১৩ অক্টোবর ২০২৫

কে বলেছে পৃথিবীতে নারীরা অবলা

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪১ পিএম
কে বলেছে পৃথিবীতে নারীরা অবলা

-- কৌশলী ইমা
কর্মক্ষেত্রে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা কাজ করলেও নারীরা অবলা বলে তাদের সে আয় স্বাধীনভাবে নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী খরচ করতে পারতেন না। কিন্তু এখন সে অবস্থার ধীরে ধীরে পরিবর্তন হচ্ছে। আগে অনেক নারী তার বিয়ে বিষয়ে মতামত প্রদান করতে পারতেন না। সন্তানের অভিভাবকত্ব দাবি করতে পারতেন না। অনেকেই পরিবার থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা পেতেন না। নারী দিবসের একশত চব্বিশ বছরে চারিপাশে নারীদের অবস্থারও একটা পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসটি ১৯১১ সালের ১৯ মার্চ মাসে (পরে ৮ মার্চ নয়) পালিত হয়েছিল। প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দিবসে দশ মিলিয়ন নারী ও পুরুষ মহিলাদের অধিকারের পক্ষে সমাবেশ করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সোশ্যালিস্ট পার্টি ঘোষিত ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ১৯০৯ আমেরিকার জাতীয় মহিলা দিবস দ্বারা আন্তর্জাতিক নারী দিবসের ধারণাটি অনুপ্রাণিত হয়েছিল।
পরের বছর সোশ্যালিস্ট ইন্টারন্যাশনাল ডেনমার্কে বৈঠক করে এবং প্রতিনিধিরা একটি আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের ধারণাটি অনুমোদন করে। এবং তার পরের বছর প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস-বা এটি প্রথম বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক কর্মী মহিলা দিবস ডেনমার্ক, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড এবং অস্ট্রিয়ায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছিল। উদযাপনগুলি প্রায়শই মিছিল এবং অন্যান্য বিক্ষোভ অন্তর্ভুক্ত করে।
প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের এক সপ্তাহ পরেও ত্রিভুজ শার্টওয়াইস্ট ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে নিউ ইয়র্ক সিটিতে। এতে ১৪৬ জন মানুষ মারা গেছে এদের বেশিরভাগ তরুণ অভিবাসী মহিলা। এই ঘটনাটি শিল্পের কাজের পরিস্থিতিতে অনেক পরিবর্তনকে অনুপ্রাণিত করেছিল এবং যারা মারা গিয়েছিল তাদের স্মৃতি প্রায়শই সেই দিন থেকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের অংশ হিসাবে আহ্বান জানানো হয়েছিল। বিশেষত প্রথম বছরগুলিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস কর্মজীবী ​​মহিলাদের অধিকারের সাথে যুক্ত ছিল।
জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে আন্তর্জাতিক নারী বছর উদযাপন করেন এবং ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে নারী অধিকারের বার্ষিক সম্মানকে পিছনে পেয়েছিল যেটি আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস হিসাবে পরিচিত। অগ্রগতি প্রতিফলিত করার জন্য পরিবর্তনের আহ্বান জানাতে এবং এর কাজগুলি উদযাপন করার জন্য ‘মহিলাদের অধিকারের ইতিহাসে একটি অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে এমন সাধারণ মহিলা দ্বারা সাহস এবং সংকল্প।
২০১১ সালে আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের ১০০ তম বার্ষিকীর ফলস্বরূপ বিশ্বজুড়ে অনেক উদযাপন এবং আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতি স্বাভাবিক মনোযোগের ফলস্বরূপ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৭ সালে অনেক মহিলা “মহিলা বিহীন দিন” হিসাবে দিনটি বন্ধ করে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন করেছিলেন। কয়েকটি শহরে পুরো স্কুল ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে (মহিলারা এখনও পাবলিক স্কুল শিক্ষকদের প্রায় শতকরা ৭৫ জন শিক্ষক)। যারা এই ছুটির দিনে ছুটি নিতে পারেননি তারা হরতালের চেতনার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে লাল পোষাক পরতেন।
বাংলাদেশে বর্তমানে সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারীদের উপস্থিতি বেশি হলেও এখনও পুরুষের তুলনায় অনেক কম। ৮ মার্চ সারা বিশ্বে যখন নারী দিবস পালন করা হচ্ছে, অন্যদিকে হয়তো কোন নারী সহিংসতা বা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এ থেকে উত্তরণের জন্য কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে পদক্ষেপে নিলেও তার বাস্তবায়ন হচ্ছে না। আবার যারা বেসরকারিভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছে তা প্রকল্প ভিত্তিক হয়ে যাচ্ছে। সর্বোপরি কথা হচ্ছে সবাই মিলে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া নারীর অধিকার আদায়ে একজন নারীকেই এগিয়ে আসতে হবে। পাশাপশি পরিবারেরও বেশ কিছু ভূমিকা রয়েছে। নারীর নিজেরও কিছু ভূমিকা রয়েছে। নারীর নিজেরও কিছু দায়িত্ব থাকবে। স্বেচ্ছাচারী হয়ে পুরুষের প্রতি বিরূপ আচরণ করবে তা নয়। সর্বোপরি কথা হচ্ছে নারী-পুরুষ উভয়কে পরস্পরের প্রতি পরস্পরের সহনশীল হতে হবে।
নারী দিবসটি উদযাপনের পেছনে রয়েছে নারী শ্রমিকের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের ইতিহাস। নারী দিবসের শুরু ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে একটি সূঁচ কারখানার নারী শ্রমিকরা দৈনিক শ্রম ১২ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৮ ঘণ্টায় আনা, ন্যায্য মজুরি এবং কর্মক্ষেত্রে সুস্থ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। সেদিন আন্দোলন করার অপরাধে গ্রেফতার হন অসংখ্য নারী। কারাগারে নির্যাতিতও হন অনেকে। তিন বছর পর ১৮৬০ সালের একই দিনে গঠন করা হয় `নারী শ্রমিক ইউনিয়ন`।
১৯০৮ সালে পোশাক ও বস্ত্রশিল্পের কারখানার প্রায় দেড় হাজার নারী শ্রমিক একই দাবিতে আন্দোলন করেন। অবশেষে আদায় করে নেন দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার অধিকার।
১৯১০ সালের এই দিনে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক সম্মেলনে জার্মানির নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই সারা বিশ্বে দিবসটি আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
নারী দিবস নিয়ে আমার একটি মৌলিক গানের কথা ছিল এরকম-‘বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না, আদিকালের সেই ঘটনা আর তো খাটে না, এখন সবার মুখ ফোটে কারো বুক ফাটে না। আদিকালের এই প্রবাদ বাক্যটি বর্তমান যুগে একেবারেই বেমানান। এখন নারীদের ‘মুখ ফোটে কারো বুক ফাটে না’।

গানটি শুনতে নিচে ক্লিক করুন-
[embed]https://youtu.be/yDAn_xP3qiI?si=2HnwaOAKuIZMgHIT[/embed]

বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!