বাংলাপ্রেস ডেস্ক: গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার প্রচলন নতুন নয়। একটা সময় যখন চিকিৎসাসেবা এতটা সহজলভ্য ছিল না, তখনো গর্ভবতী নারীদের খেজুর খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এর বড় কারণ হলো, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খেলে লেবার পেইন অনেকটা কম হয়।
এটি কোনো মনগড়া কথা নয়, বরং অনেকগুলো গবেষণা শেষে এমন তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকরা।গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে তা ইউটেরাসের সংবেদনশীলতা কমিয়ে তাকে শক্তিশালী করে। এতে প্রসব ব্যথা অনেকটাই কম হয়।এ ছাড়া খেজুরে থাকা ফ্রুক্টোজ দ্রুত ভেঙে যায় এবং কারো রক্তে শর্করার মাত্রা পরিবর্তন না করে তাৎক্ষণিক শক্তি সরবরাহ করে। গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া ভালো, কারণ এতে ল্যাক্সেটিভ জরায়ুর সংকোচনে সহায়তা করে এবং এটি সংক্ষিপ্ত করে প্রসব বেদনাকে সহজ করে।এই বিষয়ে ফেমিনা ডটইন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পুষ্টিবিদ, খাদ্য ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ এবং নিউট্রিসি লাইফস্টাইলয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডা. রহিনি পাতিল বলেন, গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। তবে ডায়াবেটিস থাকলে খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। কেননা এটি উচ্চ শর্করাযুক্ত।
গবেষণা কী বলছে
আমেরিকার ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থার পঁয়ত্রিশ সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ছয়টি করে খেজুর খেলে, তা মা ও অনাগত শিশুর জন্য বেশ উপকারী হয়।সেইসঙ্গে সন্তান জন্ম দেওয়াও অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
গবেষণায় তারা দেখেছেন, যেসব নারী গর্ভাবস্থায় খেজুর খেয়েছেন তাদের সার্ভিক্স অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল ছিল। যে কারণে সন্তান প্রসব করা অনেক সহজ ছিল। খেজুর খেলে তা লেবারের সময়ও কমিয়ে দেয়, ফলে মাকে কষ্ট কম পেতে হয়।
গর্ভাবস্থায় খেজুরের উপকারিতা
বাড়তি শক্তি যোগ করে
সন্তান প্রসবের আগে ও প্রসবের সময় একজন নারীর অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়।সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য প্রয়োজন পড়ে অতিরিক্ত শক্তির। খেজুরে থাকে অনেক বেশি নিউট্রিয়েন্টস। যে কারণে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খেলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে বাড়ে শক্তির মাত্রা। সেজন্য প্রসবের সময় বাড়তি শক্তির জোগান সে সহজেই দিতে পারে।
কার্বোহাইড্রেটস
খেজুরে থাকে প্রচুর কার্বোহাইড্রেটস। এ ছাড়া থাকে ফ্রুক্টোজ ও সুক্রোজ, যা শরীরে শক্তি জোগায়। এ ছাড়া এই ফলে গ্লুকোজও থাকে পর্যাপ্ত, যা গর্ভাবস্থায় ধরে রাখা খুব বেশি জরুরি। তাই গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খাওয়ার বিকল্প নেই।
প্রসবপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক করে
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এসে প্রতিদিন ৬০-৮০ গ্রাম খেজুর খেলে সার্ভিক্স মজবুত হয়। এর ফলে কৃত্রিমভাবে কিংবা ওষুধ দিয়ে প্রসব ব্যথা সৃষ্টি করার দরকার হয় না। এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই ঘটে থাকে।
দ্রুত রক্ত উৎপাদন করে
সন্তান প্রসবের সময় শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে যায়। এর ফলে মায়ের শরীর দুর্বল হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পরে নিয়ম করে খেজুর খেলে তা শরীরে দ্রুত রক্ত উৎপাদন করে। এতে মা তার হারানো শক্তি বেশ দ্রুত ফিরে পান।
কমায় প্রসব বেদনা
খেজুরে থাকে উপকারী ফ্যাটি এসিড। এই উপাদান প্রসবের সময়ে সারভাইক্যাল মাসল ফেলিক্সিবল করে ও কমনীয় করে তোলে। যে কারণে প্রসব বেদনা অনেকটাই কম অনুভূত হয়।
পুষ্টিতে ভরপুর
খেজুর অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান যেমন—আঁশ, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ ও ভিটামিন যেমন—ফোলেইট, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ। এগুলো মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের বৃদ্ধির জন্য উপকারী। উচ্চ আঁশসমৃদ্ধ খেজুর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গর্ভাবস্থায় এটা একটা সাধারণ সমস্যা। আঁশ পেট পরিষ্কার করতে এবং হজম ক্রিয়া উন্নত করতে সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
খেজুর উচ্চ পটাশিয়ামসমৃদ্ধ, যা রক্তচাপ উন্নত করে। গর্ভাবস্থায় যেসব মায়ের রক্তচাপের সমস্যা দেখা দেয় তাদের জন্য এটা বিশেষ উপকারী।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান
খেজুর উচ্চ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফ্লাভানয়েড ও ফেনোলিক যৌগ সমৃদ্ধ, যা ফ্রি রেডিকেলের কারণে হওয়া কোষের ক্ষয় কমাতে সহায়তা করে। এসব অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট মায়ের গর্ভাবস্থায় সার্বিক সুস্থতায় ভূমিকা রাখে।তাই গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুকে সুস্থ রাখতে এবং নিরাপদ প্রসবের জন্য খেজুর খাওয়ানো যেতেই পারে। তবে ডায়াবেটিস থাকলে খাওয়ানোর আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি>টিডি
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]