
পোষা প্রাণী কি বাড়ায় মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা?


বাংলাপ্রেস ডেস্ক: পোষা প্রাণীর উপস্থিতি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এটা অ্যালার্জি, একজিমা বা চুলকানি এবং এমনকি থাইরয়েড সংক্রান্ত রোগ, টাইপ ওয়ান ডায়বেটিসের মতো অটোইমিউনো ডিজিজের ঝুঁকিও কমিয়ে দিতে পারে বলে গবেষকরা দাবি করছেন।
এই প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে আমিশ সম্প্রদায়ের মতো সম্প্রদায়ের কথাও উল্লেখ করা দরকার।
অষ্টাদশ শতকে মধ্য ইউরোপ থেকে উত্তর আমেরিকায় চলে আসা আমিশরা তাদের অনন্য জীবনযাত্রার জন্য আজও পরিচিত। এই স্পম্প্রদায়ের মানুষ ঐতিহ্যবাহীভাবে সাদামাটা জীবন যাপন করেন।
তারা দুধ উৎপাদনের জন্য গবাদি পশুর লালন-পালন করেন, ঘোড়ায় টানা গাড়ি ব্যবহার করেন- ঠিক যেমনটা বহু শতাব্দী ধরে তাদের পূর্বপুরুষরা করে এসেছে। পরিবার এবং কমিউনিটিকে প্রাধান্য দিতে তারা আধুনিক প্রযুক্তির দিকে তেমন মনোনিবেশ না করে পূর্বপুরুষদের জীবনযাত্রাকেই অনুসরণ করেন।
তাদের জীবনযাত্রা অনেকের নজর কেড়েছে। গত কয়েক দশক ধরে হলিউডের চিত্রনাট্যকার, ডকুমেন্টারি নির্মাতা এবং সমাজবিজ্ঞানীদের কল্পনাকে উসকে দিয়েছে তাদের জীবনধারণের এই পথ।
শুধু তাই নয়, গত দশ বছরে চিকিৎসা জগতের কাছেও তাদের এই জীবনযাত্রা আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে।
কারণ, আধুনিক সময়ের একটা প্রবণতাকে এড়িয়ে যেতে পেরেছে তারা। ১৯৬০ এর দশক থেকে হাঁপানি, একজিমা এবং অ্যালার্জির মতো প্রতিরোধ ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত রোগের বাড়বাড়ন্ত লক্ষ্য করা গেলেও তা কিন্তু আমিশদের প্রভাবিত করতে পারেনি।
এর নেপথ্যে থাকা কারণ একদিকে যেমন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে তার বিষয়ে যেমন আভাস দেয়, তেমনই প্রাণীর উপস্থিতি ওই প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কীভাবে প্রভাবিত করতে পারে সেটাও তুলে ধরে।
অনন্য সম্প্রদায়
আমিশ সম্প্রদায়ের মধ্যে কয়েকটা রোগের প্রকোপ কেন কম দেখা যায়। তা জানার জন্য ২০১২ সালে একদল গবেষক ইন্ডিয়ানায় বসবাসকারী আমিশ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করেছিলেন।
একইভাবে তারা পর্যবেক্ষণ করেছিলেন সাউথ ডাকোটায় হুটেরাইটস বা হুটেরিয়ান নামে পরিচিত আরেক সম্প্রদায়ের মানুষকেও।
দুই ক্ষেত্রেই গবেষকরা ৩০জন শিশুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছিলেন।
হুটেরাইটস কৃষিভিত্তিক সম্প্রদায় এবং তারাও আমিশদের মতোই নিজেদের কমিউনিটির মাঝে থাকতে পছন্দ করে।
আমিশ এবং হুটেরাইটসদের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। তাদের পূর্বপুরুষরা ইউরোপীয়, দুই সম্প্রদায়ের মানুষই দুষিত বায়ুর সংস্পর্শে কম এসেছেন এবং তারা প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খান।
তবে হুটেরাইটস সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে হাঁপানি এবং শৈশবকালীন অ্যালার্জির হার আমিশ সম্প্রদায়ের শিশুদের তুলনায় চার থেকে ছয়গুণ বেশি।
গবেষকরা এর কারণ পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন। তাদের মতে, এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা পার্থক্য হলো হুটেরাইটসরা শিল্পায়িত কৃষি প্রযুক্তিগুলোকে পুরোপুরি গ্রহণ করেছে, কিন্তু আমিশ সম্প্রদায় তা করেনি।
এর অর্থ হলো অল্প বয়স থেকেই আমিশ সম্প্রদায়ের মানুষ প্রাণীদের সাহচর্যে রয়েছে এবং তাদের (ওই প্রাণীদের) বয়ে আনা করা জীবাণুর সংস্পর্শেও থেকেছে।
এই বিষয়টাকে ব্যাখ্যা করেছেন আয়ারল্যান্ডস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক’-এর মেডিসিন বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক ফার্গুস শানাহান।
তার কথায়, ‘যদি আমিশ বসতির ছবি দেখেন এবং তাকে হুটেরাইটসদের বসতির সঙ্গে তুলনা করেন, তাহলে লক্ষ্য করবেন আমিশ সম্প্রদায়ের মানুষ খামারে প্রাণীদের সঙ্গে বাস করে।
হুটেরাইটসরা বাস করে ছোট ছোট গ্রামে। তাদের খামারগুলো অনেক সময় বাড়ি থেকে কয়েক মাইল দূরে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানির একদল গবেষক এই নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে আমিশ সম্প্রদায়ের শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জির ঝুঁকি কম থাকার কারণ, পরিবেশ তাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এইভাবে গড়ে তুলেছে।
তাদের ওই গবেষণা ২০১৬ সালে প্রকাশিত হয় এবং একে যুগান্তকারী গবেষণা বলে মনে করা হয়।
বিপি>টিডি
আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন





