তৌফিক ইসলাম: পুরুষ দিবসের ধারণা প্রথম ১৯৯২ সালে Trinidad and Tobago এর সিভিল সোসাইটি এবং পলিটিক্যাল লিডারদের মাধ্যমে উদ্ভূত হয়। তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে এটি ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হতে শুরু করে, যখন এই দিবসটির মূল উদ্দেশ্য ছিল পুরুষদের স্বাস্থ্য এবং সামাজিক দায়িত্বের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা। এর পর থেকে, প্রতি বছর ১৯ নভেম্বর পুরুষদের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ দিবসটি পালিত হয়।
পুরুষ দিবসের উদযাপনের মূল লক্ষ্য হল:
পুরুষদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি: পুরুষদের মধ্যে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা, যেমন ডিপ্রেশন, হৃদরোগ, আত্মহত্যার প্রবণতা ইত্যাদি সচেতনতা বৃদ্ধি করে। এই দিবসে পুরুষদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয়।
পুরুষদের সামাজিক ভূমিকা: পুরুষরা সমাজে নানা ধরনের ভূমিকায় আবদ্ধ থাকে, যেমন পিতা, স্বামী, পেশাগত ব্যক্তি, বন্ধু, এবং এসব ভূমিকায় তাদের সম্পর্কের গুরুত্ব এবং ব্যক্তিগত সমৃদ্ধির বিষয়টি আলোচিত হয়।
মিথ্যা ধারণা ও স্টিরিওটাইপিং-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ: বহু ক্ষেত্রে পুরুষদের নিয়ে নানা ধরনের সামাজিক মিথ্যা ধারণা বা স্টিরিওটাইপ থাকে, যেমন ‘পুরুষরা আবেগ অনুভব করতে পারে না’ বা ‘পুরুষরা সবসময় শক্ত হতে হবে’। পুরুষ দিবস এসব স্টিরিওটাইপের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলে।
পুরুষদের আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক সমস্যা: যেমন কর্মস্থলে বৈষম্য, সামাজিক অবমূল্যায়ন, পারিবারিক সহিংসতা, এবং অন্য আরও বেশ কিছু সমস্যা যা পুরুষরা মুখোশে আড়াল করে রাখে। পুরুষ দিবস এসব সমস্যা নিয়ে সমাজে আলোচনা তৈরি করে।
পুরুষদের উন্নত ভূমিকা পালন: পুরুষ দিবস পুরুষদের শক্তি ও সম্ভাবনার প্রতি উদ্দীপনা তৈরি করতে সহায়তা করে যাতে তারা সমাজে আরও কার্যকরভাবে অবদান রাখতে পারেন।
প্রতি বছর পুরুষ দিবসের জন্য একটি নির্দিষ্ট থিম বা বিষয়বস্তু নির্ধারণ করা হয়। এই থিমগুলি সাধারণত পুরুষদের সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক, মানসিক ও শারীরিক সমস্যা তুলে ধরে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের থিম ছিল "মেন ইউন্ডার স্ট্রেস" (Men Under Stress), যা পুরুষদের মানসিক চাপ ও উদ্বেগ মোকাবিলার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছিল।
পুরুষ দিবস পালনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে সেমিনার, কর্মশালা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক কর্মসূচি এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা কর্মসূচি থাকে। বিশেষত স্কুল ও কলেজগুলিতে পুরুষ দিবস উদযাপন করা হয়, যাতে তরুণরা পুরুষদের স্বাস্থ্য, সম্পর্ক এবং সামাজিক দায়িত্বের ব্যাপারে সচেতন হতে পারে।
পুরুষ দিবসের উদযাপন সত্ত্বেও পুরুষদের নিয়ে এখনও অনেক বাধা ও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। পুরুষরা এখনও অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করতে সংকোচ অনুভব করেন, এবং সমাজে ‘পুরুষত্ব’ নিয়ে নানা ধরনের চাপ থাকে। তবে, পুরুষ দিবসের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো নিয়ে সরাসরি আলোচনা শুরু হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি মানসিক স্বাস্থ্য ও সমতার দিক দিয়ে উন্নতি আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পুরুষ দিবস একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিবস, যা পুরুষদের সমাজে তাদের মূল্য ও ভূমিকা নিয়ে আলোচনা এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করে। এটি পুরুষদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সম্পর্ক, এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা নিয়ে আরও খোলামেলা ও গভীর আলোচনা তৈরি করার একটি সুযোগ। বর্তমান সমাজে পুরুষদের বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে এ দিবসটি আমাদের আরও সুস্থ, সুখী এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে অবদান রাখতে সহায়তা করবে।
বিপি/টিআই
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]