১৩ অক্টোবর ২০২৫

মন নাকি হরমোন, একাকিত্বের পেছনে লুকিয়ে আছে কোনটি?

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
মন নাকি হরমোন, একাকিত্বের পেছনে লুকিয়ে আছে কোনটি?
বাংলাপ্রেস ডেস্ক:  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুঁ মারলেই দেখা যায় হাজারো বন্ধুর ভিড়ে ঠাসা, কয়েকদিন পরপর পার্টি বা অফিসের জমজমাট আড্ডা—আপাতদৃষ্টিতে দেখলে মনে হয় সবই ঠিক আছে। কিন্তু চার দেয়ালের মধ্যে ফিরলেই একরাশ শূন্যতা গ্রাস করে। অনেকের সঙ্গেই কথা বলার পরেও মনে হয়, ভেতরের কথা বোঝার মতো কেউ নেই। এই অনুভূতি নিছকই মনের ভুল বা সাময়িক বিষণ্নতা নয়।আধুনিক গবেষণা বলছে, এই লাগাতার একাকিত্বের নেপথ্যে থাকতে পারে শরীরের একাধিক হরমোনের জটিল খেলা।এতদিন একাকিত্বকে মূলত সামাজিক ও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা হিসেবেই দেখা হতো। কিন্তু মনোবিদ ও হরমোন বিশেষজ্ঞরা একমত হয়েছেন যে এর নেপথ্যে শারীরবৃত্তীয় কারণও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের আবেগ, অনুভূতি ও সামাজিক আচরণের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকটি বিশেষ হরমোন।এদের ভারসাম্য বিগড়ে গেলেই মানসিক স্থিতিতে তার প্রভাব পড়ে। কোন কোন হরমোন দায়ী অক্সিটোসিন এই হরমোনকে ‘লাভ হরমোন’ বা ‘বন্ডিং হরমোন’ বলা হয়। প্রিয়জনের সঙ্গে কথা বললে, কাউকে জড়িয়ে ধরলে বা আন্তরিক সামাজিক আদানপ্রদানে শরীরে এর ক্ষরণ বাড়ে। অক্সিটোসিন আমাদের মধ্যে বিশ্বাস, সহানুভূতি ও সংযোগের অনুভূতি তৈরি করে।যখন আমাদের জীবনে সামাজিক সংযোগ কমে যায়, তখন অক্সিটোসিনের মাত্রা কমতে থাকে, যা আমাদের আরো বেশি একা করে তোলে। কর্টিসল এই স্ট্রেস হরমোন দীর্ঘস্থায়ী একাকিত্বের কারণে শরীরে কর্টিসলের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে উদ্বেগ, বিরক্তি ও মানসিক চাপ বাড়ে। মজার বিষয় হলো, এটি একটি চক্রের মতো কাজ করে। একাকিত্বের কারণে কর্টিসল বাড়ে, আবার কর্টিসলের বাড়াবাড়ি আমাদের সামাজিক মেলামেশা থেকে আরো দূরে সরিয়ে দেয়। সেরোটোনিন ও ডোপামিন এগুলো ‘ফিল-গুড’ হরমোন নামে পরিচিত। সেরোটোনিন আমাদের মেজাজ ভালো রাখে, আর ডোপামিন আনন্দের অনুভূতি জোগায়। ইতিবাচক সামাজিক অভিজ্ঞতা (যেমন- বন্ধুর প্রশংসা পাওয়া বা কারো সঙ্গে প্রাণ খুলে হাসা) এই হরমোনগুলোর ক্ষরণ বাড়ায়। একাকিত্বে ভুগলে এই হরমোনগুলোর মাত্রা কমে যায়, ফলে জীবনে আনন্দের অভাব ও শূন্যতাবোধ তৈরি হয়। উপায় কী হরমোন বিশেষজ্ঞদের মতে, একাকিত্বকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। এটি যে শুধু মানসিক কষ্ট দেয় তাই নয়, দীর্ঘমেয়াদে শরীরের ওপরও তার ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। তাই এর মোকাবেলা করতে হলে মন ও শরীর—দুইয়েরই যত্ন নিতে হবে। বাস্তব জগতে সংযোগ বাড়ান ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুদের চেয়ে বাস্তব জীবনে একজন বা দুজন আন্তরিক বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটানো অনেক বেশি উপকারী। প্রয়োজনে ফোনে কথা বলুন, দেখা করুন। শরীরচর্চা করুন নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্ট্রেস হরমোন কমে এবং সেরোটোনিন ও এন্ডরফিনের মতো ‘হ্যাপি হরমোন’ বাড়ে। শারীরিক স্পর্শ পরিবার বা খুব কাছের বন্ধুদের আলিঙ্গন করুন। এতে অক্সিটোসিন বাড়ে। পোষ্যর সঙ্গে খেলা করলেও অক্সিটোসিন বাড়ে। নতুন কিছু শিখুন কোনো সৃজনশীল কাজ বা কর্মশালায় যোগ দিন। নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হলে একাকিত্ব কাটে এবং ডোপামিন ক্ষরণ বাড়ে।মনে রাখতে হবে, একাকিত্ব একটি জটিল শারীরিক ও মানসিক অবস্থা। তাই নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে এই চক্র থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। [বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি>টিডি
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন