ছাবেদ সাথী
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের মধ্যকার বিরোধ বৃহস্পতিবার চূড়ান্ত তিক্ততায় পৌঁছায়। একে অপরকে কটাক্ষ করে চলা এই দুই ব্যক্তিত্বের লড়াই তুঙ্গে ওঠে, যখন মাস্ক অভিযোগ তোলেন যে দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থলাভী জেফ্রি এপস্টেইনের ফাইল গোপন রাখা হয়েছে শুধুমাত্র ট্রাম্পকে রক্ষা করার জন্য।
এই ভাঙন ঘটল মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে, মাস্ক যখন সদ্য ত্যাগ করলেন সরকারের অর্ধ-আধিকারভুক্ত ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি’র প্রধানের পদ।
এই কদিনে মাস্ক কংগ্রেসে চলমান বৃহৎ বাজেট ও কর হ্রাস বিল (যা ট্রাম্প "দারুণ সুন্দর বিল" নামে উল্লেখ করেন)-এর বিরুদ্ধে নিজের অবস্থান আরও জোরালোভাবে প্রকাশ করতে শুরু করেন।
তবে বৃহস্পতিবারের বাক্যবিনিময়ে ব্যক্তিগত আক্রমণের সুর ছিল অনেক বেশি তীব্র।
এখানে এই দ্বন্দ্ব থেকে পাওয়া পাঁচটি মূল বার্তা:
১. ট্রাম্প-এপস্টেইন সংযোগ নিয়ে ‘সরাসরি আঘাত’ করলেন মাস্ক
মাস্কের ট্রাম্প ও এপস্টেইনকে নিয়ে পোস্ট ছিল বিস্ময়কর। ট্রাম্প ও এপস্টেইনের পরিচয় আগে থেকেই পরিচিত। কিন্তু মাস্ক তা নিয়ে আবার আলোড়ন তোলেন, স্মরণ করিয়ে দেন নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনে ট্রাম্পের পুরনো মন্তব্য:
“ওর সঙ্গে সময় কাটাতে মজা লাগে। বলা হয় ও আমার মতোই সুন্দরী নারীদের পছন্দ করে, এবং তাদের অনেকেই বয়সে কম।”
মাস্ক এরপর অভিযোগ তোলেন: “ট্রাম্পের নাম এপস্টেইন ফাইলে আছে। এটাই আসল কারণ, ফাইলগুলো প্রকাশ করা হয়নি।” তিনি পরামর্শ দেন, “এই পোস্টটি ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিন। সত্য একদিন প্রকাশ পাবেই।”
এখানে উল্লেখযোগ্য যে, ট্রাম্পের কোনো অপরাধমূলক সম্পৃক্ততার প্রমাণ নেই। তবে মাস্কের মতো একজন ব্যক্তিত্বের এমনভাবে বিষয়টি জাতীয় আলোচনায় তুলে ধরায় ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হতে বাধ্য।
২. মাস্কের অবস্থান ট্রাম্পের জন্য শুধু রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক হুমকিও
এই দ্বন্দ্ব নিছক নাটকীয়তা নয়। মাস্কের প্রভাব এতটাই যে, বৃহস্পতিবার টেসলার শেয়ারের দাম ১৪ শতাংশেরও বেশি পড়ে যায়। অনেক লিবারেল ক্রেতা মাস্কের ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠতা দেখে এমনিতেই দূরে সরে যাচ্ছিলেন।
অন্যদিকে ট্রাম্পও মাস্ককে আক্রমণ করেন, অভিযোগ করে বলেন, ইলেকট্রিক গাড়ির ট্যাক্স ইনসেনটিভ কমিয়ে দেয়ার প্রস্তাবের কারণেই মাস্ক ক্ষুব্ধ। যদিও মাস্ক তা অস্বীকার করেছেন।
তবে ট্রাম্পের প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতা বিবেচনায় মাস্কের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর প্রতিক্রিয়া আসার আশঙ্কা থেকেই যায়।
৩. অনলাইন রক্ষণশীল মহলে রাজনৈতিক প্রভাব সবচেয়ে বেশি
জনমত জরিপে মাস্ক নিজেই জনসাধারণের মধ্যে অজনপ্রিয়, এমনকি ট্রাম্পের চেয়েও বেশি। তবে তরুণ, পুরুষপ্রধান, অনলাইন-অ্যাকটিভ ডানপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে মাস্কের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি।
এই মহলে মাস্কের বক্তব্য ট্রাম্পকে বড় ধাক্কা দিতে পারে। এর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, যখন ডানপন্থী ইনফ্লুয়েন্সার ইয়ান মাইলস চিয়ং লিখেন: “ট্রাম্পকে ইমপিচ করা উচিত, এবং জেডি ভ্যান্সকে তার স্থলাভিষিক্ত করা উচিত।”
মাত্র ৩০ মিনিট পর মাস্ক সেই পোস্টে সাড়া দেন: “ইয়েস।”
৪. মাস্কের আক্রমণ বিলের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় তৈরি করেছে
ট্রাম্প-মাস্ক নাটকে অনেকেই ভুলে যেতে পারেন, সবকিছুর শুরু কংগ্রেসে চলমান বিল ঘিরে। মাস্ক স্পিকার মাইক জনসন ও সিনেট মেজরিটি লিডার জন থুনকেও একহাত নেন।
কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস জানিয়েছে, এই বিল আগামী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি ২.৪ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়িয়ে দেবে।
মাস্ক বলেন, “কংগ্রেস আমেরিকাকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে!”
গণপ্রজাতন্ত্রী সদস্যদের মধ্যে মাস্কের সমর্থন থাকলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা ট্রাম্পপন্থী। তবে কিছু রিপাবলিকান সদস্যকে ভাঙিয়ে দিয়ে বিলটি আটকে দেওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়া যায় না।
৫. কেউই বিস্মিত নয়
দুই জন ‘ইগো-চালিত’ ব্যক্তিত্বের এমন ভাঙন পূর্বানুমানযোগ্য ছিল। বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরক ঘটনার পর সেটাই প্রমাণিত হলো।
এই সংঘর্ষ যতটা আকর্ষণীয়, ততটাই অনিবার্য ছিল।
ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক-সাংবাদিক। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সম্পাদক বাংলা প্রেস।
[বাংলা প্রেস বিশ্বব্যাপী মুক্তচিন্তার একটি সংবাদমাধ্যম। স্বাধীনচেতা ব্যক্তিদের জন্য নিরপেক্ষ খবর, বিশ্লেষণ এবং মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজ আগের চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]
বিপি।এসএম
[বাংলা প্রেস হলো মুক্ত চিন্তার একটি বৈশ্বিক প্রচার মাধ্যম। এটি স্বাধীনচেতা মানুষের জন্য নিরপেক্ষ সংবাদ, বিশ্লেষণ ও মন্তব্য সরবরাহ করে। আমাদের লক্ষ্য হলো ইতিবাচক পরিবর্তন আনা, যা আজকের দিনে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।]