে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি নেতাদের অভিযুক্ত করার প্রসঙ্গে দলের অবস্থান তুলে ধরতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
কুমিল্লার ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওখানে কি হয়েছে সবাই জানে। এই ঘটনায় জড়িত দাবি করে ইকবাল নামের একজনকে কখনো ভবঘুরে, পাগল বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা আগেও বলেছি এই ঘটনা সরকারের এজেন্সির পরিকল্পনায় হয়েছে। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা এবং এই ঘটনায় বিএনপিকে জড়িয়ে বেকায়দায় ফেলার জন্য করেছে৷ কারণ এই ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।’
দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘রংপুরের ঘটনায় ছাত্রলীগের নেতারা জড়িত। ইতিমধ্যে কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। অথচ সেখানে এলাকায় ছিলেন না বিএনপির এমন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধেও মামলা দেওয়া হয়েছে।’
পূজামণ্ডপে হামলা, ‘ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ৬০টির মতো মামলা হয়েছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, এসব মামলায় ১৫ হাজারের বেশি আসামি করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এসব মামলায় ১৪৬ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
নোয়াখালীর চৌমুহনীর মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বরকত উল্লাহ বুলুর নাম আসার সমালোচনা করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ‘চৌমুহনীর মামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন সহসভাপতিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আটকে জোর করে বরকত উল্লাহ বুলু জড়িত বলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি আদায় করা হয়েছে। এই এলাকার একাধিকবারের সংসদ সদস্য, প্রগতিশীল রাজনীতি করা বুলু এই ঘটনায় জড়িত এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।’
চৌমুহনীর ঘটনায় যেসব মামলা হয়েছে তাতে ৭৯৬১ জনকে আসামি করা হয়েছে জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এই মামলা কবে শেষ হবে? আদৌ শেষ হবে না। এখন এসব মামলাকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তার বাণিজ্য করা হবে।’
বিএনপিকে হয়রানি করাই এসব মামলার উদ্দেশ্যে এমনটা জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আগেভাগে মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য এসব করা হচ্ছে। আপনারা জানেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে তালিকা করা হয়েছে।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এসব মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। আটককৃতদের মুক্তি দিতে হবে। একইসঙ্গে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দায়ীদের বিচার করতে হবে।’
নির্বাচনের আগে মাঠ খালি করার বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে সরকার হঠাৎ করে মামলা দেয়া শুরু করেছিল। এমনকি প্রার্থীদের গ্রেপ্তার করেছে। এবারও তেমনটা শুরু করেছে।’
এই অবস্থায় বিএনপি কি কৌশল নিয়েছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমরা চিন্তাই করছি না। এই সরকারকে সরে যেতে হবে। পরে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পরবর্তী নির্বাচন হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, শহিদুল ইসলাম বাবুল, আমিরুজ্জামান শিমুল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রমুখ নেতৃ্বৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিপি/কেজে