১৩ অক্টোবর ২০২৫

বাণিজ্য চুক্তি হলেও শুল্কের অভিঘাত এখনই শুরু

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
বাণিজ্য চুক্তি হলেও শুল্কের অভিঘাত এখনই শুরু

 

ছাবেদ সাথী

আগস্টের ১ তারিখের বাণিজ্য সময়সীমা ঘনিয়ে আসার প্রেক্ষাপটে জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে, যা স্পষ্ট করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের কাছ থেকে কী চাইছেন।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প জাপানের পারস্পরিক শুল্কহার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনতে সম্মত হন, বিনিময়ে জাপান যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এবং মার্কিন পণ্যের জন্য বাজার উন্মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নও অধিকাংশ রপ্তানির ওপর ১৫ শতাংশ শুল্কে রাজি হয়েছেযা ট্রাম্পের আগের ৩০ শতাংশ শুল্কের হুমকি থেকে অনেকটাই কম। বিনিময়ে তারা ৭৫০ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি ক্রয় এবং ৬০০ বিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত বিনিয়োগের অঙ্গীকার করেছে।

চুক্তির কাঠামো একই হলেও প্রতিক্রিয়ায় পার্থক্য স্পষ্ট। জাপানি গাড়ি নির্মাতারা ২৫ শতাংশের বদলে ১৫ শতাংশ শুল্কে আসায় স্বস্তি পেয়েছে; অন্যদিকে ইউরোপীয় নেতাদের মনোভাব ছিল শীতল, আর ঘোষণার পর ইউরোপীয় শেয়ারবাজার ও ইউরোর মান কমে গেছে। ফিনান্সিয়াল টাইমস মন্তব্য করেছে 'উচ্চ শুল্ক এড়ানো গেলেও ইইউ শেষ পর্যন্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের নতুন বিশ্ববাণিজ্য ব্যবস্থাকে বৈধতা দিয়েছে'

বিনিয়োগকারীরা আপাতত স্বস্তি পাচ্ছেন, কারণ বড় বাণিজ্যযুদ্ধের মতো প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা অংশীদার দেশগুলো গ্রহণ করেনি। কিন্তু ইতিহাস বলছে, ১৯৩০-এর দশকের পর এটাই সবচেয়ে বড় ও বিস্তৃত শুল্কবৃদ্ধি।

ট্রাম্প ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, পারস্পরিক শুল্কহার ১৫ শতাংশের নিচে নামবে না। ইয়েল বাজেট ল্যাবের হিসেবে কার্যকর মার্কিন শুল্কহার বর্তমানে প্রায় ১৭ শতাংশ, যা বছরের শুরুতে ছিল মাত্র ২ শতাংশ।

কে দিচ্ছে শুল্কের খরচ?

সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ফেব্রুয়ারি থেকে আমদানি পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে; কিন্তু ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিকসের সূচকটি শুল্ক যুক্ত হওয়ার আগের দাম দেখায়। বাস্তবে, ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানাচ্ছে কর্পোরেট আমেরিকাই মূলত এই খরচ বহন করছে। অনেক কোম্পানি ভোক্তাদের ওপর দাম না বাড়িয়ে পুরনো মজুত খরচ করছে বা খরচ কমাচ্ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদে মুনাফা রক্ষায় দাম বাড়ানো অনিবার্য।

জেনারেল মোটর্স তাদের বার্ষিক শুল্ক ক্ষতি ৪৫ বিলিয়ন ডলার এবং স্টেলান্টিস ১.১৪১.৭ বিলিয়ন ডলার হওয়ার আশঙ্কা করছে।

অনিশ্চয়তার অর্থনীতি

শুল্ক বৃদ্ধির আকার ও প্রভাব ছাড়াও, মার্কিন অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো এই নীতি নিয়ে বিরাট অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য বড় বাজেট ঘাটতি। ইইউ, জাপানসহ যেসব দেশ প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তারা বেসরকারি বিনিয়োগের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না।

এখনো চীন, কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে চুক্তি হয়নি। চীনের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বাড়ানোর সম্ভাবনা থাকলেও কানাডা সম্পর্কে ট্রাম্পের মন্তব্য 'ওরা কেবল শুল্ক দেবে, আলোচনা নয়'

সাবেক মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি রবার্ট জোলিকের ভাষায়, ট্রাম্প এখন 'অগোছালো সুরক্ষাবাদ' এ আরও আত্মবিশ্বাসী, আর তিনি অনিশ্চয়তাকে আলোচনার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করেন। কিন্তু এতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। ব্লুমবার্গ জরিপ বলছে, জিএর সব অর্থনীতিতেই আগামী বছরের বিনিয়োগ পূর্বাভাস ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে কমেছে।

আমার বিশ্লেষণ হলোএ বছরের প্রথমার্ধে মার্কিন অর্থনীতি একধরনের ‘অপেক্ষাদেখি’ অবস্থায় ছিল। দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশ হলেও ভোক্তা ব্যয় মহামারির পর সবচেয়ে দুর্বল ধারাবাহিক দুই প্রান্তিক দেখিয়েছে। নীতি পরিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত এই ধীরগতি চলবে।

একটি বিষয় স্পষ্ট ট্রাম্প শুল্ক আরোপে পিছু হটেননি এবং গত ৮০ বছরের নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক বাণিজ্যব্যবস্থার সমাপ্তি ঘটিয়েছেন।

ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্পাদক বাংলা প্রেস [বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি। সিএস
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!