
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনছে এইচ-১বি ভিসা



ছাবেদ সাথী
অভিবাসন নিয়ে কথা উঠলেই মাঝে মাঝে একটি কথা শোনা যায় নতুন অভিবাসীদের সম্পর্কে 'তারা আমাদের চেয়েও বেশি আমেরিকান' বা এর কাছাকাছি কিছু। আর যদি অভিবাসন যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকে থাকা আমেরিকানদের জন্য কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে-যেমন অর্থনীতি বা কর্মসংস্থানে বিপর্যয়-তখন তাদের মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যেন তারা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে এবং 'কোড শেখে'।
দুর্ভাগ্যবশত, এখন সেই পরামর্শও আর কার্যকর নাও হতে পারে। ২০২৫ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রযুক্তি খাতে ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৮০,০০০ ছাড়িয়েছে, এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। যদিও সাধারণ মানুষ জানেন যে প্রযুক্তি খাতের অবস্থা খারাপ, তারা আসল কারণ সম্পর্কে তেমন কিছু শুনছেন না।
বড় কর্পোরেট নির্বাহীরা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, এআই কর্মসংস্থানের পরিবেশ বদলে দিচ্ছে। ২০২৫ সালের জুনে অ্যামাজনের সিইও অ্যান্ডি জ্যাসি বলেন, 'যে কাজগুলো প্রযুক্তি স্বয়ংক্রিয় করতে শুরু করবে, সেগুলোতে কম সংখ্যক মানুষের প্রয়োজন হবে।'
তবে জ্যাসি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ উল্লেখ করেননি। কর্মসংস্থানের তথ্য বলছে, অ্যামাজন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিকদের বাদ দিয়ে বিদেশি জন্ম শ্রমিকদের পক্ষে এগিয়ে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অফিস অব ফরেন লেবার সার্টিফিকেশন কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অ্যামাজনের মূল কার্যক্রম বিভাগ এইচ-১বি, এইচ-১বি১ এবং ই-৩ ভিসার জন্য ৩১,৮১৭টি লেবার কন্ডিশন অ্যাপ্লিকেশন জমা দিয়েছে। যদি অ্যামাজনের ওয়েব সার্ভিসেস (এডব্লিউএস) বিভাগকেও ধরা হয়, তাহলে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০,৭৫৭-এ।
দ্বিতীয় অবস্থানে অনেক পিছিয়ে রয়েছে এনভিডিয়া, ২৭,২৪৪টি আবেদন নিয়ে। অন্যান্য বড় ভিসা আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছে গোল্ডম্যান স্যাকস (২৬,০০০-এর বেশি), মাইক্রোসফট (১৪,১৮১) এবং অ্যাপল (৮,৩৯৩)।
লেবার কন্ডিশন অ্যাপ্লিকেশন কোম্পানিগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশি কর্মী নিয়োগের সুযোগ দেয়। সম্প্রতি ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স এ বিষয়ে সমালোচনা করেন। মাইক্রোসফটের সাম্প্রতিক ছাঁটাইয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আপনি দেখবেন, কিছু বড় প্রযুক্তি কোম্পানি ৯,০০০ কর্মী ছাঁটাই করে, তারপর বিপুল সংখ্যক বিদেশি ভিসার জন্য আবেদন করে।”
মাইক্রোসফট অবশ্য দাবি করেছে, তাদের এইচ-১বি আবেদনগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক ছাঁটাইয়ের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তাদের ভিসার বেশিরভাগ আবেদন বিদ্যমান কর্মীদের জন্য।
তবে শ্রম দপ্তরের তথ্য বলছে, মাইক্রোসফটের ২০২৫ সালের ৮২% এইচ-১বি আবেদন লেভেল ১ বা ২পদের জন্য অর্থাৎ এন্ট্রি বা মিড-লেভেল পদ— যেগুলোতে বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক কম বেতন দেওয়া হয়।
আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মাইক্রোসফট বা অন্যান্য কোম্পানিকে কোনো আমেরিকান কর্মী না পাওয়ার প্রমাণ দেওয়ার প্রয়োজন নেই— যদিও অনেকেই ভুল করে মনে করেন যে এটি বাধ্যতামূলক।

এই কারণেই তরুণ আমেরিকানরা মনে করছেন যে, এই বিপুল শ্রম আমদানি তাদের সমস্যাগুলোর অন্যতম কারণ— শুধু কর্মসংস্থানে নয়, বরং আবাসন সংকট, গাড়ি বীমার খরচ বৃদ্ধি এবং যানজটের মতো ক্ষেত্রেও।
রাজনৈতিক মহলে এ বিষয়ে নীরবতা লক্ষণীয়— হয়তো কর্পোরেট স্বার্থ রক্ষার জন্য। গণমাধ্যমও প্রায় পুরোপুরি নীরব থেকেছে; বড় বড় সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল গত এক বছরে এ বিষয়ে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।
কিন্তু যখন স্টেট ডিপার্টমেন্টে ১,৩০০ জনেরও কিছু বেশি কর্মী ছাঁটাই হয়, তখন দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের মূল মূল্যবোধে আঘাত হিসেবে উপস্থাপন করে।
যদি সত্যিই সরকারি কর্মী ছাঁটাই “আমেরিকার মূল্যবোধে আঘাত” হয়, তবে হয়তো বিদেশি কর্মীদের জন্য ছাঁটাই হওয়া বেসরকারি খাতের কর্মীরাও সমান সহানুভূতি প্রাপ্য কিন্তু তারা তা পাচ্ছেন না।
ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও মার্কিন রাজনৈতিক বিশ্লেষক। সম্পাদক বাংলা প্রেসআপনি এগুলোও পছন্দ করতে পারেন





