রমজান আলী টুটুল , সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। বাচ্চারা কোচিং সেন্টারগুলোতে না গিয়ে আর কি করবে? আমরাতো আর কোচিংয়ে গিয়ে পরিচালনাকারীদের শাস্তি দিতে পারিনা। আপনারা জানিয়েছেন, আমরা দেখছি। কিন্তু এখনই যেতে হবে এমনতো নয়। এমন মন্তব্য করেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীম হুসাইন।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধে দেওয়া সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে দেদারছে চলছে কোচিং সেন্টার। স্কুল-কলেজ-মাদরাসা বন্ধ থাকলেও দিনরাত প্রকাশ্যে কোচিং সেন্টার চালাচ্ছে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। প্রশাসনকে এ ব্যাপারে অবগত করা হলে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২ টার দিকে শহরের সরকারী বিজ্ঞান কলেজ সংলগ্ন ৫ টি কোচিং সেন্টারে জমজমাট ক্লাস চলার দৃশ্য দেখতে পায় সাংবাদিকরা। তখন বিষয়টি প্রথমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহজাহান মন্ডলকে জানানো হয়।
তিনি বলেন, কোচিং সেন্টার বিষয়ে আমাদের কাছে কোন নির্দেশনা নেই। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস টাইমের বাইরে কোচিং চালালে সে ব্যাপারে আমাদের কোন দায়িত্ব নেই। এখনতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। শিক্ষকরা কোচিং সহ যেকোন কার্যক্রম চালাতে পারেন। তাতে কোন অসুবিধা থাকার কথা নয়।
এমতাবস্থায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম হুসাইন কে অনলাইন এক্টিভেস্ট ও সৈয়দপুর সিটি ফেসবুক পেজের এডমিন তামিম রহমান মোবাইলে জানান। ইউএনও বলেন, আমি নীলফামারীতে আছি। যেতে দেরী হবে, তবে আমি আসছি।
তার কথার প্রেক্ষিতে প্রায় ১২ জন সংবাদকর্মী ঘটনাস্থলে অবস্থান করেন এবং কোচিং কর্তৃপক্ষকে জানান। এতে উদ্দীপক ও শেকড় কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের বাকডোকরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিল্টন কৌশলে তার কোচিংয়ের শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়।
এমন পরিস্থিতিতে তামিম রহমান আবার মোবাইল করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) মাহামুদুল হাসান কে। তিনি জানান, লাঞ্চ করছি। খাওয়া শেষ করে আসছি। এসময় পরিচালক মিল্টন বলেন, প্রশাসনকে জানিয়ে লাভ নেই। কারণ সবাই কোচিং চালাচ্ছে। বাধা দেয়ার কেউ নাই।
কিন্তু দীর্ঘ সময় গেলেও ইউএনও বা এসিল্যান্ড না আসায় এই প্রতিবেদক ইউএনও শামীম হুসাইন কে মোবাইল করেন। তখন তিনি উল্লেখিত কথাগুলো বলেন। এসময় তিনি জানতে চান, আপনি যে কথা বলছেন আপনার মুখে মাক্স আছে? জবাবে দৃঢ়তার সাথে অবশ্যই মাক্স আছে, এসে দেখেন বললে ইউএনও কথা ঘুরিয়ে নেন।
এভাবে সরকারী নির্দেশনা অমান্য করা কি অপরাধ নয়? এ অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঘটনাস্থলে আসা কি প্রয়োজন নয়? প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা কোচিং পরিচালনাকারীদের ডেকে বোঝাবো। এতে আর কোচিং চলবেনা।তাহলে এখন আমরা কি করবো? আপনি আসতে চেয়েছিলেন বলেইতো সংবাদকর্মীরা বাচ্চাদেরসহ পরিচালককে ধরে রেখেছে বললে তিনি (ইউএনও) বলেন, সেটা আপনাদের ব্যাপার।
সরকারী নির্দেশনা পালনে প্রশাসন ও শিক্ষা কর্মকর্তার এহেন নির্লিপ্ততায় সংবাদকর্মীরা হতবাক হন। তারা অন্যায়ের প্রতিবাদ করে সহযোগীতা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। এসময় ক্যান্টবাজার এলাকার অনেকে বলেন, প্রশাসনের প্রশ্রয়েই কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে ব্যাপকভাবে কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছে প্রাইমারী টিচাররাসহ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুভার কয়েকজন সদস্য। এতে ভেস্তে যাচ্ছে করোনা মোকাবেলায় সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো।
বিপি/কেজে