বাংলাপ্রেস ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার যতদিন পুনর্বহাল না হবে, ততদিন নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘২০১৪ ও ২০১৮ সালে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। গত দুইটি নির্বাচনে মানুষকে প্রবঞ্চনা করে, মিথ্যা কথা বলে, ভুল বুঝিয়ে নির্বাচন নির্বাচন খেলা করে ক্ষমতায় চলে গেছে; কিন্তু এবার আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি, মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এবার নির্বাচনি খেলা খেলতে দেওয়া হবে না। রুখে দেব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মার খেতে খেতে আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আর পেছনে ফেরার সময় নেই, সামনে এগোতে হবে। জনগণ রুখে দাঁড়িয়েছে। আমাদের এক দফা, এক দাবি- শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।’
শনিবার বিভাগীয় গণসমাবেশের অংশ হিসেবে ফরিদপুর শহরের উপকণ্ঠে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউটশন মাঠে গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব ফরিদপুর কৃতী সন্তানের নাম উল্লেখ করে বলেন, এই মাটির ইতিহাস আন্দোলন-সংগ্রামের। এ মাটিতে হাজী শরীয়ত উল্লাহ, শেখ মুজিবুর রহমান, কেএম ওবায়দুর রহমান ও চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফসহ অসংখ্য গুণী মানুষ জন্ম নিয়েছেন। তারা ব্রিটিশ ঔপনিবেশন বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের স্বাধীনতার লড়াই সংগ্রাম করেছেন। আজকেও ফরিদপুরের জনগণ স্বাধীনতা ও গণন্ত্রের লড়াইয়ে নেমেছেন।
নির্দলীয় সরকারের দাবি আদায়, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং চলমান আন্দোলনে পাঁচ কর্মী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বিভাগীয় গণসমাবেশ করছে বিএনপি। ফরিদপুর শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউশন মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে একাধিক বক্তা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পাশাপাশি শরীয়তপুর ডামুড্যা থেকে বিগত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মিয়া নূরুদ্দিন অপুর মুক্তি দাবি করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার অর্থনীতি ও দেশের ভবিষ্যত ধ্বংস করে দিয়েছে। ভোটের অধিকার হরণ করে দেশের রাজনীতি ধ্বংস করে ফেলেছে। সরকারের কথা হলো, আমার ভোট আমি দেব, তোমার ভোটও আমি দেব। তারা বন্দুক, পিস্তল এবং রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে আছে।’
সংবিধানের বাইরে সরকার যাবে না, তত্ত্বাবধায়কে নির্বাচন হবে না- ক্ষমতাসীনদের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাধায়ক সরকার নিয়ে কোনো প্রশ্ন ছিল না। এ পদ্ধতিতে চার থেকে পাঁচটি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তারপর তারাই ওই পদ্ধতি বাতিল করে সংবিধান ধ্বংস করে দিয়েছে। ১৯৭৫ সালেও সব দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের সম্পদ লুট হয়ে গেছে। সরকারের লোকেরা ১০ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। মেগা প্রকল্প, বেকার ভাতা, দুস্থ ভাতা চুরি করছে। এখন আর টাকা নেই। রিজার্ভের টাকা গিলে খেয়ে ফেলছে। এমন কোনো খাত নেই যে চুরি করেনি। সব জায়গায় দুর্নীতি আর ঘুস।’
‘দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে’ দাবি করে তিনি বলেন, ‘সরকার ওয়াদা অনুযায়ী কোনো প্রতিশ্রুতি রাখেনি।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি (ওবায়দুল কাদের) যুবলীগের মহাসমাবেশে বলেছেন, তারা গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চান। তার এ কথা শুনে ঘোড়াও হাসে। এ যেন ভূতের মুখে রাম রাম। সরকারের কাছে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা কী? অন্যদের সমাবেশ করতে দেব না, এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র। গুম, খুন ও ভোটাধিকারণ হরণ করে তারাই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছে। ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। খালেদা জিয়া এক রাতের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংসদে পাশ করে পদত্যাগ করেছেন। ওই নির্বাচনে বিএনপি হেরে গেছে। এটা হচ্ছে গণতন্ত্র। আর আওয়ামী লীগ বলে আমি ক্ষমতা ছাড়ব না। আমার সোনার হরিণ চাই-ই চাই। এটা আর হবে না।’
সরকার জনগণ থেকে ‘বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে’ মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘বিরোধীদের হয়রানি করে, মিথ্যা মামলা দেয়। ক্যাসিনো সম্রাট জামিন পায়; কিন্তু খালেদা জিয়া জামিন পান না। যারা লুটতরাজ করেছে তারা যুবলীগের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘অগ্নিসন্ত্রাসের পুরনো কথা সামনে এনে নতুন কৌশল নিয়েছে সরকার। অগ্নিসন্ত্রাসের হোতা তো আওয়ামী লীগ। শাহবাগে গান পাউডার দিয়ে বাসে আগুন দিয়েছে মানুষ হত্যা করেছে। লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ হত্যা করে ওয়ান-ইলেভেন এনেছে।’
বক্তব্যের শেষে ক্ষমতায় গেলে কী করবে বিএনপি- এর কিছু অঙ্গীকার করেন দলটির মহাসচিব। তিনি বলেন, রাষ্ট্র মেরামত করতে বিচার বিভাগে সংস্কার করা হবে। দুর্নীতি বন্ধ করা হবে। দেশে মানবাধিকার ফিরিয়ে আনব।
এর আগে দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১১টায় শুরু হয় কর্মসূচি। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এএফএম কাইয়ুম জঙ্গির সভাপতিত্বে বিএনপির ষষ্ঠ বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক শাহজাদা, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, কেন্দ্রীয় নেতা তাবিথ আওয়াল, খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক, সেলিমুজ্জামান সেলিম, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনিসুর রহমান খোকন তালুকদার, সাবেক এমপি হেলেন জেরিন খান, আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম, শাহ মো. আবু জাফর, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ঈসা, মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, জাসাসের হেলাল খান, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, ওলামা দলের শাহ মো. নেছারুল হক, তাঁতি দলের আবুল কালাম আজাদ, জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেন খান পলাশ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল, জেলা যুবদলের সভাপতি রাজিব হোসেন প্রমুখ।