ছাবেদ সাথী
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি একটি বাজেট বিল উন্মোচন করেছে, যার একটি ধারা ডাইভারসিটি ভিসা কর্মসূচিতে প্রবেশকে কঠিন করে তুলতে পারে। এটি অনেকটাই অতীতের বর্ণবাদী ভোট ট্যাক্সের মতো-যার উদ্দেশ্য ছিল সংখ্যালঘুদের ভোটাধিকার হ্রাস করা। এই নতুন প্রস্তাবটি একইভাবে রঙিন অভিবাসীদের অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
এই প্রস্তাবিত আইন শুধু একে সীমিত করছে না, বরং এটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে-বিশেষ করে আফ্রিকা ও গ্লোবাল সাউথের আর্থিকভাবে অরক্ষিত মানুষদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য।
এই ইস্যুটি একজন আইনজীবির জন্য ব্যক্তিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যেসব আইনজীবি অভিবাসন আইন ফার্ম পরিচালনা করেন এবং ডাইভারসিটি ভিসা প্রাপ্তদের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাদের কিছু অসাধারণ প্যারালিগ্যালরাও ডিভি প্রোগ্রামের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন।
এই কমিটি প্রস্তাব করেছে, ডাইভারসিটি ভিসা লটারিতে প্রবেশের জন্য অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে কমপক্ষে ২৫০ ডলার ফি নেওয়া হোক। শুধু ২০২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় ২ কোটি যোগ্য আবেদন জমা পড়েছে। যদি প্রতিটি আবেদনের সঙ্গে ২৫০ ডলার ফি আরোপ করা হয়, তাহলে সরকারের রাজস্ব হবে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার। শুনতে ভালো লাগলেও, ভাবুন তো সেই টাকার উৎস হবে কারা? পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র মানুষগুলো। এটা স্পষ্টতই অন্যায়।
জনৈক আইনজীবির এক আফ্রিকান নারী ক্লায়েন্ট ছিলেন যিনি একক লটারিতে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তার মেডিকেল পরীক্ষার খরচও জোগানোর সামর্থ্য ছিল না, ভিসার আবেদন ফি তো অনেক দূরের কথা। তার বাবা-মা শেষ পর্যন্ত তাদের বাড়ি নির্মাণের জন্য সঞ্চিত জমি বিক্রি করেন, যাতে মেয়েটি মেডিকেল পরীক্ষা ও ৩৩০ ডলারের ফি দিয়ে ইন্টারভিউ দিতে পারে। আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছেন, যাদের সাপ্তাহিক আয় ১২ ডলারেরও কম-বছরে প্রায় ৬০০ ডলার।
যারা বলেন 'লাইন ধরে দাঁড়াও,' তারা সবসময় ভুলে যান যে যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে অভিবাসনের পথ কতটা সীমিত এবং ব্যয়বহুল।
ডাইভারসিটি ভিসা কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী জনগোষ্ঠীতে বৈচিত্র্য এনেছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে মূলত সেসব দেশ থেকে ভিসা দেওয়া হয়, যেসব দেশ থেকে বিগত পাঁচ বছরে ৫০,০০০ এর কম অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে এসেছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান ও কৃষ্ণাঙ্গ অভিবাসনের সবচেয়ে বড় উৎস।
লটারিতে নির্বাচিত সবচেয়ে ভাগ্যবান ব্যক্তিরা অভিবাসী ভিসা পান এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পেয়ে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গ্রিন কার্ডধারী হন, যা তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য বসবাস ও কাজের অধিকার দেয়।
প্রতিবছর শরৎকালে আবেদন করতে হয়, আর পরের বছর স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ হয়। ২০২৬ সালের জন্য প্রায় ২ কোটি আবেদন জমা পড়েছে- নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ০.০২৫ শতাংশ। আবার নির্বাচিতদের মধ্যেও মাত্র অর্ধেক ভিসা পান, কারণ নির্বাচিতদের সংখ্যা ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি রাখা হয়।
এই বাস্তবতার প্রেক্ষিতে, বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র পরিবারগুলোকে মাত্র ০.০২৫ শতাংশ সম্ভাবনার জন্য ২৫০ ডলার ব্যয় করতে বলা নৈতিক বা মানবিক কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। বরং, এটি এক ধরনের ব্যাপক প্রতারণার সামিল।
অভিবাসন নীতি হওয়া উচিত কূটনৈতিক এক মাধ্যম, যাতে বিশ্ববাসী বুঝতে পারে সুশাসন কেমন হয়। অথচ, হাউস জুডিশিয়ারি কমিটির রিপাবলিকানরা অভিবাসন নীতিকে ব্যবহার করছেন যুক্তরাষ্ট্রের সুনাম ক্ষুণ্ন করার এক অস্ত্র হিসেবে।
আমরা এর চেয়ে ভালো দেশ। আমি আশা করি, আমেরিকানরা এই ভুল পথের বিপক্ষে রুখে দাঁড়াবে এবং এর নিন্দা জানাবে।
ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন নীতি পর্যবেক্ষক।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]