১৫ অক্টোবর ২০২৫

সাকরাইনের আনন্দে মাতোয়ারা পুরান ঢাকা

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪০ পিএম
সাকরাইনের আনন্দে মাতোয়ারা পুরান ঢাকা
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, ঢাকাঃ আকাশে বাহারী রঙের ঘুড়ি, একজন আরেকজনের ঘুড়ি কাটায় ব্যস্ত। কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকাল ও বিকালে ঘুড়ির সুতা কাটার মাধ্যমে আনন্দ উল্লাসে মাতামাতি। এরই মাঝে চলছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসব। এ যেন এক অন্যরকম আনন্দ। সাকরাইন উৎসবে বাঙালির ঐতিহ্য নানা রঙের ঘুড়ি পুরান ঢাকার আকাশ দখল করে রেখেছে। উৎসবের আমেজ পুরান ঢাকার সর্বত্র। পুরান ঢাকার আকাশে রংবেরঙের পাখা মেলা বাহারী ঘুড়িতে ছেয়ে গেছে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শীতের কারণে কিছুটা ভিন্নতা দেখা গিয়েছে। শনিবার (১৪ জানুয়ারি) পুরান ঢাকায় শুরু হওয়া ঐতিহ্যবাহী সাকরাইন উৎসবে সর্বত্র এমন চিত্র দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে পুরান গেন্ডারিয়া, শাখারিবাজার, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, ফরাশগঞ্জ, সূত্রাপুর, নারিন্দা, স্বামীবাগসহ পুরান ঢাকার বাসা-বাড়ির ছাদে ঘুড়ি ওড়ানো হচ্ছে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল এলে আকাশে বাড়তে থাকে ঘুড়ির রাজত্ব। ভোরবেলা কুয়াশার আবছায়াতেই ছাদে ছাদে শুরু হয় ঘুড়ি উড়ানোর উন্মাদনা। আগের দিন রাত থেকেই ঘুড়ি ওড়ানোর জন্য সুতাণ্ডমাঞ্জা, গান-বাজনাসহ পিঠা উৎসবেরও আয়োজন করা হয় কোথাও কোথাও। ছোট-বড় সকলের অংশগ্রহণে মুখরিত প্রতিটি বাড়ির ছাদ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উৎসবের জৌলুস। এদিকে শীতের বিকেলে ঘুড়ির কাটাকাটি খেলার উত্তাপ ছড়িয়েছে সাকরাইন উৎসব। মাঝে মাঝে ঘুড়ি কেটে গেলে পরাজিত ঘুড়ির উদ্দেশ্যে ধ্বনিত হয় ভাকাট্ট লোট শব্দযুগল। প্রায় এক দশক আগে প্রতিটি বাড়ির ছাদে ছাদে থাকত মাইকের আধিপত্য। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আর আধুনিকতার সংস্পর্শে মাইকের স্থান দখল করেছে আধুনিক সাউন্ড সিস্টেম। বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যে ছোট-বড় সবাই মেতে উঠেছে এ উৎসবে। দিনের শুরু থেকেই পুরান ঢাকার বাড়িতে বাড়িতে চলছে পিঠা বানানোর ধুম। এ ছাড়া এসব এলাকার আকাশে এখন থেকে উড়তে শুরু করেছে রংবেরঙের ঘুড়ি। সব মিলিয়ে পুরান ঢাকা যেন সাকরাইনের আনন্দে মাতোয়ারা। পুরান ঢাকার প্রায় প্রতিটি বাড়ির ছাদের চিত্র অনেকটা একই। কিশোর-কিশোরীদের ঢল আর হইহুল্লোড়। আকাশে ওড়তে শুরু করেছে নানা নামের ঘুড়ির। শুরু হয়েছে নিজের ঘুড়িকে সবচেয়ে ওপরে তোলার প্রতিযোগিতা। সেই সঙ্গে আছে ঘুড়ি কাটাকাটির লড়াই। পুরান ঢাকার প্রায় সব বাড়িতেই উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। পুরান ঢাকার জামাইরা পৌষ মাসের শেষে শ্বশুরবাড়ি আসতেন। তখন তারা ঘুড়ি ও নাটাই নিয়ে উৎসবে মাততেন। সব বাড়ির জামাই ঘুড়ি ওড়ালে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে তা দেখতেন এলাকাবাসী। কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন চোখে পড়ে না। স্থানীয় যুবক আফজাল হোসেন জানান, ‘শনিবার সকাল থেকেই ঘুড়ি ওড়ানো শুরু হয়েছে, তবে দুপুরের পর থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে। আর সন্ধ্যার পর অধিকাংশ বাসার ছাদেই গান বাজানো হবে আর পিঠার আয়োজন তো থাকছেই।’ পুরান ঢাকার বাসিন্দা একরামুল আহমেদ বলেন, ছোটবেলা থেকে এই উৎসব করে আসছেন তারা। প্রতিবছর বন্ধুরা মিলে চাঁদা তুলে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেন সাকরাইন ঘুড়ি উৎসব। তিনি আরও বলেন, সারা দিন ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের আয়োজন থাকে এই দিনে। এর পাশাপাশি ছাদে সাউন্ড বক্সে গান, ফানুস, আতশবাজি, পটকাসহ নানা আয়োজনে উদযাপন করা হয়। পুরান ঢাকার শিংটোলা পঞ্চায়েতের রঘুনাথ বলেন, ছেলে-মেয়েদের এখন ঘুড়ির প্রতি আগ্রহ কম। ঘুড়ির চেয়ে আতশবাজি আর রাতে ডিজে পার্টি করেই তারা উৎসব পালন করে। আমরা সকাল-সন্ধ্যা ঘুড়ি ওড়ানো আর বন্ধুদের সঙ্গে ঘুড়ি কাটাকাটির প্রতিযোগিতা করতাম। তিনি আরও বলেন, আমাদের মাসি পিসিরা বিভিন্ন রকমের পিঠা বানাতেন, এখন সেটি নেই। এখন আমাদের ঢাকাইয়াদের খুব কম বাড়িতেই পিঠা উৎসব চলে। এদিন ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি পুরান ঢাকার বেশির ভাগ বাড়ির ছাদেই গানবাজনার আয়োজন থাকবে। কোনো কোনো বাড়িতে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে লাইটিংয়ের কাজ। সন্ধ্যার পর আতশবাজিতে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন এলাকা স্থানীয়রা। পুরান ঢাকাবাসী যাকে সাকরাইন বলেন তা মূলত ‘পৌষসংক্রান্তি’ বা সংক্ষেপে ‘সংক্রান্তি’ নামে পরিচিত। পুরান ঢাকায় যেসব উৎসব যুগের পর যুগ পালিত হয়ে আসছে, তার মধ্যে এই সাকরাইনই অন্যতম। এই সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে দক্ষিণ এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে। দেশ থেকে দেশান্তরে অতিবাহিত হয়ে আসতে আসতে এটি পুরান ঢাকার একটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। ভারতবর্ষে এই উৎসবের নাম “মকর সংক্রান্তি” এবং বঙ্গদেশে এটাকে “পৌষ সংক্রান্তি” নামেই ডাকা হয়। বিপি>আর এল
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন