১৩ অক্টোবর ২০২৫

বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার হচ্ছে মাছের ডিম ক্যাভিয়ার

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৩২ পিএম
বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার হচ্ছে মাছের ডিম ক্যাভিয়ার

বাংলাপ্রেস ডেস্ক:   এ মুহূর্তে দেশে ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ। কারণ এ সময় মা ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ে। মা ইলিশের নিরাপদ প্রজনন নিশ্চিত করতে সরকার ইতোমধ্যে ৩ অক্টোবর দিবাগত মধ্যরাত থেকে সারা দেশে ইলিশ শিকার, সংরক্ষণ ও পরিবহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এ নিষেধাজ্ঞা আগামী ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। বিজ্ঞানভিত্তিক প্রজনন সময় বিবেচনা করে ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।

 

সে জন্য ইলিশ রক্ষায় মাছ ধরা বন্ধ। যে ডিম রক্ষার জন্য এত কিছু, সেই মাছের ডিম নিয়েই কথা বলছি। যদিও বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ। কিন্তু আমি ইলিশের ডিম নিয়ে নয়, বরং বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার নিয়ে কথা বলছে। সেখানেও মাছের ডিম নিয়ে কথা। 

আর সেই মাছ হচ্ছে বেলুগা স্টারজন (Beluga Sturgeon)। এই মাছ থেকে পাওয়া বিখ্যাত ক্যাভিয়ার নিয়ে, যাকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু ও বিলাসবহুল খাবার। এই মাছের ডিমগুলো দেখতে অনেকটা ছোট্ট পুঁতির দানার মতো। কিন্তু এদের দাম সোনা কিংবা হীরার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। 

আর মাছের ডিম ক্যাভিয়ার কীভাবে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার হয়ে উঠল? আর বিশ্বের সবচেয়ে দামি খাবার হিসেবে ক্যাভিয়ারের স্থান পাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে— সীমিত জোগান ও দুষ্প্রাপ্যতা।। ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ক্যাভিয়ার সংগ্রহ করা একটি মুক্তবাজারে পরিণত হয়। ফলে অতিরিক্ত মাছ ধরা শুরু হয়। অতিরিক্ত মাছ ধরা, নদীর দূষণ ও বাঁধ নির্মাণের কারণে ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে স্টারজন মাছ ধরার পরিমাণ ৭০ শতাংশ কমে যায়। পরিবেশগত ক্ষতি ও অবৈধ ব্যবসার ফলে স্টারজন মাছ এখন বিপন্ন। 

ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের তথ্যমতে, এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বিপন্ন প্রজাতিগুলোর অন্যতম। এই চরম দুর্লভতাই ক্যাভিয়ারের দাম আকাশছোঁয়া করে তুলেছে।

বিশ্বে প্রধানত চার ধরনের ক্যাভিয়ার পাওয়া যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো বেলুগা ক্যাভিয়ার, যা আসে কাস্পিয়ান সাগরের বেলুগা স্টারজন থেকে। এটি সাধারণত ধূসর বা গাঢ় রঙের হয়। এর স্বাদ হয় তীব্র ও গাঢ়। এরপর রয়েছে ওসেট্রা ক্যাভিয়ার, যা বাদামি বা সোনালি রঙের হয় এবং এর মধ্যে একটি বিশেষ লবণাক্ত, যাতে সমুদ্রের স্বাদ পাওয়া যায়। 

তৃতীয়টি হলো সেভরুগা ক্যাভিয়ার, যা সেভরুগা, স্টারলেট ও সাইবেরিয়ান স্টারজন মাছের ডিম থেকে আসে। এ ডিম তুলনামূলক ছোট হলেও এর স্বাদ হয় মাখনের মতো। সবশেষে লেক স্টারজন। বন্য আটলান্টিক স্টারজন ও সাদা স্টারজন মাছ থেকে পাওয়া যায় আমেরিকান ক্যাভিয়ার, যার স্বাদ হয় তাজা ও লবণাক্ত।

ক্যাভিয়ার হলো— এক ধরনের ফিশ রো বা মাছের ডিম। যদিও বিভিন্ন মাছের ডিমকে রো বলা হয়, কিন্তু প্রকৃত ক্যাভিয়ার আসে কেবল স্টারজন মাছের ডিম থেকে পাওয়া যায়। দাম কম হওয়ার কারণে বাজারে অন্যান্য মাছের ডিমও ক্যাভিয়ারের বিকল্প হিসেবে চলে। ফ্লাইং ফিশ থেকে আসে টোবিকো রো। স্মেল্ট নামের ছোট মাছ থেকে আসে মাসাগো রো। আর স্যামন মাছের ডিমকে বলা হয় ইকুরা বা লাল ক্যাভিয়ার। এগুলো ক্যাভিয়ারের বিকল্প হিসেবে চললেও, দাম ও স্বাদের দিক থেকে স্টারজন ক্যাভিয়ারই শ্রেষ্ঠ।

বিশ্বে সুস্বাদু ও বিলাসবহুল খাবার হিসেবে পরিচিত ক্যাভিয়ার নিষিক্ত না হওয়া মাছের ডিম, যার স্বাদ লবণাক্ত। তবে সব মাছের নিষিক্ত না হওয়া ডিম ক্যাভিয়ার নয়।  মার্কিন খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসনের (FDA) তথ্য অনুসারে, প্রকৃত ক্যাভিয়ার কেবল স্টারজন (Sturgeon) মাছের ডিম থেকে আসে। এই মাছ সাধারণত রাশিয়া, ইউক্রেন ও উত্তর আমেরিকার সাগরে পাওয়া যায়।

স্টারজন মাছের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো— এদের ডিম উৎপাদনের ক্ষমতা। একটি স্টারজন মাছ একসঙ্গে কয়েক মিলিয়ন ডিম ছাড়তে পারে। এরা প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন জলাশয়ে বড় হয়। তবে বর্তমানে ডিমের চাহিদার কারণে এদের মাছের খামারেও বিশেষভাবে উৎপাদন করা হচ্ছে। বেলুগা স্টারজনের মতো কিছু প্রজাতি প্রায় ১৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে।

বিপি>টিডি

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন