ছাবেদ সাথী
আমি একজন উদারপন্থী কলাম লেখক। আজীবন ডেমোক্র্যাট দলকেই সমর্থন করে এসেছি। তবু এখনো মাঝে মাঝে হতবাক হয়ে যাই—ডেমোক্র্যাটরা কতটা নির্বোধের মতো আচরণ করতে পারে, তা দেখে।
এখন যেমন পরিস্থিতি। জেক ট্যাপার এবং অ্যালেক্স থম্পসনের নতুন বই 'অরিজিনাল সিন'-এ ফাঁস হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে, অনেক ডেমোক্র্যাট হঠাৎ করে জো বাইডেনের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছেন, দোষ দিচ্ছেন যে তিনি সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করেছেন, এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলের সব ব্যর্থতার জন্য তাঁকেই দায়ী করছেন—যা একদিকে নিষ্ঠুর, অন্যদিকে অপ্রয়োজনীয়, বিশেষ করে যখন বাইডেন সম্প্রতি আক্রমণাত্মক স্তরের চতুর্থ ধাপের প্রোস্টেট ক্যানসারে আক্রান্ত বলে জানা গেছে।
বাইডেনের ঘনিষ্ঠরা, নির্বাচিত ডেমোক্র্যাট এবং রাজনৈতিক কৌশলবিদদের ওপর ২০০টির বেশি সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে, ট্যাপার ও থম্পসনের মূল্যায়ন হলো—বাইডেনের মানসিক অবস্থার অবনতি আমাদের ধারণার চেয়েও অনেক বেশি ছিল; হোয়াইট হাউজের কর্মীরা সেই বাস্তবতা ইচ্ছাকৃতভাবে আড়াল করেছিল; ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জয়ের পরও, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি দ্বিতীয়বার নির্বাচনে না দাঁড়ানোর যে ঘোষণা দেওয়ার কথা ছিল, তা না দিয়ে তিনি পার্টিকে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন; আর অবশেষে যখন তিনি সরে দাঁড়ালেন, তখন ডেমোক্র্যাটদের কাছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রচার চালানোর মতো সময় আর ছিল না।
বইটিতে ট্যাপার ও থম্পসন লিখেছেন, '২০২৪ সালের নির্বাচনের মূল পাপ ছিল বাইডেনের পুনরায় নির্বাচনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত, যার পরেই তার মানসিক সক্ষমতা গোপন করার মরিয়া প্রচেষ্টা চালানো হয়।' কমলা হ্যারিসের প্রচার শিবিরের ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টা ডেভিড প্লাফ এই ১০৭ দিনের নির্বাচনী প্রচারকে 'একটা ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন' বলে উল্লেখ করে বলেন, 'সব দোষ বাইডেনের… সে আমাদের একেবারে ডুবিয়ে দিয়েছে।'
ওয়াশিংটন পোস্টে 'অরিজিনাল সিন' বইয়ের পর্যালোচনায় অ্যালেক্স শেফার্ড মন্তব্য করেছেন, 'বাইডেনের স্বাস্থ্যের বিষয়টি শুধু ২০২৪ সালের নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই নয়, বরং ট্রাম্পের জয়ের একমাত্র প্রধান কারণ।
এখানে একটু বিরতি দরকার। কেউ যদি বলে যে কোনো নির্বাচনের জয় বা পরাজয়ের 'একমাত্র' কারণ সে জানে—তাহলে ধরে নিন সে কিছুই জানে না। আর তার বাকি কথাও গুরুত্ব দেওয়ার মতো নয়।
আমি বুঝতে পারছি, এখন অনেক ডেমোক্র্যাট ও ভাষ্যকার এই সহজ পথ বেছে নিচ্ছেন—বাইডেনকে দোষ দিয়ে কাঁদুনি গাইছেন। কিন্তু আমি এতে সঙ্গী হচ্ছি না। এটি একেবারে সময়, শক্তি, সম্পদ ও মনোযোগের অপচয়।
আমি বলছি না যে ট্যাপার ও থম্পসনের তথ্য ভুল। আমি একমত—জো বাইডেনের উচিত ছিল না পুনরায় প্রার্থী হওয়া। আমি একমত—তাঁর আরও আগেই সরে দাঁড়ানো উচিত ছিল। আমি এটাও স্বীকার করি—এই বিলম্ব ২০২৪ সালের নির্বাচনে একটি কারণ ছিল। কিন্তু এটি ছিল বহু কারণের একটি। এখন যেটা দরকার তা হলো—আমরা এখন যে সময়ে আছি, সেটিতে ফোকাস করা। বাইডেন ২০২২ সালে কতটা সজাগ ছিলেন, তা নিয়ে এখন কথা বলার মানে হলো—আমরা ২০২৫ সালে ট্রাম্প কীভাবে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করছে, তা নিয়ে কথা বলছি না।
আর বাস্তবটা বুঝে নিই—আপনি কি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে কোনো ভোটার, রেপাবলিকান হোক বা ডেমোক্র্যাট, ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর ভোট দেওয়ার সময় বাইডেনের মানসিক সক্ষমতা ভেবে ভোট দিয়েছিল? বাইডেন তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই ছিলেন না। ভোটারদের সামনে ছিল দুটি স্পষ্ট পছন্দ: একজন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বনাম বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট; একজন শ্বেতাঙ্গ পুরুষ বনাম একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী; একজন দণ্ডিত অপরাধী বনাম একজন প্রাক্তন সরকারি কৌঁসুলি; একদিকে 'আগের ধারা অব্যাহত রাখা', আর অন্যদিকে 'ট্রাম্পকে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার নামে অস্থিরতা আনা'।
২০২৪ সালের যদি কোনো প্রধান এবং একক ইস্যু থেকে থাকে, তবে তা ছিল—দামবৃদ্ধি। সামগ্রিকভাবে অর্থনীতি শক্তিশালী থাকলেও, বহু আমেরিকান সেটা অনুভব করতে পারেননি, কারণ তাঁদের চোখে শুধু বাজারের চড়া দামই ধরা পড়েছে, বিশেষ করে মুদি দোকানে। ফলে, ৭৭ মিলিয়ন মানুষ ভোট দিয়েছেন, অন্তত আংশিকভাবে, এই আশায় যে নেতৃত্ব পরিবর্তন মানে হবে—পণ্যের দাম কমবে।
কিন্তু বাস্তবে তা তো ঘটেনি, বরং উল্টো হয়েছে। ওয়ালমার্টের সিইও পর্যন্ত হুঁশিয়ারি দিয়েছেন—ট্রাম্পের শুল্কনীতি দাম আরও বাড়িয়ে দেবে। ফলে, ডেমোক্র্যাটদের যদি প্রতিটি মুহূর্ত বাইডেনের মানসিক অবস্থা নিয়ে ব্যয় করার বদলে বলা হতো—ট্রাম্পের শুল্কনীতি ও ধনীদের জন্য কর ছাড় কিভাবে আজকের মধ্যবিত্ত ও শ্রমজীবীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে—তবে সেটিই হতো কার্যকর রাজনৈতিক বার্তা।
এই প্রথম নয়, আমরা এমন কোনো প্রেসিডেন্ট পেলাম যিনি মানসিকভাবে দুর্বলতার লক্ষণ দেখাচ্ছিলেন। অধিকাংশ ইতিহাসবিদ একমত—রোনাল্ড রেগান তাঁর শেষ বছরগুলোতে বাইডেনের চেয়েও অনেক বেশি বিচ্ছিন্ন ছিলেন। কিন্তু দেখুন—রিপাবলিকানরা কি তখন নিজেদের মধ্যে দোষারোপে ব্যস্ত ছিল? একদমই না। তারা সামনে তাকিয়েছে, দল গঠন করেছে, এবং পরবর্তী নির্বাচনে জিতেছে।
এখানেই ডেমোক্র্যাটদের রেপাবলিকানদের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।
ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সম্পাদক বাংলা প্রেস।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]