১৩ অক্টোবর ২০২৫

জাতিগত প্রোফাইলিংকে বৈধতা দিল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
জাতিগত প্রোফাইলিংকে বৈধতা দিল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট

 

ছাবেদ সাথী

১৯৫৪ সালের ব্রাউন বনাম বোর্ড অব এডুকেশন মামলার রায় ছিল এক ঐতিহাসিক আইনগত ও সাংস্কৃতিক ভূমিকম্প। সে রায় স্পষ্ট বার্তা দিয়েছিল যে, আমেরিকান সংবিধানের ছায়ায় বর্ণবাদ আর আশ্রয় খুঁজে পাবে না।

অবশ্য, ব্রাউন রায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে জাতিগত কুসংস্কার দূর করতে পারেনি, এমনকি সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকেও না। আমেরিকার সামাজিক জীবনের অন্য ক্ষেত্রেও বর্ণবাদ মাথাচাড়া দিয়েছে।

তবুও বিস্ময়কর ছিল ৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া সেই রায় পড়া, যেখানে অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টদের আবারও অনুমতি দেওয়া হলো কারো দৃশ্যমান জাতি বা জাতিগত পরিচয়; ইংরেজি উচ্চারণ বা স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলার ধরণ; খামার বা দিনমজুরদের আড্ডাস্থলের মতো বিশেষ এলাকায় উপস্থিতি; কিংবা তাদের কাজের ধরনকে ভিত্তি করে মানুষকে থামানো ও আটক করার জন্য।

ব্রাউন-পরবর্তী যুগে অনেক বর্ণবাদী বৈষম্য গোপনে চলত, যেখানে আপাত নিরপেক্ষ মানদণ্ড ব্যবহার করে জাতিগত বিভাজন করা হতো, যদিও সরাসরি জাতির নাম বলা হতো না। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন একেবারেই ভিন্ন, যেখানে তাদের সাংবিধানিক দর্শন হলো সংবিধানকে প্রকাশ্যে উপেক্ষা করাযতক্ষণ না সুপ্রিম কোর্ট বাধা দেয়।

কিন্তু আইসিই মামলায় কোর্ট ঠিক উল্টোটা করল। সংবিধানকে উল্টে দেওয়ার প্রশাসনিক পদক্ষেপের সামনে দাঁড়ানোর বদলে তারা পথ ছেড়ে দিল।

এটি আরও বিস্ময়কর কারণ আদালত বহুদিন ধরে এই ধারণায় অনড় থেকেছে যে সংবিধান অবশ্যই 'রঙ অন্ধ' (color-blind) হবে। মনে করুন, ২০০৭ সালে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এক স্কুল একীভূতকরণ মামলায় বলেছিলেন: 'জাতিগত বৈষম্য থামানোর একমাত্র উপায় হলো জাতি-ভিত্তিক বৈষম্য করা বন্ধ করা'

২০২৩ সালে, রবার্টস আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের নেতৃত্ব দেন এবং উচ্চশিক্ষায় অ্যাফারমেটিভ অ্যাকশন বাতিল করেন, কলেজে ভর্তিতে জাতিগত পরিচয় উপেক্ষা করতে বাধ্য করেন। তাঁর মতে, সমঅধিকার ধারার মূলনীতি হলো আইনকে জাতি বা রঙের ভিত্তিতে পার্থক্য না করা।

 

কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের মাগা (MAGA) সংখ্যাগরিষ্ঠরা সংবিধানের নীতিগুলোকে কাজে লাগায় কেবল তখনই, যখন তা তাদের লক্ষ্য পূরণ করে। আর কখনও এত স্পষ্টভাবে দেখা যায়নি, যেমন দেখা গেল ICE এজেন্টদের হাতে জাতিগত প্রোফাইলিংকে বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্তে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লাখ লাখ মানুষ স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে বা স্প্যানিশ উচ্চারণে ইংরেজি বলে। যদি সরকার তাদের টার্গেট করতে পারে, তবে যেকোনো মানুষকে প্রোফাইল করা সম্ভব।

সন্দেহের অবকাশ নেই, জাতিগত প্রোফাইলিং সরকারকে একেবারেই অযৌক্তিক স্টেরিওটাইপের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য করে। এতে মানুষের প্রতি চরম অবমাননা করা হয়যেন তার জাতিই অপরাধীতার প্রতীক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, অভিবাসন প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট এর আগেও জাতিকে একটি বিবেচ্য উপাদান হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে

