গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধা পৌরসভার গোবিন্দপুর মৌজায় জমি দলিলের সময় সরকারি ফি কম দেওয়ার জন্য বাণিজ্যিক ভবন থাকার পরও স্থাপনা নেই দেখিয়ে কম দামে জমি দলিল করার অভিযোগ উঠেছে গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। দলিলে দেড় কোটি টাকার বেশি সম্পদ মাত্র ৬০ লাখ টাকায় বিক্রি দেখানো হয়েছে। এতে করে সরকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ বিষয়ে গত রোববার (১০ এপ্রিল) গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গাইবান্ধা পৌরসভার গোবিন্দপুর মৌজায় ভিএইড রোডের সাথেই একটি জমি দলিলের সময় সরকারি ফি কম দেওয়ার জন্য বাণিজ্যিক ভবন থাকার পরও স্থাপনা নেই দেখিয়ে কম দামে জমি দলিল করা হয়েছে। কিন্তু সর্বশেষ গাইবান্ধা সদর পৌর এলাকাধীন শ্রেণিভেদে গোবিন্দপুর মৌজায় প্রতি শতক জমির সর্বনিম্ন বাজার মূল্য অনুযায়ী সাড়ে ১২ শতাংশ জমির বাণিজ্যিকের দাম পড়ে এক কোটি ৫৭ লাখ ৩৭ হাজার ৮২৫ টাকা। অথচ সেখানে জমি দলিলে বাস্তু স্থাপনা নেই দেখিয়ে ৬০ লাখ টাকায় দলিল করা হয়েছে। অথচ সেখানে একটি ভবন রয়েছে। যার প্রমাণ দলিলেই উল্লেখ রয়েছে। দলিলের ১১ নম্বর ক্রমিকে সম্পত্তির তফশিলে লেখা রয়েছে, সাড়ে ১২ শতাংশ জমি এবং তদউপরিস্থিত দন্ডায়মান পাকা স্থাপনাসহ বিক্রিত রহিল। এই জমিটি ভিএইড রোডের পাশেই ও সেখানে একটি দ্বিতল বিশিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর এই দলিল সম্পাদন করা হয়েছে গত বছরের ২২ নভেম্বর। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, জমিটি বিক্রি করেছেন গাইবান্ধা পৌরসভার মুন্সিপাড়া এলাকার তৌহিদ আমিন বুলবুল ও সেরিনা বুলবুল ওরফে শিরিনা বুলবুল।
কিনেছেন গাইবান্ধা পৌরসভার মহুরীপাড়া এলাকার মো. শরিফুল ইসলাম ও মোছা. রোকাইয়া ইসলাম। দলিল লিখেছেন মো. সিরাজুল ইসলাম মিথেন। দলিল পাশ করেছেন গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মো. রজব আলী। জমি দলিলের সময় সরকারি ফি বাবদ সাড়ে ৮ শতাংশ টাকা হিসাবে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা জমা নেন সাব রেজিস্ট্রার। তারপর সেই টাকা চলে যায় সরকারি কোষাগারে। প্রকৃতপক্ষে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭১৫ টাকা সরকারি খাতে জমা হবার কথা। কিন্তু এখানে তথ্য গোপন করে জমি দলিলে কম টাকা ওঠানোয় সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে ৮ লাখ ২৭ হাজার ৭১৫ টাকা। এ ছাড়াও বেশি টাকার জমি অল্প দামে বিক্রি করা এবং স্থাপনা থাকার পরও তা দলিলে না উঠিয়ে দলিল সম্পাদন করার বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানানো হয় ওই অভিযোগে। বিক্রেতা জমিটির সাবেক মালিক মুন্সিপাড়ার তৌহিদ আমিনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি দেশের বাইরে থাকেন। তবে অভিযোগকারিরা জানান, সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিসের একটি চক্র তথ্য গোপন করে এবং সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ফায়দা লুটেছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু এখনো তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জমির ক্রেতা ও বর্তমান মালিক মহুরীপাড়া এলাকার মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী সঠিক দামে জমি কেনা হয়েছে। দলিলের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ভ্যাট-ট্যাক্স ও রাজস্ব পেয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়নি। দলিলে কম মূল্য তোলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দালালের মাধ্যমে জমি কেনাবেচা হয়। জমি কেনাবেচার সময় অনেক দালাল কাজ করে। তারাই হয়তো এমনটা করেছেন। দলিলে স্থাপনা না দেখানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জমিতে পুরোনো একটি বিল্ডিং ছিল। সেটি আগেই আলাদাভাবে দলিল করে নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার মো. রজব আলী মন্ডল বলেন, প্রতিদিন অনেক দলিল সম্পাদন হয়ে থাকে। খোঁজ না নিয়ে কিছু বলা যাবে না। দলিল নম্বর দেন, খোঁজ নিয়ে ফোন করে জানাবো। পরে তার মুঠোফোনে দলিলের নম্বর, ক্রেতা ও বিক্রেতার নাম ক্ষুদে বার্তায় পাঠানো হয়। এরপর তিনি ফোন করেননি। এ বিষয়ে গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. অলিউর রহমান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিপি/কেজে