
ভুল বার্তা দিচ্ছে ট্রাম্পের নতুন ‘যুদ্ধ বিভাগ'


ছাবেদ সাথী
ওয়াশিংটনের সঙ্গে শুরু হয়েছিল, ট্রুম্যান বদলেছিলেন। এখন ট্রাম্প আবার ফিরিয়ে আনতে চাইছেন সেই পুরনো নাম— প্রতিরক্ষা বিভাগ নয়, যুদ্ধ বিভাগ। কিন্তু এই নাম শুধু বিভ্রান্তিই নয়, বিশ্বকে বিপজ্জনক বার্তাও দিচ্ছে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পেন্টাগনের নাম বদলে প্রতিরক্ষা বিভাগ (Department of Defense) থেকে যুদ্ধ বিভাগ (Department of War) করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে তিনি বার্তা দিতে চাইছেন যে আমেরিকা 'যুদ্ধ জয়ের জন্য' প্রস্তুত। কিন্তু সমালোচকদের মতে, এই বার্তাটি ভুল এবং আমেরিকা ও বিশ্ব উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক।
১৭৮৯ সালে জর্জ ওয়াশিংটনের সময় থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত এই নাম ছিল 'Department of War।' কিন্তু ১৯৪৯ সালে প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান এটিকে পরিবর্তন করে রাখেন 'Department of Defense।' ট্রুম্যান জানতেন— একটি শব্দের পরিবর্তনেই শান্তি ও যুদ্ধের মধ্যে বিশাল পার্থক্য তৈরি হয়।
প্রতিরক্ষা বিভাগ নামটি বোঝায়, আমেরিকা শান্তিপ্রিয় জাতি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সেনাবাহিনী আমাদের আছে প্রতিরক্ষার জন্য, মিত্রদের সহায়তার জন্য, যুদ্ধ শুরু করার জন্য নয়। বিপরীতে, যুদ্ধ বিভাগ নামটি জানায় আমরা যুদ্ধপ্রিয়, যুদ্ধ চাই এবং সামরিক শক্তি প্রদর্শনের সুযোগ খুঁজছি। ট্রাম্প প্রশাসনের ভাষায়: 'lethality' আর 'warrior ethos' ফিরিয়ে আনতে হবে পেন্টাগনে।
যদিও কংগ্রেস এখনো নাম পরিবর্তন অনুমোদন করেনি, প্রশাসন একে কার্যত চূড়ান্ত ধরে নিয়েছে। ইতিমধ্যে সামরিক ঘাঁটির সাইনবোর্ডে 'defense' বদলে 'war' বসানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্প এমনকি মাদক পাচারের সন্দেহে একটি ছোট নৌকায় বোমা হামলার নির্দেশ দেন, আর শিকাগোতে ফেডারেল সেনা পাঠানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করতে গিয়ে লিখেছেন: 'শিকাগো বুঝতে যাচ্ছে কেন একে Department of WAR বলা হয়।'

আরও বিতর্কিত হয়েছে ট্রাম্পের ব্যাখ্যা। তার অভিযোগ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকা কোনো যুদ্ধ 'জেতার জন্য' লড়েনি, বরং সেনাবাহিনী হয়ে গেছে 'woke' আর 'politically correct।' এর মানে, কোরিয়া যুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ, আফগানিস্তান যুদ্ধ কিংবা ইরাক যুদ্ধ— কোনো ক্ষেত্রেই সেনারা নাকি যথেষ্ট কঠোরভাবে লড়েনি।
এমন মন্তব্যকে বিশ্লেষকরা বলেছেন— এটি গত ৭৫ বছরে আমেরিকার লাখো সেনা ও তাদের পরিবারকে অপমান করার শামিল। কলিন পাওয়েল, নরম্যান শোয়ার্টজকফ থেকে শুরু করে সব সেনা নেতার প্রতি এটি চরম অসম্মান। বিশেষ করে এমন একজনের কাছ থেকে, যিনি নিজে সেনাবাহিনীতে যোগ দেননি, কথিত 'bone spurs'-এর অজুহাতে।
আজকের আমেরিকায় প্রতিটি সেনা সদস্য প্রাপ্য কৃতজ্ঞতা ও সম্মানের— সস্তা রাজনৈতিক অপমানের নয়।
ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্পাদক বাংলা প্রেস [বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি। সিএসআপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন





