
লালমনিরহাটের আকাশে-বাতাসে শুধু নিকোটিন


মামুনুর রশিদ (মিঠু),লালমনিরহাট থেকে : লালমনিরহাটের আকাশে-বাতাসে শুধু নিকোটিন, আর এই নিকোটিনের প্রভাব পরছে কমলমতি শিশুদের উপর। ভারত সীমান্ত ঘেঁসা লালমনিরহাট জেলা। জেলা সদর সহ ৫ টি উপজেলায় গ্রামিন মেঠো পথ,মাঠ-ঘাট,পুকুরপার,বাঁশ ঝার,মহা-সড়ক এমনকি বাদ পরেনি শিশুদের স্কুলের খেলার মাঠ পর্যন্ত, সব জায়গায় এখন তামাক আর তামাক। তামাকে রয়েছে প্রচুর পরিমানে নিকোটিন।
তামাকের রাজ্য খ্যাত লালমনিরহাটে এখন তামাক সুকানোর মৌসুম। কৃষকরা ব্যাস্ত সময় পার করছে তামাক শুকাতে। আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুরের ১০ বছরের আলআমিন, তারো তামাক সুকানোর ব্যাস্ততায় স্কুল যাওয়া হয়নি। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্ন বারের তুলনায় এবার জেলায় তামাক আবাদ হয়েছে তুলনামুলক বেশি। বিন্তু তামাক সুকানোর যায়গা ঠিক আগের মতোই সংকুচিত। যার ফলে তামাক দ্রুত বাজারজাত করনের লক্ষ্যে কৃষকেরা যেখানে খুশি যত্র-তত্র তামাক শুকোচ্ছে নির্দিধায়। বাধা করবারো কেউ নেই। সদর উপজেলার গকুন্ডা, খুনিয়াগাছ, পঞ্চগ্রাম,বড়বাড়ি ও আদিতমাড়ি উপজেলার সাপ্টিবাড়ি,মহিসখোচা,মোগলহাট,দুর্গাপুর সহ ৫ উপজেলার প্রত্যান্ত গ্রাম গুলোতে মাইলের পর মাইল তামাক রোদে শুকোতে দেওয়া হয়েছে রাস্তার দুপাশেই।
স্কুল সুরু ও ছুটির সময় রাস্তাগুলোতে কমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের সাথে দেখা হলে, তামাকের গন্ধ কেমন লাগে এবং কোন সমস্যা হয় কিনা যানতে চাইলে বেস কজন শিক্ষার্থী ঠিক একই ভাবে বলে, সকালে ঘুম থেকে উঠেই আমাদের চোখে পরে তামাক কারন,আমাদের থাকার ঘরেও তামাক রাখা হয়েছে। আর বাড়ির আশ-পাশ ও রাস্তা-ঘাটেতো তামাক রয়েছেই। তামাকের গন্ধ কেমন লাগে যানতে চাইলে সবাই বলে গন্ধটার সাটারি (ঝাঁজালো) নাকে গেলে কেমন বমি ভাব হয়। কেউ বলে ৩ কিলোমিটার পথ বাইসাইকেল চালিয়ে স্কুলে যেতে হয়। যাওয়ার সময় দূরগন্ধটা একাধারে অনেকক্ষন নিশ্বাসের সাথে শরীরের ভেতরে প্রবেশ করায় যখন স্কুলে গিয়ে পৌঁছি তখন আর ক্লাস করার ইচ্ছে হয়না। মনে হয় মাথাটা ঘুরছে। পড়ায় মন বসেনা। এ বিষয়ে কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বললে তারা বলেন, আমরা কৃষক মানুষ আমাদের যে ফসলে বেশি লাভ হবে আমরা সেই ফসল আবাদ করব। তামাক আবাদ করার জন্যে বিভিন্য কম্পানী আমাদের ঋন সরুপ টাকা দেয়, সার দেয় আর তামাকের বদলে ভালো টাকাও পাই তাই তামাক চাষ করি।
যত্র-তত্র তামাক শুকাতে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষকেরা বলেন, আমাদের কেউ এ পর্যন্ত বাধা দেয়নাই তাই রাস্তা-ঘাট, খেলার মাঠ যেখানে ফাঁকা পাই সেখানেই তামাক শুকাতে দেই। চেয়ারম্যান,মেম্বার বাধা করলে দিতামনা।
সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকায় চোখে পরলো ষাটউর্ধ এক আইসক্রিম ব্যাবসায়ীর মাইকে বাজছে “ আমিতো বালানা বালা লইয়াই থাইকো” এমন গান আর ৭-৮ বছর বয়সি মুতাচ্ছির দৌড়ে এসে হাতে থাকা ৪-৫টি আধা শুকনো তামাক পাতা আইসক্রিম বিক্রেতার হাতে তুলে দিতেই বিক্রেত মুতাচ্ছিরের হাতে ৫ টাকা মল্যের একটি আইসক্রিম তুলে দিল। এতেকরে মুতাচ্ছিরের স্বাস্থের কি কোন ক্ষতি হবে?
যত্র-তত্র তামাক শুকানো ও নারাচারার ফলে মানুষ কি ধরনের স্বাস্থ ঝুঁকিতে পরতে পারে যানতে চাইলে লালমনিরহাট সদর-উপজেলা স্বাস্থ কর্মকর্তা ডা: নবীউর রহমান জানান, তামাকে রয়েছে নিকোটিন যা মানবদেহের অপুরোনিয় ক্ষতি করে। তবে শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধরা বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হয় কারন তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম। তাই তামাক যেখানে সেখানে রোদে না শুকিয়ে নির্ধারীত স্থানে শুকানোর ব্যাবস্থা করা দরকার। বিপি/আর এল
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন





