১৩ অক্টোবর ২০২৫

অভিবাসী আদালতের জটিলতা বাড়াবে ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
অভিবাসী আদালতের জটিলতা বাড়াবে ট্রাম্পের ‘বিগ বিউটিফুল বিল’
  ছাবেদ সাথী সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সান দিয়েগোর একটি ইমিগ্রেশন আদালত থেকে বেরোনোর পর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) এজেন্টরা আটক করেন সৈয়দ নাসের নামের এক আফগান নাগরিককে, যিনি কয়েক বছর ধরে মার্কিন সেনাবাহিনীর জন্য অনুবাদকের কাজ করেছেন। নাসের যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য যেটুকু প্রত্যাশিত-সবকিছুই করেছিলেন। তালেবান যোদ্ধারা যখন তার ভাইকে হত্যা করে এবং বাবাকে অপহরণ করে শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করায় তখন তিনি ও তার পরিবার ব্রাজিলে পালিয়ে যান এবং সেখান থেকে দীর্ঘ ও বিপজ্জনক পথ পেরিয়ে হেঁটে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। ২০২৪ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সময় ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন, যেখানে সরকার তাকে পারোল স্ট্যাটাসে দেশে প্রবেশ করতে দেয়। পরে তিনি অ্যাসাইলাম এবং যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে কাজ করা বিদেশিদের জন্য তৈরি ‘স্পেশাল ইমিগ্রান্ট ভিসা’ (এসআইভি)-এর আবেদন করেন। ১১ জুন ২০২৫-এ তিনি অ্যাসাইলাম আবেদনের অংশ হিসেবে তার প্রথম শুনানিতে হাজির হন। কিন্তু আদালতে পৌঁছানোর পর হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক আইনজীবী দাবি করেন, তার মামলাটি “ভুলভাবে জারি” হয়েছে। এরপর কোর্টরুমের বাইরে অপেক্ষমাণ আইসিই এজেন্টরা তাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যান। বর্তমানে তিনি ডিটেনশনে আছেন, আর তার স্ত্রী ও সন্তানরা গা ঢাকা দিয়ে আছেন। যদিও ঘটনাটি চমকপ্রদ, তবু নাসেরের এই পরিণতি আজকাল আর বিরল কিছু নয়। মে মাস থেকে আইসিই এজেন্টরা প্রতিদিন ৩,০০০ জন আটক করার কোটা পূরণের লক্ষ্যে আদালত থেকে বের হওয়া শত শত মানুষকে গ্রেফতার করছেন। এক সময় কোর্ট এলাকা থেকে আটক করা নিষিদ্ধের কাছাকাছি ছিল এবং যৌক্তিক কারণেই। এই ধরনের কর্মকাণ্ড অভিবাসীদের সামনে এক অসম্ভব পছন্দ রেখে দেয়: আইনি পথে গিয়ে অ্যাসাইলাম বা গ্রীনকার্ডের জন্য আবেদন করে নিজেই নিজেকে গ্রেফতারের ঝুঁকিতে ফেলুন, অথবা অনুপস্থিত থাকুন এবং নিজ অধিকার ত্যাগ করে অনুপস্থিতিতে ডিপোর্টেশন অর্ডার পান। এর পাশাপাশি, আদালতে প্রবেশাধিকার ব্যাহত হওয়ার আরেকটি কম দৃশ্যমান পথ তৈরি হয়েছে। যদি ট্রাম্পের বাজেট রিকনসিলিয়েশন বিল বর্তমান আকারে পাস হয়, তবে নাসেরের মতো অভিবাসী ও অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের আদালতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে অতিরিক্ত ফি-র কারণে। বিলে বলা হয়েছে, যারা পারোলে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করবেন, তাদের প্রবেশের সময় ১,০০০ ডলার এবং ওয়ার্ক পারমিটের জন্য ৫৫০ ডলার দিতে হবে। পারোল নবায়নের জন্য প্রতি ছয় মাস অন্তর আরও ৫৫০ ডলার। এরপর অ্যাসাইলামের জন্য আবেদনে আরও ১,০০০ ডলার ফি। আর যদি শুনানির জন্য অতিরিক্ত সময় লাগে, তাহলে প্রতি ‘কন্টিনুয়েন্স’ আবেদনের জন্য অতিরিক্ত ১০০ ডলার দিতে হবে। যুদ্ধ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগপীড়িত দেশ থেকে আগত শিশু বা অন্যান্য আবেদনকারীদের জন্যও একই রকম ফি প্রযোজ্য হবে। যে নাসের ব্রাজিল থেকে হেঁটে এসেছে, তার পক্ষে এমন হাজার হাজার ডলার জোগাড় করা সম্ভব নয় আর অধিকাংশ আবেদনকারীর ক্ষেত্রেও তা-ই। এই ফি কার্যত কেবল ধনীদের জন্য আদালতের দরজা খুলে রাখবে। আইন অনুসরণ করে আদালতে হাজির হয়ে যারা সঠিক পথ বেছে নেয়, তাদের গ্রেফতার করে এবং আদালতে যাওয়ার ফি এত বেশি নির্ধারণ করে আমরা আমাদের দেশের ন্যায়বিচার ব্যবস্থার ভিত্তিকেই দুর্বল করে ফেলছি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের পঞ্চম ও চতুর্দশ সংশোধনীর অধীনে সংরক্ষিত ‘ডিউ প্রসেস’ বলে সরকার কাউকে জীবনের, স্বাধীনতার বা সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করার আগে আদালতে প্রমাণসহ শুনানি দিতে বাধ্য। ডিউ প্রসেস শুধু অভিবাসীদের নয়, এমনকি অভিবাসী বলে ভুলভাবে শনাক্ত হওয়া নাগরিকদেরও রক্ষা করে। এটি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষার অধিকার, যেটি শিশুদের কাছ থেকে আলাদা করা, কারাগারে প্রেরণ, বা সম্পত্তি কেড়ে নেওয়ার আগেও আদালতের হস্তক্ষেপ নিশ্চিত করে। আদালতের কাজ হল সবাইকে আইনের চোখে সমানভাবে বিচার করা এবং সরকারকে ন্যায্য প্রক্রিয়া অনুসরণে বাধ্য করা। এটি নির্বাহী ও আইন পরিষদ শাখার ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যালান্স। যখন ডিউ প্রসেস ভেঙে পড়ে, এবং মানুষ আর আদালতে যাওয়ার সাহস বা সামর্থ্য পায় না তখন শুধু অভিবাসী সমাজই আতঙ্কে ভোগে না, পুরো বিচারব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়ে। আর এটি আমাদের সবার জন্যই গভীর উদ্বেগের বিষয়। ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক [বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!