১৩ অক্টোবর ২০২৫

ট্রাম্প ইরানে হামলা চালালে, সমুদ্রসম বিপদের মুখে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র

Logo
বাংলা প্রেস প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৪২ পিএম
ট্রাম্প ইরানে হামলা চালালে, সমুদ্রসম বিপদের মুখে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র
  ছাবেদ সাথী ইসরায়েলের ইরানবিরোধী হামলায় যুক্তরাষ্ট্র অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার সিদ্ধান্তের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিলেন। হোয়াইট হাউজে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তাঁর 'ধারণা আছে' কী করতে চান, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেননি। তিনি আরও বলেন, সাধারণভাবে তিনি 'সিদ্ধান্ত নেওয়ার শেষ মুহূর্তেই' তা ঘোষণা করতে পছন্দ করেন। বুধবার বিকেলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, আগের দিন ট্রাম্প তাঁর ঊর্ধ্বতন উপদেষ্টাদের জানিয়েছেন যে তিনি ইরানে হামলার পরিকল্পনায় সই করেছেন, তবে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেবেন কি না, তা নির্ভর করছে ইরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসে কি না, তার উপর। ইরান সরকার জোর দিয়ে বলেছে, তারা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত রাখবে। তাদের দাবি, এটি পুরোপুরি বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে। এই মুহূর্তে মার্কিন বাহিনী ইসরায়েল-নেতৃত্বাধীন হামলায় অংশ নেবে কি না, তা নিয়ে দলে ও দেশের ভেতরে উত্তপ্ত রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। এর প্রভাব শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির ভবিষ্যতের ওপরও পড়তে পারে। বাস্তবিকভাবেই, বিশেষজ্ঞদের মতে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে ইসরায়েলকে সরাসরি মার্কিন সহায়তা লাগবেই। বিশেষ করে ফোর্ডো পারমাণবিক স্থাপনাটি পাহাড়ের নিচে নির্মিত, যেটি ধ্বংস করতে ৩০,০০০ পাউন্ড ওজনের ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা দরকার — যা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আছে, এবং কেবল বি-২ বোমারু বিমানেই তা বহন সম্ভব। ট্রাম্পের রিপাবলিকান দলে লিন্ডসে গ্রাহাম ও টেড ক্রুজের মতো অনেক প্রভাবশালী কণ্ঠ ইসরায়েলের পাশে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পক্ষে। তবে ম্যাগা (MAGA) ঘরানার বহু নেতাই যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বিদেশি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করছেন। এই বিভক্তি তীব্রভাবে ফুটে ওঠে টেড ক্রুজ ও টাকার কার্লসনের একটি ভাইরাল বিতর্কে। কার্লসন দীর্ঘদিন ধরেই মার্কিন বাহিনীকে আফগানিস্তান ও ইরাকে ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ থেকে বের করে আনতে আহ্বান জানিয়ে আসছেন। যুদ্ধপন্থীরা যুক্তি দিচ্ছেন, ইরান এখন এমন এক সন্ধিক্ষণে আছে, যেখানে তারা খুব দ্রুত পারমাণবিক শক্তি অর্জনের সম্ভাবনায় বিপজ্জনক, আবার হিজবুল্লাহ, হামাস ও সিরিয়ার অ্যাসাদ শাসনের মতো মিত্রদের বিপর্যয়ের কারণে দুর্বলও বটে। কিন্তু অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে। একটি বড় প্রশ্ন হলো: মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ঘাঁটিতে অবস্থানরত ৩৫,০০০ মার্কিন সেনার নিরাপত্তা। নিউইয়র্ক টাইমস অনুসারে, কুয়েতে ১৩,৫০০, কাতারে ১০,০০০, বাহরাইনে ৯,০০০ এবং ইরাকে ২,৫০০ মার্কিন সেনা আছে — যাদের সবাই ইরানের রেঞ্জে পড়েন। ইতিহাস বলছে, এমন যেকোনো অভিযানে মার্কিন সেনা প্রাণহানি হলে, এর রাজনৈতিক মূল্য চরম হতে পারে। ১৯৮০ সালে প্রেসিডেন্ট কার্টারের সময় ইরানে জিম্মিদের উদ্ধার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং আটজন সেনা নিহত হন — সেটি তাঁর পুনর্নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলে। অর্থনৈতিক প্রভাবও গভীর। সম্প্রতি তেলের দাম ১০ শতাংশ বেড়েছে। যুদ্ধ দীর্ঘ হলে বিশ্ববাজারে মন্দা এবং মুদ্রাস্ফীতি বাড়তে পারে। কারণ, হরমুজ প্রণালী দিয়ে বিশ্ব তেলের এক-পঞ্চমাংশ পরিবাহিত হয়। একটি মৌলিক প্রশ্নও সামনে এসেছে: যুক্তরাষ্ট্রের হামলার লক্ষ্য কী হবে? শুধু ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ধ্বংস, নাকি ইরানের সরকারকে উৎখাত? যদি লক্ষ্য হয় শাসনব্যবস্থাকে উৎখাত, তাহলে জটিলতা বহুগুণ বেড়ে যাবে। অনেক ইরানি মোল্লাশাসনের প্রতি বিরূপ হলেও, তারা যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েলের হস্তক্ষেপে সরকার পতনকে স্বাগত জানাবে এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আর একটি নতুন সরকার কীভাবে গঠিত হবে, তার কোনো পরিষ্কার দিকনির্দেশনা নেই। সহিংসতা বাড়লে, ৯ কোটি জনসংখ্যার একটি রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কী হতে পারে? এই সব বিষয় ম্যাগা ঘরানার ভোটারদের মনে ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ নিয়ে নতুন আশঙ্কা তৈরি করছে। এমনকি যদি লক্ষ্য সীমিতও থাকে, যেমন পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস — ইরান তা আবার গড়ে তুলবে। বরং এটি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের প্রবণতা আরও ত্বরান্বিত করতে পারে। সবচেয়ে খারাপ আশঙ্কাগুলো হয়তো সত্যি নাও হতে পারে। কিন্তু বিপদের সম্ভাবনা এতটাই গভীর যে, ট্রাম্পের উচিত পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার আগে আমেরিকার জনগণের কথা ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া। ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সম্পাদক বাংলা প্রেস। [বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।] বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]

মন্তব্য (0)

আলোচনায় যোগ দিন

আপনার মতামত শেয়ার করতে এবং অন্যান্য পাঠকদের সাথে যুক্ত হতে দয়া করে লগইন করুন।

এখনো কোন মন্তব্য নেই

Be the first to share your thoughts on this article!