পঞ্চাশ বছর আগে, আদালত রায় দিয়েছিল যে 'মেক্সিকান ধাঁচের চেহারা'র মতো বিষয়গুলো ব্যবহার করা যেতে পারে কোনো গাড়ি থামানোর বৈধতা যাচাইয়ের জন্য। তবে তখন সরকার দাবি করেনি যে জাতিকে প্রধান মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে কাউকে থামানো, গ্রেপ্তার বা আটক করা যাবে

গত সপ্তাহে যে মামলায় রায় হলো, তাতে বাদীরা যুক্তি দিয়েছিলেন যে লস অ্যাঞ্জেলসে আইসিই এজেন্টদের মানুষের গাড়ি থামানো ও তল্লাশি চালানোর মতো যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ ছিল না। গত জুলাইয়ে ফেডারেল জেলা আদালতের বিচারক মামে এওয়ুসি-মেনসাহ ফ্রিমপং তাদের সঙ্গে একমত হয়ে আইসিই-কে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন।

কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই নিষেধাজ্ঞার কার্যকর হওয়া স্থগিত করল। নিজেদের 'শ্যাডো ডকেট' ব্যবহার করে কোনো ব্যাখ্যা না দিয়েই তারা এই সিদ্ধান্ত নিল। কেবল বিচারপতি ব্রেট কাভানফ তাঁর মত প্রকাশ করলেন।

তিনি বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে লিখলেন,আইসিই কখনও 'সংক্ষিপ্ত অনুসন্ধানমূলক আটক' করে এবং যদি দেখা যায় ব্যক্তি বৈধভাবে দেশে আছেন, তবে দ্রুত ছেড়ে দেয়। তাঁর মতে, এমন আটক 'দশকের পর দশক ধরে মার্কিন অভিবাসন প্রয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ' যেন পুরোনো হওয়াই এর বৈধতার প্রমাণ

'স্পষ্ট করে বলি,' কাভানফ লিখলেন, 'জাতিগত চেহারা একা যুক্তিসঙ্গত সন্দেহের ভিত্তি হতে পারে না; তবে এই আদালতের অভিবাসন-সংক্রান্ত মামলাগুলোর আলোকে এটি ‘সংশ্লিষ্ট উপাদান’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে'

বিচারপতি সোনিয়া সোটোমাইয়র এই অজুহাত মানতে নারাজ। তাঁর মতে, সংখ্যাগরিষ্ঠরা যা করলেন, তাতে এখন লাখো মানুষকে এমন এক দেশে বসবাস করতে হবে যেখানে সরকার যে কাউকে ধরে নিতে পারে যদি সে লাতিনো দেখায়, স্প্যানিশে কথা বলে এবং নিম্নবেতনভোগী কাজ করে

তিনি ব্যাখ্যা করলেন, 'সরকার এবং এখন আদালতের সংখ্যাগরিষ্ঠতা কার্যত ঘোষণা করেছে যে, সব লাতিনোতারা মার্কিন নাগরিক হোক বা না হোকযদি নিম্নবেতনভোগী চাকরি করে তবে তারা যে কোনো সময় আটক হওয়ার, কর্মস্থল থেকে তুলে নেওয়া হওয়ার এবং কেবল তখনই মুক্তি পাওয়ার ঝুঁকিতে থাকবে, যখন এজেন্টরা সন্তুষ্ট হবে তাদের বৈধ কাগজপত্র আছে'

এটি এক পুলিশি রাষ্ট্রের বিকৃত যুক্তির মতো শোনায়। আর সুপ্রিম কোর্ট একে এক মিনিটের জন্যও অনুমতি দিল, সেটিই এক ট্র্যাজেডি।

যারা ব্রাউন রায় দিয়েছিলেন, তারা হতবাক হতেন এ ভেবে যে, তাঁদের উত্তরসূরিরা একদিন সোটোমাইয়রের বর্ণিত জাতিগত বৈষম্যকে চোখ বন্ধ করে মেনে নেবেন। এখন আমাদের সকলের দায়িত্বযাদের জাতিগত পরিচয়কে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাদের পাশে দাঁড়ানোআমরা যে জাতিরই হই না কেন।

ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্পাদক বাংলা প্রেস [বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি। সিএস
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!