বাংলাপ্রেস ডেস্ক: সড়কের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে- এ অভিযোগ তুলে শিক্ষার্থী দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত নিরাপদ সড়ক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, সড়কে প্রশাসনকে ঘুষ দিয়ে চালকের লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলছে। এজন্য তারা সড়কের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখাবে বলেও জানিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের নেতা সোহাগী সামিয়া বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আমরা এ আন্দোলন চালিয়ে যাব। সড়কের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে, আমরা সড়কের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাল কার্ড দেখাব।
১১ দফা দাবিতে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও (শুক্রবার) রামপুরায় সড়কে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রামপুরা ব্রিজের পাশে হাতিরঝিল কর্নারে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
ছুটির দিনেও খিলগাঁও মডেল হাইস্কুল, খিলগাঁও মডেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ আশপাশের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ইউনিফর্ম পরে অংশ নেন। ১১ দফা দাবিতে নানা শ্লোগান দেন তারা। তবে অন্যান্য দিনের মতো শিক্ষার্থীরা যান চলাচল বন্ধ করেননি। তারা সড়কের এক পাশে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
পরে ওই সমাবেশ থেকে শনিবার দুপুর ১২টায় রামপুরা ব্রিজে অবস্থান নিয়ে সড়ক দুর্নীতির বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধি খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া। তিনি জানান, এইচএসসি পরীক্ষার মধ্যে পরীক্ষার্থীরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, সেভাবেই এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রামপুরা ব্রিজ থেকে মেরুল বাড্ডার দিকে যাওয়ার সময় রাইদা পরিবহনের একটি বাস থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা করতে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে আহ্বান জানান।ওই পুলিশ সদস্য তখন গায়ে হাত তোলেন বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় একটি কলেজের শিক্ষার্থী ইমন হোসেন নাঈম।তিনি বলেন, তিনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে গলা চেপে ধরে বলেন, ‘তোকে রিমান্ডে নেব’। পরে আমার সহপাঠীরা প্রতিবাদ করলে তিনি সরে যান।
তবে ঘটনাস্থলে থাকা বাড্ডা থানার এসআই রমজান আলীর দাবি, কোনো শিক্ষার্থীকে ধাক্কা দেওয়া হয়নি। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সত্য নয়।
এদিকে রামপুরায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়। রামপুরা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানান, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের অরাজকতা ঠেকাতে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর গত ৭ নভেম্বর থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে বাসের ভাড়া ২৬ থেকে ২৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ নভেম্বর অর্ধেক ভাড়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে ২৪ নভেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ির চাপায় নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী নাঈম হাসান নিহত হন।পরে রামপুরায় মাঈনুদ্দিন নামের এক শিক্ষার্থী অনাবিল পরিবহণ বাসের চাপায় নিহত হয়।
তারপর থেকে নিরাপদ সড়ক, অর্ধেক ভাড়াসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের টানা আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাজধানীতে বাসে অর্ধেক ভাড়ার দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় পরিবহণ মালিক সমিতি।
বিপি/কেজে