গাইবান্ধা প্রতিনিধি: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহিবুল হাসান মুকিতকে নিয়ে মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ছাত্রলীগের বিভিন্ন শাখার সাবেক নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে গাইবান্ধা পাবলিক লাইব্রেরী অ্যান্ড ক্লাব মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আনোয়ারুল কবির সজল।
লিখিত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আনোয়ারুল কবির সজল উল্লেখ করেন, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মাহিবুল হাসান মুকিত পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদ্য অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সাংগঠনিক সম্পাদক পদে মনোনীত হয়েছেন। মুকিতের এই পদায়নে অনেকেই যেমন উল্লসিত, তেমনি আমাদের দলেরই কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত। গত কয়েকদিন পূর্বে পলাশবাড়ী উপজেলা শ্রমিক লীগের একটি আহবায়ক কমিটি অনুমোদন দিয়েছিল জেলা শ্রমিক লীগ।
২০০৪ সালে ১৪ দল ঘোষিত টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া গণঅনাস্থা মানব প্রাচীর কর্মসূচীতে সহিংস হামলাকারী বিএনপি নেতা সুরুজ হক লিটনকে পলাশবাড়ী উপজেলা শ্রমিক লীগের সেই আহবায়ক কমিটিতে যুগ্ম আহবায়ক পদে পদায়ন করা হয়। সুরুজ হক লিটনের এই অনুপ্রবেশের প্রতিবাদে মুকিতসহ আমরা অনেকেই প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠি। আমাদের সকলের সম্মিলিত প্রতিবাদের মুখে জেলা শ্রমিক লীগ পলাশবাড়ী উপজেলা শ্রমিক লীগের বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে দলের অভ্যন্তরে একটি মহল মুকিতসহ অন্যান্য প্রতিবাদকারীদের ওপর মনোক্ষুন্ন হন। আর এই সূত্রে মুকিতের প্রতি ঈর্ষান্বিত অংশ এবং অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী বিএনপি নেতা সুরুজ হক লিটনের ঘনিষ্ঠজনরা একত্রিত হয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মাহিবুল হাসান মুকিতের বাবা-মাকে জড়িয়ে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন।
নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে ছাত্রলীগে জড়িয়ে পড়া মুকিত ওয়ান ইলেভেনে জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনের অগ্রসৈনিক ছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের রিপন-রোটন কমিটিতে ২০১০ সালে মুকিত সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক হন। কিন্তু তখন মুকিতের পরিবারের বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কোন অভিযোগ কেউ তোলেননি। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সোহাগ-নাজমুল কমিটিতে ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মুকিত সহসম্পাদক ছিলেন। তখনও জামায়াত সংশ্লিষ্টতার কোন অভিযোগ কেউ তুললো না। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের তাবের মুখে পলাশবাড়ীতে মুকিতের সাহসী পদচারণার পুরষ্কার হিসেবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকির কমিটিতে মুকিত উপ শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক ছিলেন। তখনও কেউ মুকিতের পরিবার নিয়ে এই ধরনের কোন অভিযোগ তোলেননি।
জাতীয় সংসদের হুইপ মাহাবুব আরা বেগম গিনি আপার পিও ছিলেন মুকিত। তখনও কেউ বললেন না মুকিতের বাবা-মা জামায়াতের লোক। এরপরে মুকিত পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর আসনের সংসদ সদস্য উম্মে কুলসুম স্মৃতির পিএস হলেন। তখনও জামায়াত সংশ্লিষ্টতার এমন অভিযোগ কেউ তোলেননি। কিন্তু যখন মুকিত পলাশবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হলেন, তারপর মুকিতের বাবা-মা, নানাকে জড়িয়ে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুললেন আমিনুল ইসলাম নামের একজন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা। আর যা সম্পূর্ণভাবে ঈর্ষা পরায়ণ এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরা এধরনের হীণরাজনীতির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আনোয়ারুল কবির সজল আরও উল্লেখ করেন, মুকিতের বাবা হাবিবুর রহমান নাকি জামায়াত করতেন। জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির ছিলেন। উপজেলা জামাতেরও নাকি আমির ছিলেন এবং মুকিতের মা নাকি মহিলা জামায়াতের সাথে জড়িত ছিলেন। এরকম আরও কিছু কথা ইদানিং বলা হচ্ছে। আমাদের যত কথা এই অভিযোগের ভিত্তিতেই। আমরা যারা
এখানে ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছি এবং আরও যারা এখনও উপস্থিত হতে পারি নাই সবাই মিলে কথা বলেছি। আমরা এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, আমরা যখন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত ছিলাম তখন মুকিতের বাবা হাবিবুর রহমান গাইবান্ধা সরকারি কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। আমাদের ছাত্র রাজনীতির সময়টাতে শিক্ষকদের মাঝে কে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ লালন করেন, আমরা তা অনুসন্ধান করতাম। আমরা হাবিবুর রহমান স্যারের কোন ধরনের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা কখনোই পাইনি। তিনি ব্যক্তি জীবনে একজন ধর্মপরায়ণ মানুষ ছিলেন। আমরা শুনেছি, তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন এবং মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, গোবিন্দগঞ্জে কাটাখালি ব্রীজ অপারেশনে অংশগ্রহণও করেছিলেন। সেই অপারেশনে আবদুল মান্নান নামে তার এক নিকটাত্মীয় শহীদ হয়েছেন। অথচ সেই মানুষটাকে জেলা জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আমির বলে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু বলা হয় নাই তিনি কত সালে ভারপ্রাপ্ত আমির ছিলেন কিংবা অন্য কোনো ধরনের দালিলিক তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করা হয় নাই। উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের একতরফা অভিযোগ অবশ্যই পরিত্যাজ্য। মুকিতের মা স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর মালিহা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন।
১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলিতে তিনি লালমাটিয়ায় দশম শ্রেণীর ছাত্রী থাকাকালে আগরতলা ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বঙ্গবন্ধুসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তির দাবীতে পুরো এক বছর মিছিল-মিটিং করেছেন এবং ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চের ভাষনের দিনে ঢাকায় রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে আধুনিকমনস্ক প্রগতিশীল চিন্তা লালনকারী এবং জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে যাপিত জীবনে তিনিও ধর্মপরায়ন। মানুষের এই সহজাত ধর্মপরায়নতাকে রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে জামায়াতের সাথে জুড়ে দেওয়ার এমন নিন্দনীয় অপপ্রচার অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
অভিযোগকারী আমিনুল ইসলামের একতরফা অভিযোগের ভিত্তিতে কোন তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে মুকিতের বাবা-মাকে জড়িয়ে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার সংবাদ প্রচার করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক, প্রশ্নবিদ্ধ এবং আপত্তিকর। আমরা আপনাদের মাধ্যমে সকল সংবাদমাধ্যমের প্রতি সুনির্দিষ্ট এবং দালিলিক তথ্যপ্রমাণ ছাড়া এ ধরনের একতরফা অভিযোগ বর্জন করতে বিনীতভাবে আহবান রাখছি। যারা মুকিতের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে কিংবা রাগে-ক্ষোভে মুকিতের প্রয়াত বাবা হাবিবুর রহমান কিংবা মুকিতের মাকে জামায়াতের সাথে ট্যাগ করে এইধরনের অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছেন, তারা আমাদেরই ভাই।
একান্নবর্তী আওয়ামী পরিবারে তারাও কেউ না কেউ। মানসিক দূরত্ব থেকে, পারস্পরিক মান-অভিমান, দ্বিধা-দ্ব›দ্ব থেকে একে অপরের প্রতি এই ধরনের কাঁদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতে থেকে আমাদেরকে বেরিয়ে আসা উচিত। দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয়, এমন ধরনের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া থেকে আমাদের দূরে থাকা উচিত। যারা এইসব অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছেন তাদের প্রতি আমরা উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি, আপনারা অনুগ্রহপূর্বক এই ধরনের ঘৃন্য-নিন্দনীয়-পরিত্যাজ্য-অপরাজনৈতিক চর্চা থেকে বেরিয়ে আসুন। মিথ্যা অপপ্রচার, মিথ্যা দোষারোপের চর্চা পরিহার করে পরিশীলিত রাজনৈতিক অনুশীলনে মনোযোগী হই। শেখ হাসিনার উন্নয়নশীল ও উপাদানমুখী রাজনীতেতে মনোযোগী হই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলী জোয়ার্দার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক রাহাত মাহমুদ রনি, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওয়াজেদ হাসান শাওন ও সাবেক যুগ্ম আহবায়ক খন্দকার রায়হান তানভীর তুহিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান, পলাশবাড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহমুদুজ্জামান প্রান্তসহ জেলা ছাত্রলীগ, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ, গাইবান্ধা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ছাত্রলীগ এবং পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃবৃন্দ।
বিপি/কেজে