১৩ অক্টোবর ২০২৫

২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আটককেন্দ্রে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসীর মৃত্যু

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:১১ পিএম
২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আটককেন্দ্রে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসীর মৃত্যু

 

ছাবেদ সাথী

২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) আটককেন্দ্রে অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু ঘটেছে, যা ২০২০ সালের পর সর্বোচ্চ সংখ্যা। ২০২০ সালে কোভিড মহামারির সময় প্রথম এই ব্যবস্থার দুর্বলতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল।

একই সময়ে আইসিই-এর হেফাজতে থাকা অভিবাসীর সংখ্যা আগস্টে ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের দ্বিগুণ। আটককেন্দ্র সম্প্রসারণের সঙ্গে মৃত্যুর হার বৃদ্ধির সরাসরি সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে, যা প্রমাণ করছে, এই ব্যবস্থাগুলো অতিরিক্ত চাপ সামলানোর মতো প্রস্তুত নয়। সরকারি প্রতিবেদনে 'নিরাপদ তত্ত্বাবধান'-এর দাবি বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না; গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়লেও বন্দিদের মৌলিক সেবা দেওয়ার ক্ষমতা তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়েনি।

 

২০২৪ সালে গড়ে ৩৫ হাজার মানুষ হেফাজতে ছিল, এবং তাতে ১৩টি মৃত্যু নথিভুক্ত হয়, প্রতি ১০ হাজারে ৩.৭ জনের মৃত্যু। ২০২৫ সালে বন্দির সংখ্যা বেড়ে ৬০ হাজার ছাড়ানোর পর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৬ জন মারা গেছে, অর্থাৎ প্রতি ১০ হাজারে ২.৭ জন। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, বছরের শেষে মৃত্যুহার ৪.০ ছুঁতে পারে, যা গত বছরের চেয়েও বেশি।

সংখ্যায় হার হয়তো কাছাকাছি, কিন্তু বাস্তবতা আলাদা। বড় ব্যবস্থায় প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যায়। বন্দিশালা যত বাড়ছে, ততই বাড়ছে চিকিৎসক সংকট, ওভারক্রাউডিং, এবং ন্যূনতম চিকিৎসা সেবার ঘাটতি, যার ফলে মৃত্যুও বাড়ছে।

মূল সমস্যা একটাই: অতিরিক্ত ভিড়। স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দফতরের (ডিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, অনেক কেন্দ্র ৪০০–৬০০ জনের জন্য নির্মিত হলেও বাস্তবে সেখানে ধারণ করা হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি মানুষ। সাম্প্রতিক TRAC প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রায় ২৫ শতাংশ আটককেন্দ্র তাদের পরিকল্পিত ধারণক্ষমতার ওপরে চলছে, যার মানে পর্যাপ্ত জায়গা, কর্মী বা সময়মতো চিকিৎসা কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।

২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ডিএইচএস পরিদর্শনে বারবার একই সমস্যা ধরা পড়ে, চিকিৎসকের অভাব, চিকিৎসা বিলম্ব, এবং বেসরকারি ঠিকাদারদের অবহেলা। রিপোর্টে এমন ঘটনাও উঠে এসেছে, যেখানে উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসের মতো সাধারণ অসুখ চিকিৎসা না পেয়ে মারাত্মক আকার নিয়েছে। এক তদন্তে দেখা যায়, কর্মী সংকট এত ভয়াবহ যে অনেক বন্দির প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরীক্ষা সপ্তাহের পর সপ্তাহ বিলম্বিত হয়েছে। এগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বারবার ফিরে আসা ব্যবস্থাগত ব্যর্থতা।

আইসিই আটককেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসাকর্মীর ঘাটতি এখন তীব্র। ফলে বন্দিদের পর্যাপ্ত সেবা মেলে না। ২০২৩ সালের পর অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অবকাঠামো না বাড়িয়ে কেন্দ্র বাড়ালে মৌলিক চাহিদা পূরণ অসম্ভব হয়ে পড়ে, আর সেখান থেকেই আসে দীর্ঘমেয়াদি অসুখ বা জরুরি চিকিৎসা বিলম্বে মৃত্যু।

আটককেন্দ্র সম্প্রসারণের পেছনে মূল চালিকা শক্তি রাজনীতি। নির্বাচনের সময় বড় বড় আটককেন্দ্র ভোটারদের কাছে 'কঠোর পদক্ষেপ' হিসেবে উপস্থাপন করা সহজ যেখানে বিকল্প ব্যবস্থা যেমন ইলেকট্রনিক মনিটরিং, তুলনামূলক সাশ্রয়ী ও কার্যকর হলেও তা “নরম” হিসেবে দেখা হয়। অথচ ডিএইচএস-এর ২০২৩ ও ২০২৪ সালের গবেষণায় দেখা গেছে, এসব বিকল্প ব্যবস্থার খরচ অনেক কম এবং আদালতে হাজিরার হারও প্রায় সমান।

তবু ফেডারেল কর্মকর্তারা দেখানোর জন্যই বন্দিশালা বেছে নেন। বিশেষ করে টেক্সাস ও ফ্লোরিডার মতো রিপাবলিকান অঙ্গরাজ্যে আটককেন্দ্র নির্মাণ রাজনীতির স্বাভাবিক কৌশল। ভোটের রাজনীতিতে ভরা আটককেন্দ্র ও জোরপূর্বক প্রত্যাবাসনই দৃশ্যমান “সাফল্য”, যা শান্তিপূর্ণ বিকল্পের চেয়ে বেশি প্রচারযোগ্য।

অভিবাসী আটক এখন এক বিশাল ব্যবসা। প্রতি বন্দির জন্য প্রতিদিন ১২৫–১৬৫ ডলার পর্যন্ত আয় হয়, যা 'কঠোর অভিবাসন নীতি'-র নামে টেক্সাস ও ফ্লোরিডার মতো রাজ্যগুলোয় লাভজনক শিল্পে পরিণত হয়েছে। আইসিই-এর এই আটকবৃদ্ধি থেকে GEO Group ও CoreCivic-এর মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাখো ডলার মুনাফা করছে। ২০২৫ সালের প্রথম দুই প্রান্তিকে GEO Group-এর মুনাফা ছিল ১৩৩ মিলিয়ন ডলার।

এই বছর আইসিই আরও ২ বিলিয়ন ডলার বাজেট চেয়েছে— ৩৪ হাজার নতুন বেডসহ আটকক্ষমতা বাড়ানোর জন্য। অথচ TRAC রিপোর্টে দেখা গেছে, বিকল্প তদারকি ব্যবস্থার গড় খরচ দিনে মাত্র ৮.৩৬ ডলার, যেখানে বন্দিশালার খরচ ১৫৭ ডলার।

দক্ষিণের রাজ্যগুলোয় এত বিপুল সংখ্যক আটকবেড কেন্দ্রিক নীতি আসলে বেসরকারি ঠিকাদারদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াচ্ছে। প্রতিটি নতুন চুক্তি হয়ে উঠছে আরও ভিড় বাড়ানোর প্রণোদনা, আর তার সঙ্গে বাড়ছে আরও অনেক অভিবাসীর প্রাণ হারানোর ঝুঁকি।

 

ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্পাদক বাংলা প্রেস

[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!