এম আর আলী টুটুল, সৈয়দপুর(নীলফামারী)প্রতিনিধি : নীলফামারীর সৈয়দপুরে সিনেমা স্টাইলে সহপাঠী কর্তৃক কলেজ ছাত্রীকে প্রাইভেটকার থেকে নামিয়ে রাস্তায় প্রকাশ্য দিনের বেলায় শ্লীলতাহানীর চেষ্টা, বেদম মারপিট ও গাড়ি ভাঙ্চুরের ঘটনায় এক আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গত বুধবার সংঘটিত এই লোমহর্ষক ঘটনার ৩ দিন পর মূল আসামীর সহযোগী মামুন আলমকে (১৯) আটক করা হয়েছে। শনিবার (৬ মে) দুপুর ৩ টায় সৈয়দপুর প্লাজা সুপার মার্কেটের উত্তরের সড়ক থেকে তাকে আটক করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আহসান হাবীব।
গ্রেফতার দ্বিতীয় আসামী মামুন তাদের সহপাঠী ও শহরের নয়াটোলা ডা. কোফ্ফার রোডের শহীদ আলমের ছেলে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা ঘটনার পরই থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও ২ দিন পর গত শুক্রবার (৫ মে) মামলা নথিভুক্ত করা হয়। মামলা নং ৬।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী সৈয়দপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী (১৮)। সে নিয়মিত নিজেদের প্রাইভেট কারে করে দিনাজপুরের পার্বতীপুর শহরের বাসা থেকে কলেজে যাওয়া আসা করে। আর তাকে প্রায় সময় প্রেমের প্রস্তাব দেয়াসহ বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল সহপাঠী জুনায়েদ তৌহিদী। কিন্তু কলেজছাত্রী সহপাঠীর প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়নি। এতে ওই সহপাঠী কলেজছাত্রীকে নানা প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
৩ মে (বুধবার) বেলা তিনটার দিকে কলেজ ছুটির পর ওই ছাত্রী প্রাইভেট কার (ঢাকা মেট্রো-গ-১৪-৯৪৩১) করে পার্বতীপুরের উদ্দেশে রওনা হন। আর তাকে বহনকারী গাড়িটি বেলা সোয়া তিনটার দিকে সৈয়দপুর-পার্বতীপুর সড়কের চেকপোস্ট মোড়ে ব্রিজের কাছে পৌঁছে। এ সময় চারটি মোটরসাইকেলে জুনায়েদ তৌহিদী, মামুন আলমসহ কয়েকজন এসে কলেজছাত্রীকে বহনকারী প্রাইভেট কারের গতিরোধ করে।
এরপর জুনায়েদ তৌহিদী প্রাইভেট কারের পেছনের বাঁ দিকের দরজা লাথি মারে এবং জোরপূর্বক গাড়ির দরজা খুলে টানাহেঁচড়া করে কলেজছাত্রীকে বের করে সড়কে ফেলে দেয়। পরে ছাত্রীকে এলোপাতাড়ি মারধর করাসহ শ্বাস রোধে হত্যার চেষ্টা করে। কলেজ ইউনিফর্ম ছিঁড়ে ফেলে। মামুন ও জুনায়েদ ছাত্রীর পেটে সজোরে একাধিকবার লাথিও মারে।
এ সময় প্রাইভেট কারের চালক মো. শাকিল কলেজছাত্রীকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে অভিযুক্তরা তাকেও কিলঘুষি মারে। কলেজছাত্রী নিজেকে রক্ষার জন্য আবার গাড়িতে উঠতে চেষ্টা করলে জুনায়েদ তৌহিদী পুনরায় তাকে টেনেহেঁচড়া করে বাইরে ফেলে দেয় এবং তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লাথি ও কিলঘুষি মারতে থাকে। এতে কলেজছাত্রীর ডান হাত ভেঙে যাওয়াসহ পুরো শরীরে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
এক পর্যায়ে হামলাকারীরা প্রাইভেট কারটি ভাঙ্চুর করে। এতে প্রায় ৪৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলের পাশেই কলেজ ছাত্রীর ফুফুর বাসায় অবস্থানরত চাচা ও চাচাত ভাই তাকে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তার বাবা বাদী হয়ে জুনায়েদ তৌহিদী ও মামুন আলমের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও পাঁচজনকে আসামি করে সৈয়দপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
তবে গত বৃহস্পতিবার সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে গেলে মেয়েটিসহ কাউকে পাওয়া যায়নি। সাংবাদিকরা দায়িত্বরত নার্সের মোবাইলে ছাত্রীর বাবার সাথে কথা বলতে চাইলেও তিনি কথাও বলেননি। আবার নিজের নাম্বারও দেননি। এমনকি পরবর্তীতে মোবাইলও রিসিভ করেননি। একটি সূত্র মতে প্রভাবশালী এক জনপ্রতিনিধির মধ্যস্ততায় বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা চললেও লেনাদেনার হিসেব না মেলায় সমঝোতা হয়নি।
এ ব্যাপারে জুনায়েদের পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বাড়িতে কাউকেই পাওয়া যায়নি এবং মোবাইলও রিসিভ করেনি। তবে জুনায়েদের চাচাতো ভাই ইমরান তৌহীদি সাংবাদিকদের জানান, ছেলে অপরাধ করেছে। তবে বিষয়টি পারিবারিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে। মূলতঃ মেয়েটি জুনায়েদের গার্লফ্রেন্ডকে ফেসবুকে ডিস্টার্ব করছিল। বার বার নিষেধ করলেও না শোনায় রাগের বশতঃ এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি মামুন আলমকে আজ শনিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করাসহ অন্য আসামিদের গ্রেফতারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
উল্লেখ্য, টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়েছিল জুনায়েদ তৌহীদির পরিবার। যে কারণে মামলা নথিভুক্ত করতে বিলম্ব করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে প্রধান আসামীকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। সেইসাথে তাকেসহ অন্য আসামীদের গ্রেফতার নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন সচেতন মহল। কেননা সেই ধরণের সমঝোতা হয়েছে বলেই তাদের ধারণা। এদিকে প্রকাশ্যে দিনে দুপুরে ব্যস্ততম একটি সড়কে এবং সেনানিবাসের প্রধান গেটের সামান্য দূরে কিশোর গ্যাংয়ের মত সন্ত্রাসী কায়দায় এমন ভয়ংকর ঘটনা ঘটায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
বিপি>আর এল