১৩ অক্টোবর ২০২৫

তরুণদের মধ্যে বাড়ছে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৩ পিএম
তরুণদের মধ্যে বাড়ছে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি

বাংলাপ্রেস ডেস্ক:  ২০০৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ২০–২৯ বছর বয়সিদের মধ্যে এ রোগের হার প্রতি বছর গড়ে ৭.৯ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে ৩০–৩৯ বছর বয়সিদের মধ্যে এ হার ছিল ৪.৯ শতাংশ এবং ৪০–৪৯ বছর বয়সিদের মধ্যে ১.৬ শতাংশ। অর্থাৎ তরুণদের মধ্যে কোলোরেক্টাল ক্যানসার সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে বলে জানা গেছে ইউরোপজুড়ে পরিচালিত এক গবেষণায়।

৬০ বছরের ঊর্ধ্বে এ রোগের হার কমলেও, ৫০ বছরের নিচের মানুষের মধ্যে এর বিস্তার দ্রুত বাড়ছে। ১৯৯০ সালে বিশ্বে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের রোগী ছিল প্রায় ৯৪ হাজার ৭০০ জন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৬ জনে।

তরুণদের মধ্যে এ রোগের বৃদ্ধি নিয়ে বিজ্ঞানীরা জেনেটিক কারণকে খুব একটা দায়ী করছেন না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার এর অন্যতম বড় কারণ। ২০২৫ সালে প্রকাশিত এক সমীক্ষাতেও এ বিষয়টি স্পষ্ট। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, রেডি মিলস, চিনিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত মাংসসহ ফাস্টফুড। 

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় জানা  গেছে, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার সঙ্গে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকির সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়। এতে ৪৬ হাজারেরও বেশি পুরুষকে ২৪ থেকে ২৮ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, যারা সবচেয়ে বেশি অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়েছেন, তাদের কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি। 

অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে— পুষ্টি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পরও একই ফল পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলছেন, কীভাবে এসব খাবার ক্যানসার সৃষ্টি করে, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন রয়েছে। এখন পর্যন্ত অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারকে মূলত স্থূলতার সঙ্গে মেলানো হতো, আর অতিরিক্ত ওজন যে ক্যানসারের বড় ঝুঁকি, সেটিও সবার জানা। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, স্বাভাবিক ওজনের মানুষের মধ্যেও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে।

আর তামাক যে ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ এবং অ্যালকোহল যে স্তন ও লিভারের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়— এ বিষয়গুলো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেতে কয়েক দশক সময় লেগেছিল। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী এক দশকের মধ্যেই তরুণদের কোলোরেক্টাল ক্যানসারের অন্যতম কারণ হিসেবে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারের বিষয়টি স্বীকৃতি পাবে।

যদি ২০ শতকের ক্যানসারের বড় কারণ হয়ে থাকে ধূমপান, তবে ২১ শতকে সেই জায়গা নিতে পারে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার। যদিও বিজ্ঞান এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। তবে প্রতিদিন এর পক্ষে নতুন নতুন প্রমাণ যুক্ত হচ্ছে। প্রচলিত কথা— খাবারই ওষুধ। আর এখন বিজ্ঞান বলছে— খাবারই প্রতিরোধ।

একসময় ক্যানসারকে বার্ধক্যজনিত রোগ হিসেবেই দেখা হতো। এখনো এ কথা সত্য যে, ক্যানসারের বেশিরভাগ নতুন রোগী সত্তরোর্ধ্ব। তবে ধীরে ধীরে চিত্র পাল্টাচ্ছে। এখন দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট কিছু ধরনের ক্যানসার ক্রমেই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বাড়ছে।

তবে আশার খবর হচ্ছে— ২০২৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত দই খেলে কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমতে পারে। কোলোরেক্টাল ক্যানসারেরই একটি ধরন হলো— কোলন ক্যানসার। তাই বিশেষজ্ঞরা বলছেন— অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিয়ে নিয়মিত দইসহ স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত।

বিপি>টিডি
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!

আপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন