গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোশাহেদ হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে রাস্তার পাশের গাছ কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কয়েকজন ব্যক্তি।
এদিকে, এসব কাটা গাছ জব্দের ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও দায়ের হয়নি কোন মামলা। লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, প্রায় ১০ বছর আগে শ্যামপুর গ্রামের রাস্তা থেকে কোচমুড়ি গ্রাম পর্যন্ত ১ কিলোমিটার রাস্তায় প্রায় ৪০০ ইউক্যালিপটাস গাছ লাগান মো. হানিফা ও রুহুল আমিনসহ ১৩ জন। বর্তমানে এসব গাছের মূল্য ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা।
এসব গাছ কামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী) ও তার সহযোগী কাঠ ব্যবসায়ী জিলান চৌধুরী গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি (টেন্ডার) ছাড়াই ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে গাছগুলি কেটে ফেলেন। গাছগুলো কাটার সময় সাধারণ জনগণ বাঁধা দিতে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। চেয়ারম্যানের ভয়ভীতি দেখানো হয় ও এসব বিষয়ে কেউ যেন নাক না গলায় বলে শাসানো হয়। স্থানীয় (গাইবান্ধা-৪ গোবিন্দগঞ্জ আসন) সংসদ সদস্য চেয়ারম্যানের আপন বড় ভাই হওয়ার সুবাদে তিনি এসব অপকর্ম বিনা দ্বিধায় করেন। রাষ্ট্রের এসব সম্পদ অবৈধভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টায় লিপ্ত।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক বিচারের দাবি জানানো হয় ওই অভিযোগে। কিন্তু নিয়মানুযায়ী, দরপত্র আহবান এবং বন বিভাগের অনুমতি নেওয়ার পরই গাছগুলো কাটার কথা। গাছগুলো বড় হওয়ার পর বিক্রির টাকা সমিতি (যারা গাছ লাগিয়েছেন) পাবে ৬০ শতাংশ, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ পাবে ৩০ শতাংশ আর বাকি ১০ শতাংশ পাবেন গাছের কারণে রাস্তার পাশের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মালিকেরা। একই দিন জেলা প্রশাসককে দেওয়া আরেকটি অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, কামদিয়া দারুল উলুম সিদ্দিকীয়া আলিম মাদরাসার সভাপতিও ইউপি চেয়ারম্যান মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী। মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী ও মাদরাসার সুপার মো. শাহজাহান এর নির্দেশে গত ২৮ জানুয়ারি মাদরাসা প্রাঙ্গনে থাকা ৮ থেকে ১০টি পুরাতন মেহগনি গাছ এবং পুরাতন ৫ থেকে ৭টি ইউ গাছ টেন্ডার ছাড়াই কাটা হয়। যার মূল্য প্রায় দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এই গাছ বিক্রির সহযোগিও জিলান চৌধুরী। এই অভিযোগে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয় জেলা প্রশাসকের কাছে। এদিকে, রাস্তার এসব গাছ বিক্রির সময় গত ১১ ফেব্রুয়ারি শ্যামপুর গ্রাম থেকে ট্রাকসহ গাছগুলো জব্দ করে পুলিশ। এসময় ট্রাকের চালক, তার সহকারি এবং দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে ট্রাকসহ জব্দকৃত গাছ বৈরাগীরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নেওয়া হয়।
এসব গাছ রোপণকারী মো. হানিফা ও রুহুল আমিনসহ কয়েকজন বলেন, আমরা মৌখিকভাবে তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যানের অনুমতি নিয়ে গাছগুলো লাগাই। এখন গাছগুলো কাটার সময় হয়েছে। কিন্তু চুক্তিনামা না থাকার বিষয়টি সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী জানতে পারেন। তাই সুযোগ পেয়ে আমাদেরকে না জানিয়ে তিনি দেড় শতাধিক গাছ কেটে বিক্রি করে দেন। গোবিন্দগঞ্জ বন বিভাগের ফরেষ্টার মিজানুর রহমান বলেন, কামদিয়া ইউনিয়নের গাছ কাটার বিষয়ে কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কামদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোশাহেদ হোসেন চৌধুরী গাছ বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো অংশিদারিত্ব গাছ, সরকারি বা খাস জায়গার নয়। দরপত্র আহবান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দরপত্র প্রক্রিয়া করতে গেলে খাজনার চেয়ে বাজনাই বেশি হবে। এর বেশি কিছু বলতে রাজি হননি তিনি। একই বিষয়ে বৈরাগীরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক মিলন কুমার চ্যাটার্জি বলেন, এই ঘটনায় কেউ অভিযোগ দেননি।
বিষয়টি গোবিন্দগঞ্জের ইউএনওকে জানানো হয়েছে। এসব বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
বিপি/কেজে