রমজান আলী টুটুল, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীর সৈয়দপুরে মাদরাসার জনবল নিয়োগে কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে মাদরাসার সভাপতি ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব জি এম কবির মিঠুর বিরুদ্ধে। উপজেলার পোড়ারহাট সিদ্দিকীয়া আলিম মাদরাসায় ৭টি পদের বিপরীতে এই অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। নীলফামারী-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আহসান আদেলুর রহমানের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে তিনি তার নামে এই অর্থ নিয়েছেন বলে প্রার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ।
জানা যায়, গত শনিবার (৪ নভেম্বর) এই নিয়োগ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৭টি পদে মোট ৪২ জন প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। লোক দেখানো এই পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীদের কৌশলে বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে নিজস্ব লোকদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে আয়া পদে নিয়োগ কমিটির সদস্য ও সাবেক ইউপি মেম্বার সায়েদ আলীর মেয়ে লাকী বেগমকে, মাদরাসার জমিদাতা মৃত শমসের আলীর ছেলে আনিছুর রহমানকে পিয়ন পদে ও মোজাহারুল ইসলামের ছেলে রিপন কে নৈশ প্রহরী পদেসহ ভারপ্রাপ্ত সুপার জিয়াউল হকের আত্মীয় আবু বক্করের ছেলে আল মিজানুর রহমান উজ্জলকে অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদেসহ সুপার, কম্পিউটার অপারেটর ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে আরও ৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে মোটা অংকের টাকা গ্রহণের অভিযোগ করে অফিস সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদের প্রার্থী আরজু আরার স্বামী আজিজুল হক বলেন, মাদরাসার সভাপতি জি এম কবির মিঠু ও ভারপ্রাপ্ত সুপার জিয়াউল হক আমার কাছে ১৫ লাখ টাকা চেয়েছিল। এত টাকা দিতে পারিনি বলে অযোগ্য হলেও ভারপ্রাপ্ত সুপারের আত্মীয় আল মিজানুর রহমান উজ্জল নামে প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছে।
একইভাবে অভিযোগ করেন, মাদরাসাটির সাবেক সহকারী শিক্ষক বদর উদ্দিন বজো মুন্সির ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন , আমার ভাই আনিছুল ইসলামকে সুপার পদে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। সে অনুযায়ী প্রায় ২ বছর আগেই ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন সভাপতি ও সুপার। কিন্তু আমার ভাইয়ের অন্যত্র নিয়োগ হওয়ায় টাকা ফেরত চাইলেও তারা টাকা দেয়নি। তার বদলে আমাদের অন্য কেউ চাইলে তাকে নিয়োগ দেয়া হবে বলে। এতে আমি নৈশ প্রহরী পদে এবং আমার ভাবী মাহমুদা হিসাব রক্ষক এবং ছোট ভাই আবু জার কম্পিউটার অপারেটর পদে আবেদন করি। কিন্তু তারা আরও টাকা দাবী করে। তা দিতে না পারায় আমাদের নেয়া হয়নি। বরং যারা আরও বেশি টাকা দিয়েছে তাদেরকেই নিয়োগ দিয়েছে। তিনি বলেন, আমার জানা মতে কিছু কিছু পদে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকাও নিয়েছে।
এব্যাপারে আবু বক্কর বলেন, নিয়োগের ক্ষেত্রে খরচ তো আছেই। তবে মাদরাসার সুপার জিয়াউল হক আমার আত্মীয় হওয়ায় বেশি টাকা লাগেনি। টাকা ছাড়া কি আর নিয়োগ হয়। তাই বিভিন্ন খরচ বাবদ কিছু টাকা তো দিতেই হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, নিয়োগে বাণিজ্য হয়েছে বলেই তো পরীক্ষার সময় আগত সাংবাদিকদের ম্যানেজ করতে প্রায় ২ লাখ টাকা ব্যয় করেছেন সভাপতি॥ এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে টাকা দিতে হয়েছে বলেও জানান তারা।
ভারপ্রাপ্ত সুপার জিয়াউল হককে মাদরাসায় গিয়ে না পাওয়ায় তার মুঠোফোন ০১৭২১৫১৮২০২ নম্বরে কল দিলে তিনি অসুস্থ বলে জানান। এসময় তিনি বলেন, নিয়োগ তো শেষ এখন এনিয়ে জেনে কি করবেন? নিয়োগ বাণিজ্য বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এব্যাপারে আমি কিছুই জানিনা। সব সভাপতি জি এম কবির জানেন। তার সাথে যোগাযোগ করেন।
সভাপতি জি এম কবিরের সাথে তার মুঠোফোন ০১৭১৮১০৪০২৯ নম্বরে বার বার কল দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করছেন না। একারণে তার কোন মন্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
নীলফামারী-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আহসান আদেলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মোবালই রিসিভ করেননি। তবে হোয়াট আপে জানান, নিয়োগ বাণিজ্য করে থাকলে তা সভাপতির বিষয়। এক্ষেত্রে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। কেননা আমি নিয়োগের বিষয়ে কিছুই জানিনা। নিয়োগ দিয়েছেন সভাপতি ও প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত সুপার ও নিয়োগ কমিটি। জি এম কবির মিঠু উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব হলেও আমার মনোনীত প্রতিনিধি নন।
সৈয়দপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোখছেদুল মোমিন বলেন, পোড়ারহাট মাদরাসার নিয়োগ নিয়ে কিছুই জানিনা। তবে গত শুক্রবার জানতে পারি যে, ওই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা আছে এবং সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। তাই নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সভাপতি নিয়োগ দেন এমপি। তাই তার মনোনীত ব্যক্তিরা সভাপতি হয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করলে তা তাদেরই দায়।
উল্লেখ্য, ইাতোপূর্বে জি এম কবির মিঠু উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের খালিশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি হিসেবেও নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ রযেছে।
বিপি/কেজে