মমিনুল হক রুবেল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকেঃ স্বপ্নগুলোকে মুক্ত আকাশে পাখিদের মতো স্বাধীনভাবে ওড়ানোর তীব্র বাসনা ছিল অনেক দিনের। কিন্তু দারিদ্র্যতার সীমারেখায় বন্দি থেকে চাইলেই কি আর সব স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব! তবে হাল ছাড়লে তো চলবে না। দারিদ্র্যতার নির্মম বাস্তবতাকে পাশ কাটিয়ে নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিয়ে খোলা আকাশে বিমান উড়াচ্ছেন রবিউল নামক এক কিশোর।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার রাজ মিস্তুরের ছেলে রবিউল চালকবিহীন বিমান উড়িয়ে সবার নজর কেড়েছেন।মাত্র ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া রবিউল নিজের তৈরি চালক বিহীন বিমান দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রামের মুক্ত আকাশে। তার আবিস্কার বিমান দেখতে রীতিমত ভীড় জমিয়েছেন এলকাবাসী।
জানা যায়,ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের বিরামপুর গ্রামের রাজ মিস্তুর মোঃ নাজু মিয়ার ছেলে রবিউল (১৫) মাত্র ২ দিনে তৈরি করেছেন একটি চালক বিহীন বিমান। তার উদ্ভাবিত বিমানটির অবকাঠামো কর্কশিটের তৈরি হলেও রিমোট কন্ট্রোল সিস্টেমের মাধ্যমে অনায়াসে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়,বিরামপুর গ্রামের উত্তর পাশে নবীনগর টু রাধিকা সড়কে চালক বিহীন বিমান উড়াচ্ছেন রবিউল।আর তা উপভোগ করছেন শিশু,কিশোর,বৃদ্ধসহ নানা বয়সী লোকজন।
বিরামপুর গ্রামের উজ্জল বলেন,তার বাবা রাজ মিস্তুরের কাজ করে।রবিউল ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন জিনিস আবিস্কার করেছে।কয়েকদিন পূর্বে একটি বিকো আবিস্কার করেছে।দুই দিন পূর্বে সে আবার চালক বিহীন বিমান তৈরি করেছে।তার আর্থিক অবস্থা খুব দুর্বল,কারো সহযোগিতা বা সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা পেলে অবশ্যই ভালো কিছু করবে সে।
একই গ্রামের বাসিন্দা একজন বৃদ্ধা বলেন, ছেলেটি মেধাবী। তাকে উৎসাহ ও অনুপ্রাণিত করা উচিৎ। সরকারী সহায়তা পেলে হয়ত আরও ভালো কিছু করবে।
রবিউলের বাবা নাজু মিয়া বলেন,আমার ছেলে ছোট বেলা থেকে বিভিন্ন যন্ত্র নিয়ে অনেক কিছু আবিস্কার করেছে।আমাদের অভাবের সংসার,ছেলে টাকে লেখা পড়া করাতে পরিনাই।সে বিমান তৈরি করেছে,বিমান তৈরি করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে,যদিও টাকা গুলো দিতে কষ্ট হয়েছে।ছেলের তৈরি করা বিমান দেখার জন্য যখন বিভিন্ন গ্রাম থেকে মানুষ আসে তখন আনন্দ পাই।আমার ছেলে যদি কারো সহযোগিতা পাই বা সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পাই তাহলে সে লেখা পড়া করতে পারবে এবং অনেক কিছু তৈরি করতে পারবে।
ক্ষুদে বিজ্ঞানী রবিউল বলেন,সবসময় ব্যতিক্রম কিছু করার ভাবনা মাথায় আসে।ব্যাতিক্রম কিছু করার চিন্তা থাকলেও অর্থের অভাবে বাস্তবায়ন করতে পারছিনা।কয়েকদিন পূর্বে একটি বিকো তৈরি করেছি,এখন আবার দুই দিনে চালক বিহীন বিমানটি তৈরি করেছি।বিমান টি তৈরি করতে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা।একবার চার্জ করলে দীর্ঘক্ষণ উড়তে পারে।অনায়াসে ভূমি থেকে কিংবা হাতে নিয়েও উড়ানো যায়।রিমোটের সাহায্যে প্রায় ৫০০ মিটার দূর থেকেও নিয়ন্ত্রণ করা যায় এটি।রবিউল আরো বলেন,কৃষকদের জন্য একটি ড্রোন বানাতে চাই,সেই ড্রোনের মাধ্যমে ফসলি জমিতে বিষ প্রয়োগ করতে পারবে।এটি তৈরি করতে প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হবে।কারো সহযোগিতা পেলে কাজ করতে উৎসাহ পাব।
বিপি>আর এল